শিরোনাম
রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
সংবর্ধনায় ওবায়দুল কাদের

মানুষের মনের ভাষা না বুঝলে রাজনীতির দরকার নেই

রফিকুল ইসলাম রনি ও আকবর হোসেন সোহাগ নোয়াখালী থেকে

মানুষের মনের ভাষা না বুঝলে রাজনীতির দরকার নেই

আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে গতকাল নাগরিক সংবর্ধনা দেয় নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় মাতৃভূমি নোয়াখালীতে লাখ লাখ মানুষের ভালোবাসা আর ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

গতকাল মাইজদী জিলা স্কুল মাঠে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল গণসংবর্ধনায় আবেগতাড়িত ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনীতিতে কোনো ত্যাগ বৃথা যায় না। এটা লেগে থাকার বিষয়। হঠাৎ এসে হঠাৎ চলে যাওয়ার বিষয় নয়। এই জনস্রোত, এত হাততালি, এটা মনের ভাষা না—চোখের ভাষা। মানুষের চোখের আর মনের ভাষা যদি নেতা না বোঝেন, তাহলে তার রাজনীতি করার দরকার নেই।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রায় পুরো সময় প্রশংসাবাক্যে ভাসানো হয় ওবায়দুল কাদেরকে। প্রায় ১০ কিলোমিটার দূর থেকে অনুষ্ঠান ঘিরে আয়োজন করা হয় রংবেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ আর পোস্টার। এসব প্রচারণামূলক ব্যানারে ওবায়দুল কাদেরকে নোয়াখালীর সূর্যসন্তান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এশিয়ার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ধন্যবাদ জানানো হয়। দলের সাধারণ সম্পাদকের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

স্থানীয়রা জানান, সাবেক স্পিকার আবদুল মালেক উকিলের মৃত্যুর পর ওবায়দুল কাদের সফল মন্ত্রী ও নেতা। তার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে একই সঙ্গে সরকারের মন্ত্রী ও দলের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করা। তারা জানান, দলের নতুন পদবি নিয়ে ওবায়দুল কাদের নোয়াখালী আসায় তারা গর্বিত। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সফল করার জন্য নোয়াখালীর ৯টি উপজেলা, ৮টি পৌরসভা, ৯১টি ইউনিয়নসহ ওয়ার্ড শাখার নেতা-কর্মীরা দিনরাত পরিশ্রম করেছেন।

সংবর্ধনায় নোয়াখালীসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলা থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা যোগ দেন। মঞ্চে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়। বিকাল ৩টায় সংবর্ধনা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ১২টার মধ্যেই মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। এ ছাড়া সংবর্ধনাস্থলের আশপাশের রাস্তা ছিল জনস্রোতে পরিপূূর্ণ। ওবায়দুল কাদেরের সংবর্ধনা কেন্দ্র করে শহর আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এ সংবর্ধনাকে ঐতিহাসিক বলে মন্তব্য করেন। তারা বলেন, নিকট অতীতে নোয়াখালীতে এত মানুষের উপস্থিতিতে কোনো সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়নি।

সংবর্ধনায় নোয়াখালীর শিক্ষিত তরুণদের আওয়ামী লীগের পতাকাতলে আসার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দোরগোড়ায় নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘একজন রাজনীতিবিদের জীবনে মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় আর কিছু নেই। রাজনীতি করতে গিয়ে এটা আমি শিখেছি।’ তিনি বলেন, ‘এখানে আমি সংবর্ধনা নিতে আসিনি। অতীতে এমপি, মন্ত্রী হয়েছি। দলের একাধিক দায়িত্ব পালন করেছি। তার পরও সংবর্ধনা নিইনি। কারণ আমার সংবর্ধনার প্রয়োজন নেই। মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি এর থেকে বড় সংবর্ধনা আর কী আছে।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মানুষের যে প্রত্যাশা, তা পূরণ করতে না পারলে কাজে আসবে না। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি আমি ব্যর্থ হই তাহলে কাগজ, পোস্টারের ছবি ছিঁড়ে যাবে। পাথরে লেখা নাম ক্ষয়ে যাবে। যদি আপনারা আমার নাম হূদয়ে লেখেন তাহলে তা থেকে যাবে। বাগানের ফুল শুকিযে যাবে, কিন্তু মানুষের ভালোবাসার ফুল কখনো শুকাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি আমার জীবনের সর্বোচ্চ পাওয়া পেয়েছি। জাতির জনকের কন্যা, আমার অভিভাবক শেখ হাসিনা আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আমি আমার কাজ, ত্যাগ ও পরিশ্রমের স্বীকৃতি পেয়েছি। এর মাধ্যমে নেত্রী দেশের আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের এই বার্তা দিয়েছেন, লেগে থাকলে, পরিশ্রম করলে কাজের মূল্যায়ন হয়। রাজনীতিতে কোনো ত্যাগ বৃথা যায় না। রাজনীতি হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসার বিষয় নয়।’

