বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিএনপির গাড়ি পোড়ানো মামলায় যুবলীগ নেতা

মাহবুব মমতাজী

বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দেওয়া গাড়ি পোড়ানো মামলায় যুবলীগের এক নিরপরাধ নেতাকে জড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। রাজধানীর ডেমরার সারুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি আবদুল মালেক মালুর নামে চারটি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতার হয়ে মালু ১৮ দিন জেল খেটেছেন। পরে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের তদন্তে তিনি নিরপরাধ বলে প্রমাণিত হলেও মামলাগুলো এখনো চলমান আছে। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত রয়েছেন। আবদুল মালেক মালুর যুবলীগের পদে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা ও সারুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. দুলাল খান। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রত্যয়নপত্র এই প্রতিবেদকের কাছে আছে। আবদুল মালেক মালুর নাম গাড়ি পোড়ানো মামলায় জড়ানোর কাজটি করেন পল্টন থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) শওকত আলী ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম। ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর বিএনপির ডাকা হরতাল কর্মসূচিতে গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় পল্টন থানায় করা চারটি মামলার চার্জশিটে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মালুকে আসামি করা হয়। মামলাগুলোর মধ্যে তিনটি মুখ্য মহানগর হাকিম ও একটি ষষ্ঠ সহকারী মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর মালু ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর পুলিশের আইজির (মহাপরিদর্শক) কাছে দেওয়া দরখাস্তে তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছেও দরখাস্তের অনুলিপি দেওয়া হয়। আবদুল মালেক মালুর অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনারের (ডিসি) ওপর। তিনি তা অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেন একই বিভাগের তৎকালীন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিনকে (বর্তমানে তিনি ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার)। তিনি গত বছরের ২৫ মে তদন্ত প্রতিবেদন মতিঝিল বিভাগের ডিসির কাছে জমা দেন (স্মারক-১৫১৩/আর ও মতিঝিল)। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত লোকজনের সহিংসতার কারণে পল্টন থানার চারটি মামলা পর্যালোচনা করা হয়। মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন এসআই শওকত আলী। তিনি তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মোট চারটি চার্জশিট দাখিল করেন। কিন্তু চার্জশিটভুক্ত আসামি আবদুল মালেক মালু একজন সহজ-সরল ও নিরীহ মানুষ। তার বিষয়ে কোনোরকম তদন্ত ও রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই না করে অসদুদ্দেশ্যে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে আসামি করা হয়। সম্পূর্ণ বিচার-বিবেচনাহীনভাবে মালুর বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এতে তিনি শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তদন্তে পুলিশ কর্মকর্তাদের দোষ বেরিয়ে এলে শওকত আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করে খাগড়াছড়ির এপিবিএনে বদলি করা হয়। চলতি বছরের জুলাইয়ে ওসি মোরশেদ আলমকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও সেপ্টেম্বরে তোফায়েল আহমেদকে যাত্রাবাড়ী থানায় বদলি করা হয়। তবে মালুর নাম এখনো ওইসব মামলার চার্জশিটে রয়ে গেছে। জানতে চাইলে আবদুল মালেক মালু বলেন, ‘আমি নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও মামলাগুলোয় আমাকে জড়ানো হয়েছে। তদন্তে তা প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু চার্জশিট থেকে এখনোও আমার নাম বাদ দেওয়া হয়নি।’

সর্বশেষ খবর