মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ইসি নিয়ে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব

আমলেই নেবে না আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

আমলেই নেবে না আওয়ামী লীগ

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেওয়া প্রস্তাব আমলে নেবে না আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল ও সরকার পতনের আন্দোলন থেকে খালি হাতে ফেরা বিএনপি রাজনীতির ময়দানে সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। এ অবস্থায় বিএনপির কোনো দাবিকে পাত্তা দেওয়া মানে  তাদের রাজনীতিতে ফ্লোর দেওয়া। বিএনপি দেশের মানুষের মন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, রাজনীতিতে নতুন করে জায়গা করে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। এজন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিকে কোণঠাসা রাখতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। এর আগেই নিয়োগ দিতে হবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটিতে। সংবিধানে সার্চ কমিটি গঠন করে নাম প্রস্তাবের কথা বলা আছে। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত শুক্রবার তার প্রস্তাবে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, যত দিন ঐকমত্য না হবে, তত দিন আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। এ ছাড়া বিএনপি নেত্রীর প্রস্তাবে নির্বাচনী আইন সংশোধন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় গঠন, তাদের আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়া, নির্বাচনকালীন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ওপর কমিশনের কর্তৃত্ব নিশ্চিত করা, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন, সেনাবাহিনী ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া, তফসিল ঘোষণার পর থেকে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার ও থানার নির্বাহী কর্মকর্তাদের বদলি করে নতুনদের পদায়নের সুপারিশও ছিল। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জানান, আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসি পুনর্গঠনে বিএনপি যে প্রস্তাব দিয়েছে তাতে সাড়া দেওয়া হবে না। তবে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কৌশলী ভূমিকা নেওয়া হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে; যাতে রাজনৈতিক মাঠে সুবিধাজনক অবস্থান নিশ্চিত করা যায়। আর এ ক্ষেত্রে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হবে সংশোধিত বর্তমান ‘সংবিধানের আলোকে’ এবং ‘রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার’ বলে তুলে ধরা হবে। ফলে বিএনপির প্রস্তাব নিয়ে এখনই সংলাপ বা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। এতে বিএনপিও রাজনৈতিকভাবে চাপে থাকবে। সূত্রমতে, দলীয় নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণেই শুক্রবার বিএনপির দেওয়া প্রস্তাবের পর তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তা একেবারে নাকচ করেননি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছিলেন, ‘ইসি গঠনে আমরা সংবিধান মোতাবেক চলতে চাই। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করে যেভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন, সে প্রক্রিয়া থেকে আমাদের সরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’ একই সঙ্গে বিএনপির প্রস্তাবে ভালো কিছু থাকলে তা বিবেচনা করা হবে বলেও জানিয়েছেলিনে তিনি। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার অনেক কিছুই সরকার আগে করেছে। আর এ বিষয় নিয়ে কোনো দলের সঙ্গে আলোচনার দরকার নেই। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশ একটি সংবিধানের আলোকে চলে। কোনো রাজনৈতিক দলের বিধানে চলে না। সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে। তিনিই ঠিক করবেন কীভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আজ আমরা ক্ষমতায় আছি বলে বিএনপি ফর্মুলা দিয়ে বলবে, তাদের পছন্দমতো কমিশন গঠন করতে হবে, অন্য কেউ ক্ষমতায় এলে তখনকার বিরোধী দল বলবে তাদের পছন্দমতো কমিশন গঠন করতে হবে; এটা চলবে না। সংবিধানে যা আছে সে আলোকেই কমিশন গঠন হবে।’ সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী স্বাধীনতার পরে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের সঙ্গে আলোচনা করতে বলেছেন। এই দাবির মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াত এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দল ফ্রিডম পার্টিকে আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছেন। আমরা কি এই দাবি মানতে পারি? আওয়ামী লীগের একটি নীতি ও আদর্শ আছে কারও কথায় সেগুলো বিসর্জন দিতে পারি না।’ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন প্রস্তুাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যতক্ষণ ঐকমত্য না হয় ততক্ষণ আলোচনা করতে হবে। তাহলে তো অনন্তকাল চলবে আলোচনা। এটা কি সম্ভব? নির্বাচন কমিশন তো আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির আগেই গঠন করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের যে প্রক্রিয়া আমাদের গঠনতন্ত্রে আছে সেই বিষয়টি গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের অধীনে হয়েছে। কিন্তু বিএনপি সেই অগ্রগতি মেনে নিতে পারছে না। যারা দেশের অগ্রগতি মানতে পারে না তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো আলোচনা হবে না।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর