রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নির্বাচনী টার্গেটে ব্যস্ততা

পাঁচ ইস্যুতে আওয়ামী লীগে তৎপরতা

রফিকুল ইসলাম রনি

নির্বাচনী টার্গেটে ব্যস্ততা

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রধান লক্ষ্য ধরে পাঁচটি ইস্যু সামনে রেখে সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদার করবে আওয়ামী লীগ। নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে জেলায় জেলায় জনসভা করবেন দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কাজ শুরু হচ্ছে ২৩ নভেম্বর সিলেটে জনসভার মধ্য দিয়ে। দলের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা ইতিমধ্যে দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফর শুরু করেছেন। দুই বছর ধারাবাহিক এ সফর অব্যাহত রাখা হতে পারে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, সফরে দলের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর মধ্যে রয়েছে— দলকে আরও শক্তিশালী ও গ্রুপিংয়ে বিভক্ত নেতা-কর্মীদের এক কাতারে ঐক্যবদ্ধ করা, তৃণমূলে জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচার, জঙ্গি-সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্য দৃঢ় করা এবং সর্বশেষ সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়া। এ ছাড়া ঘোষণা অনুযায়ী দরিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে গৃহহীনদের তালিকা প্রণয়নে কাজ করবে আওয়ামী লীগ। দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত সব দলের অংশগ্রহণ প্রত্যাশী আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড। এজন্য নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছে দলটি। নির্বাচনের দুই বছর বাকি থাকলেও এখন থেকেই মাঠ গুছিয়ে নিতে চান দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। অক্টোবরে অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় সম্মেলনেও দলকে শক্তিশালী ও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে নেতা-কর্মীদের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গত শনিবার রাজশাহী বিভাগের আট জেলার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বলেছেন, ‘আপনারা মানুষের কাছে যান, জনমত গড়ে তুলুন। আমি নিজেও জেলায় জেলায় আসব, জনসভায় অংশ নেব।’ ২৩ নভেম্বর সিলেট থেকেই দলীয় প্রধানের নির্বাচনী জনসভা শুরু হবে বলে ধারণা করছেন নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা ১২ নভেম্বর চট্টগ্রাম, ১৬ নভেম্বর কুষ্টিয়ায় জনসভা করেছেন। গতকাল নোয়াখালীতে বিশাল জনসভা হয়েছে। আগের দুই জনসভায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নেতা-কর্মীদের জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি আচরণ সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নেতাদের ফুল দিয়ে খুশি করার চেয়ে জনগণের কাছে গিয়ে তাদের খুশি করুন। তারা ভোট না দিলে ক্ষমতায় আসা যাবে না। এ ছাড়া দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক এবং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি ও আবদুর রহমানকে সংবর্ধনা দিতে টাঙ্গাইল, চাঁদপুর ও ফরিদপুরে পৃথক জনসভা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তাদের দল নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে। আর নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠন শক্তিশালী করে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য গৃহহীনদের তালিকা প্রণয়ন ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন হবে। ডিসেম্বরে বেশ কয়েকটি জনসভায় অংশগ্রহণের কথা শেখ হাসিনার। পর্যায়ক্রমে জেলা সফর করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে এখনই মাঠে নামতে চান তারা। আর মাঠের কাজ বাড়াতেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। দলের অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা দলীয় কাজে প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারেন।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা তৃণমূলে যাব। দলকে সুসংগঠিত করতে বিভিন্ন দিকনির্দেশনার পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনে দলকে জয়ী করতে সরকারের উন্নয়নগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরব।’

দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত কমিটির নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। তারা এখন মাঠ গোছানো শুরু করেছেন।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ‘নির্বাচনে জিততে হলে জনগণের কাছেই বেশি করে যেতে হবে। জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য যা করা প্রয়োজন আওয়ামী লীগ তাই করবে। সভানেত্রী যে নির্দেশনা দেবেন, আমরা তা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করব।’

আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে জনগণের ভালোবাসা অর্জন ও মন জয় করতে হবে। এজন্য কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা সফর অব্যাহত রাখবেন।

সর্বশেষ খবর