রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাংগঠনিক বিপর্যয় সামলাতে হিমশিম জাতীয় পার্টি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

সাংগঠনিক বিপর্যয় সামলাতে হিমশিম জাতীয় পার্টি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একক নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও দলের সাংগঠনিক বিপর্যয় ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীই দিতে পারছে না সংসদের প্রধান বিরোধী দলটি। নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, সাংগঠনিক কার্যক্রম না থাকা, সরকারি দলের সঙ্গে সুসম্পর্কসহ নানান কারণে সাংগঠনিক বিপর্যয়ে পড়েছে জাতীয় পার্টি। এসব কারণেই সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফল ঘরে তুলতে পারছে না দলটি। তবে পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভালো করার জন্য সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি সাংগঠনিকভাবে কোনো সময়ই দুর্বল ছিল না। আমাদের দুর্বলতা অন্য জায়গায়।’ তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভালো করার জন্য নেতা-কর্মীরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন। নেতা-কর্মীদের এখন একটাই টার্গেট— দলকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া।’

পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘জেলায় জেলায় দলের সম্মেলন হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা শুরু হয়েছে। ত্যাগী ও নতুন নেতৃত্ব সামনে তুলে আনছি। সাংগঠনিক বিপর্যয় কাটিয়ে আগামীতে ভালো করার জন্য সব চেষ্টাই চলছে।’

একসময় রংপুর মানেই ছিল জাতীয় পার্টি ও লাঙ্গল প্রতীক। কিন্তু সম্প্রতি শেষ হওয়া পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটে দলটির। জেলার ৭৬টি ইউপির মধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিতেছেন মাত্র ৭টিতে। ৩টি পৌরসভার মধ্যে হারাগাছ ও পীরগঞ্জে মেয়র পদে প্রার্থীই দিতে পারেনি দলটি। বদরগঞ্জে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মাত্র ১৭১ ভোট পেয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনে ৮ উপজেলার ১টিতেও দলটির প্রার্থীরা জয় পাননি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন মাত্র ১টিতে। এমনকি সদর উপজেলায় স্বয়ং এরশাদ প্রচারে নেমেও কোনো সুবিধা করতে পারেননি। এ ছাড়া ষষ্ঠ থেকে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ৬টি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা নির্বাচিত হলেও নবম সংসদ নির্বাচনে ৩টি আসন চলে যায় আওয়ামী লীগের ঘরে। সারা দেশে জাতীয় পার্টির একই চিত্র।

জানতে চাইলে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পার্টির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা নতুনভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। যেখানে যাচ্ছি মানুষ বলছে, তারা আবার এরশাদের জমানায় ফিরে যেতে চান।’ আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজ রহমান বলেন, পার্টির চেয়ারম্যানের নির্দেশ অনুযায়ী সব নেতা-কর্মী এক হয়ে কাজ করলে আগামী নির্বাচনে অবশ্যই ভালো করা যাবে।

জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের শক্তি বাড়াতে বেশ তোড়জোর শুরু করেছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন ১ জানুয়ারির মধ্যে তৃণমূল পর্যন্ত কমিটি গঠনের। একক নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন আসনে প্রার্থী তালিকা করার কাজ শুরু করেছে দলটি। এরশাদ বলছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবেন এককভাবে। তার হিসাব-নিকাশ এখনই কষতে শুরু করেছে জাতীয় পার্টি। দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটাতে ১ অক্টোবর হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন এরশাদ। ১ জানুয়ারি ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রাজধানীতে মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনা নিয়েছে জাতীয় পার্টি। এভাবেই জেলা ও উপজেলা কমিটিগুলোয় মহাসমাবেশ সফল করার বার্তাও দেওয়া হবে সাংগঠনিক সফরে। পর্যায়ক্রমে সব বিভাগীয় শহরে মহাসমাবেশ করবেন চেয়ারম্যান এরশাদ। মূলত দলের সাংগঠনিক দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে আগামী নির্বাচনকে কৌশল হিসেবে নিয়েছেন তিনি।

জানা যায়, যোগ্য প্রার্থী খোঁজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যন্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি ঠিক করেছে জাতীয় পার্টি। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে ৫২টি সাংগঠনিক টিম গঠিত হয়েছে। এগুলো জেলা কমিটির সঙ্গে সভা করে উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন করছে। উপজেলা কমিটিকে পরবর্তী এক মাসের মধ্যে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেবে। পরের এক মাসের মধ্যে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠাতে হবে। বর্তমানে যারা এমপি আছেন কিংবা যারা আগামীতে নির্বাচন করতে চান, এমন নেতাদের একটি খসড়া তালিকা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিজেদের অবস্থান সম্পর্কেও দলের চেয়ারম্যানকে অবহিত করেছেন তারা। চেয়ারম্যান এখন নিজে মাঠে থেকে নেতাদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করবেন। বিভাগীয় সম্মেলনগুলোয় এরশাদ নিজে উপস্থিত থাকবেন।

সর্বশেষ খবর