রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গি হওয়ার কাহিনী

সাখাওয়াত কাওসার

জঙ্গি হওয়ার কাহিনী

ক্যাডেট কলেজ থেকে গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি। সেখান থেকেই ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি। তবে ক্যাডেট কলেজেরই এক বন্ধুর পাল্লায় পড়ে ছিটকে পড়েন প্রকৌশলী গাজী কামরুস সালাম ওরফে সোহান। দায়িত্ব নেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির সামরিক শাখার। বেসরকারি কোম্পানি এনার্জিপ্যাকের পর ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানিতে (ডেসকো) প্রকৌশলী পদে কর্মরত থেকেও গোপনে সক্রিয় ছিলেন ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ডে। লোক চক্ষুর আড়ালেই তিনি চট্টগ্রামের অস্ত্র তৈরির কারখানায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরির কাজ জঙ্গিদের হাতেকলমে শেখাচ্ছিলেন। শুধু সামরিক শাখার দায়িত্বই নয়, সংগঠনের তহবিল সংগ্রহের জন্য দাতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রক্ষা করতেন সালাম। গ্রেফতারের পর এলিট ফোর্স র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে একথা তিনি স্বীকারও করেছেন।

জানা গেছে, জঙ্গি সালামের জন্ম যশোরে। তবে তাদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের আড়পাড়ায়। সালাম ১৯৯৫ সালে ঢাকার ইউনিভার্সিটি ল্যাব স্কুলে ১ম শ্রেণি হতে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ২০০১ সালে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন এবং ২০০৭ সালে পাস করেন এইচএসসি। ২০০৮-২০১১ সেশনে আইইইটিতে ট্রিপল ‘ই’ (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং) ভর্তি হন। আইইউটিতে পড়ার সময়ই তার ক্যাডেট কলেজ বন্ধু সিফাতের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের দিকে দুর্বল হন। এই ‘সিফাত’ হলো আৎ-তামকিন জঙ্গি সাইটের অ্যাডমিন ইঞ্জিনিয়ার মোস্তাফিজুর রহমান সিফাত। গত ৯ আগস্ট ঢাকায় সিফাতসহ আরও ৫জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪। সিফাতের পরামর্শেই সালাম রাজধানীর হাতেমবাগে কারাবন্দী জসীম উদ্দিন রাহমানির মসজিদে যাতায়াত করতেন। ওই মসজিদে জুনুন শিকদার, নাকিব, জাকি ও অন্যদের সঙ্গে তার পরিচয়। এদের কাছ থেকেই তিনি জিহাদে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা পান। জুনুন শিকদারের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন জিহাদি অডিও/ভিডিও লেকচার নিয়ে এবং ইন্টারনেটে জিহাদ বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেন তিনি। ২০১৩ সালে তার মা মারা গেলে জিহাদের দিকে ঝুঁকে পড়লেন পুরোপুরি। এ ছাড়া ফেসবুকে আমিন মোহাম্মদ বেগের সঙ্গে Ex Cadet Islamic Learning Forum-এর সদস্য হন। পরবর্তীতে আমিন বেগের মাধ্যমে সিলেট ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ছাত্র জাপানে বসবাসরত সাইফুল্লাহ ও জাকির সঙ্গে ফেসবুকে তার পরিচয় হয়। সালাম চাকরি করার সময় তার মায়ের অনুরোধে মায়ের বান্ধবীর ছেলে নিলয়কে পড়াতেন। এ সময় তাদের দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তারা একই সঙ্গে জুনুন শিকদারের বাসায় গিয়ে বিভিন্ন জিহাদি বই ও লেকচার সম্পর্কে আলোচনা করতেন। র‌্যাব সূত্র জানায়, সিফাতই তাকে নব্য জেএমবির ‘সারোয়ার-তামিম’ গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করে এবং তাকে সারোয়ার জাহান ওরফে শাইখ আবু ইব্রাহিম আল হানিফের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। তখন সালামকে চট্টগ্রামে ক্ষুদ্রাস্ত্র ও বোমা বানানোর প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়। তবে তার মূল কাজ ছিল বিভিন্ন হামলা/নাশকতার জন্য কারিগরি সহায়তা যেমন বিস্ফোরক তৈরি ও প্রশিক্ষণ দান।

ফেসবুকের মাধ্যমে তার সঙ্গে অনেকেরই পরিচিত হয়। তাদের অনেকেই পলাতক। ২০১৪ সালের শুরুর দিকে ভূতেরগলি এলাকার এক চিকিৎসকের সঙ্গে সালামের সখ্য গড়ে ওঠে। ওই চিকিৎসক সালামের সঙ্গে ফেসবুকে গালিব, জকি, কামার ও অন্যদের সঙ্গে জিহাদি আলোচনা করতেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সালাম জঙ্গিবাদের জন্য ২৮ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছেন বলে স্বীকার করেছেন। এদের মধ্যে আমিনুল ইসলাম বেগ, সাইফ উদ্দিন, ইয়াহিয়া মারুফ, রেজওয়ান, শেলী আন্টি, গালিব, জাকি, কামার, সুপ্ত প্রমুখ অন্যতম। তিনি নিজেও জঙ্গি তহবিলে টাকা দিতেন।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহ্মুদ খান বলেন, র‌্যাব-২ এর ওই অভিযানের মামলাটির তদন্তভার র‌্যাবকে দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। অনুমতি পাওয়ার পর আদালতের অনুমতিক্রমে জঙ্গি সালামসহ বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হবে। হয়ত তখন আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর