মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

তাৎক্ষণিক তালাক ইসলামী চেতনার পরিপন্থী

এম জে আকবর

প্রতিদিন ডেস্ক

তাৎক্ষণিক তালাক ইসলামী চেতনার পরিপন্থী

ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর বলেছেন, তাত্ক্ষণিক তালাক ইসলামী চেতনার পরিপন্থী কাজ। তিনি ভারতের ‘ইকোনমিক টাইমস’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় আদালতে তালাকসংক্রান্ত একটি বহুল আলোচিত চলমান মামলার বিষয়ে মন্তব্য করছিলেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়, কোরআন কি তিন তালাক অনুমোদন করে? উত্তরে এম জে আকবর বলেন, নারীর মুক্তির পক্ষেই  পবিত্র কোরআনের অবস্থান। ৬৫তম সূরায় এর নিদর্শন আছে। এই সূরায় বিয়ে ও তালাক প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। মহানবী (সা.) তালাক সম্পর্কে বলেছেন, এটা জায়েজ তবে আল্লাহ অপছন্দ করেন। কোরআনের চেতনা অনুসারে যা করতে হয় তা হলো, দম্পতি যদি আশঙ্কা করে যে, তাদের আলাদা হয়ে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে তাহলে স্বামীর পরিবার ও স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন করে মধ্যস্থতাকারী ঠিক করতে হবে যারা দাম্পত্য জীবনটি রক্ষার জন্য আপসের পদক্ষেপ নির্দেশ করবেন। স্বামী-স্ত্রী আপসরফা করলে তাদের বন্ধন টিকিয়ে রাখতে আল্লাহই সহায়তা করবেন। তালাকপ্রাপ্ত নারীর ভরণ-পোষণের রীতি আছে। তালাকের পরও তিনি যদি একই ঘরে থাকতে চান সেই অধিকার তার আছে। কিন্তু তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে রাখা যাবে না। দুনিয়ায় যখন নারীর কোনো অধিকার ছিল না, পবিত্র কোরআন তখন তাকে সেই মুক্তির অধিকার দিয়েছে। ইসলামের সূচনাকাল থেকেই নারীর অধিকার রক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

 

প্রশ্ন : তিন তালাক বিষয়ে বিজেপি যেসব কথাবার্তা বলছে মুসলমানদের অনেকেই তাতে আপত্তি জানিয়ে বলছেন, এটা অযাচিত হস্তক্ষেপ...

এম জে আকবর : যারা এমন বলছেন তাদের বলব, কেন আপনারা ব্যাপারটি রাজনীতির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন। আদালতে তো ওই মামলাটি প্রধানমন্ত্রী মোদি রুজু করেননি। তিনি প্রধানমন্ত্রী, এদিকে মামলার প্রক্রিয়াটিও একটা বিশেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এটা কাকতাল মাত্র। তিনি নীতিগত একটা অবস্থান নিয়ে বলছেন, অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে নারী যে অধিকার ভোগ করছে সেসব অধিকার আমার বোনদের কেন দেওয়া হবে না?

 

প্রশ্ন : তিন দশকেরও বেশি আগে ১৯৮৫ সালে শাহ বানু মামলার রায় সম্পর্কে আপনার কী মত?

এম জে আকবর : শাহ বানু মামলায় ইসলামী নীতিমালার বিকৃত প্রয়োগ ঘটানো হয়েছে। স্ত্রীর সঙ্গে স্বামী সর্বদা সদয় আচরণ করবেন এটাই বিধান। এমনকি যখন স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হবে তখনো সদাচরণ করা চাই; দেওয়া চাই ভরণ-পোষণের খরচ। শাহ বানুকে মাসে মাসে ২০০ রুপিরও কম দেওয়া হচ্ছে। ইসলামী বিধিবিধানের শক্তি নিহিত রয়েছে সুদৃঢ় ধ্যানধারণার মধ্যে। এসব শক্তির অন্যতম হলো ‘ইজতিহাদ’ মানে বিবর্তন; যুক্তি ও নীতি-আদর্শের ভিত্তিতে বিধিবিধান প্রয়োগ। একটা দৃষ্টান্ত দিচ্ছি। বেশ কয়েক ধরনের চুরির জন্য কোরআনভিত্তিক শাস্তি হাত কেটে ফেলা। কোনো মুসলিম দেশেই এখন চুরির অপরাধে অমন সাজা হয় না। এর মানে কি এসব দেশ কোরআন পরিত্যাগ করেছে? না। করেনি। তারা ‘ইজতিহাদ’ প্রয়োগ করেছে : অন্য শাস্তি দিয়ে চুরি যদি বন্ধ করা যায় তবে সেই শাস্তিই দাও।

 

প্রশ্ন : শাহ বানু মামলার রায় অকেজো করে দেওয়ার জন্য রাজীব গান্ধীর কংগ্রেস সরকার সংসদে আইন করতে চেয়েছে। এটা কি ঠিক কাজ ছিল?

এম জে আকবর : ওই সময় কংগ্রেস যা করেছে তার পেছনে তদের নিজস্ব যুক্তি থেকেও থাকতে পারে। জনমতের চাপ থাকতে পারে তাদের ওপর। তার পরও পানি অনেক দূর গড়িয়েছে।

 

প্রশ্ন : সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ওয়াজাহাত হাবিবুল্লাহ বলেছেন, শাহ বানুসংক্রান্ত আদালতের রুলিং উল্টে দেওয়ার জন্য আপনিই রাজীব গান্ধীকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।

এম জে আকবর : তখন আমি যে ভূমিকা নিয়েছিলাম তা তো গোপনীয় কিছু ছিল না। ব্যক্তিগত পরামর্শ দেওয়ার নামে অনেকেই এখানে-ওখানে গুজুর-গুজুর ফুসুর-ফাঁসুর করেন। আমার স্বভাব তেমন নয়। ওই সময়টায় আমি রাজনীতিতে ছিলাম না। আমি ছিলাম সম্পাদক। সেজন্য আমার নীতিগত অবস্থান পুরোপুরি এবং ক্রমাগত ‘টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় তুলে ধরেছি। টেলিগ্রাফের আগে তুলে ধরেছিলাম ‘সানডে’ ও অন্যান্য পত্রিকায়। পরবর্তীকালে যখন নির্বাচনে প্রার্থী হলাম, কিষনগঞ্জ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলাম শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে। সেই শাহাবুদ্দিন যিনি শাহ বানু মামলা-উত্তর সংস্কার সাধনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

 

প্রশ্ন : তাৎক্ষণিক তিন তালাকের প্রথা বিলোপের বিরুদ্ধবাদী মুসলিম সংগঠনগুলো বলছে, বিলোপের আগে আরও বেশি বেশি গবেষণা ও আলাপ-আলোচনা দরকার। তাদের যুক্তি কি ঠিক?

এম জে আকবর : তিন তালাকবিরোধী কাজীদের আমি পবিত্র কোরআন নিয়ে গবেষণা করার আহ্বান জানাই। যেসব মুসলিম আলেম নারীমুক্তির পথে বাধা হয়ে রয়েছেন তারা কোরআনের চেতনার বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়ে আছেন। যেখানে কোরআন শরিফে বলা আছে, সিদ্ধান্তের আগে বিবেচনা কর, উপদেশ নাও, সময় নাও— সেখানে তাৎক্ষণিক তিন তিনটি তালাক দেওয়া কীভাবে সম্ভব?

সর্বশেষ খবর