ওবায়দুল কাদের নেতা-কর্মীদের আচরণ ভালো করার তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘আমাকে খুশি করার দরকার নেই। মানুষকে ভালোবাসুন, তাদের খুশি করুন।’ তিনি বলেন, ‘আমার কোনো গ্রুপ নেই। আমি নেত্রীর গ্রুপ করি। তিনি যা বলবেন, তাই করব। দুই বছর পর নির্বাচন। এ সময়ের মধ্যে ঘর গোছাতে হবে। কোন্দল মেটাতে হবে। দলে বসন্তের কোকিল কিছু থাকবে, তবে তাদের খবর আছে।’ তিনি বলেন, ‘নীতি আর আদর্শের প্রশ্নে কোনো আপস করব না। এখন শুরু হবে শেখ হাসিনার অ্যাকশন। তবে এ অ্যাকশন মারামারির নয়, এ অ্যাকশন পজিটিভ অ্যাকশন, উন্নয়নের অ্যাকশন।’

ওবায়দুল কাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে পাশে ডেকে নিয়ে বলেন, ‘আপনি নোয়াখালীর জন্য যেসব দাবি-দাওয়া তুলেছেন তা পূরণ করেছি কিনা সাক্ষ্য দেবেন।’ তিনি বর্ণনা দিয়ে বলেন, নোয়াখালীর জন্য একনেকে ৩২৪ কোটি টাকার প্রকল্প পাস করানো হয়েছে। এলজিইডির ৪০০ কোটি টাকার কাজ চলছে। ১৮৩ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আঞ্চলিক ভাষায় নোয়াখালীর বিভিন্ন সেতু ও সড়কের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, এসব কাজ দ্রুত শুরু ও শেষ হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমার আর দেওয়ার কিছুই নেই। আছে শুধু ভালোবাসা।’ এ সময় নেতা-কর্মীরা ওবায়দুল কাদেরের নাম ধরে স্লোগান দিলে তিনি মাউথ স্পিকার হাতে নিয়ে তাদের থামার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘দল করলে নিয়ম-কানুন মানতে হবে। তা না হলে খবর আছে।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘একসময় লজ্জা লাগত, এই নোয়াখালী বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। আজ এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে নোয়াখালীর মাটি এখন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি, নোয়াখালীর মাটি শেখ হাসিনার ঘাঁটি, ওবায়দুল কাদেরের ঘাঁটি। এই জনস্রোত নোয়াখালীর ইতিহাসে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে থাকবে। আমি জাতীয় ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমার ডাকে সাড়া দিয়ে আপনারা এই স্রোতে মিশেছেন। নোয়াখালীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের মানুষের উপস্থিতির জন্য আমার স্যালুট রইল।’ তিনি বলেন, ‘আজ নোয়াখালীতে শোনা যাচ্ছে সমুদ্রের গর্জন। এ গর্জন ভালোবাসার। এ গর্জন ওবায়দুল কাদেরের।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনাম সেলিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান; কেন্দ্রীয় নেতা ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম; সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এ কে এম এনামুল হক শামীম, হাবিবুর রহমান সিরাজ; ফরিদুন্নাহার লাইলী, হারুনুর রশিদ, অসীম কুমার উকিল, এস এম কামাল হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, বিপ্লব বড়ুয়া, আনোয়ার হোসেন, ইকবাল হোসেন অপু; ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন; স্থানীয় নেতাদের মধ্যে আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু, আবদুল মমিন বিএসসি, শিহাব উদ্দিন শাহীন, মিনহাজ আহমেদ জাবেদ প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর