বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সেনা চায় বিএনপি আওয়ামী লীগের না

নিজস্ব প্রতিবেদক ও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (এনসিসি) নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া এ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও তুলেছে দলটি। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অতীতেও সেনা ছাড়াও স্থানীয় সরকারের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। এবারও হবে। সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই সেখানে যথেষ্ট বলে দাবি করছে ক্ষমতাসীনরা। এদিকে তফসিল ঘোষণার পর থেকে গত কয়েক দিনে মেয়র পদে ৮, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪০ ও কাউন্সিলর পদে ১৯২ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে দুজন কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তফসিল অনুযায়ী আগামীকাল ২৪ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। আজ বিএনপির প্রার্থীর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর আজ মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করার কথা রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. তারিফুজ্জামান জানান, মনোনয়নপত্র বিতরণের ষষ্ঠ দিনে গতকাল মেয়র পদে মহানগর জাসসের (ইনু) সভাপতি মোসলেম উদ্দিনসহ আরও একজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এনসিসি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ দাবি জানান। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অবশ্যই সেনা মোতায়েন চাই। কারণ নারায়ণগঞ্জ এমনিতেই গডফাদারদের শহর হিসেবে পরিচিত, তাছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্যও সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং তাদের স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করা প্রয়োজন। বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫২তম জন্মদিন উপলক্ষে স্বাধীনতা ফোরাম এ সভার আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, খালেদা ইয়াসমীন প্রমুখ।

এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের মুখপাত্র এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সেনা মোতায়েনের এখতিয়ার সম্পূর্ণভাবে ন্যস্ত নির্বাচন কমিশনের ওপর। তবে সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ, বিগত বেশকিছু সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে বিএনপি সেনা মোতায়েনের দাবি তুলেছিল। কিন্তু সেনা মোতায়েন ছাড়াই ওইসব নির্বাচনে বিএনপির অনেক প্রার্থী জয়লাভ করেছে। কাজেই এ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কোনো প্রয়োজন নেই। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার দিনই সেনা মোতায়েনের বিষয়ে জানিয়ে দিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকের পরই বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট পর্যালোচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার চায় না নারায়ণগঞ্জে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। তার ওপর সেটা হলো গডফাদারদের এলাকা। সেখানে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার জন্য সেনা  মোতায়েন করা প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে প্রস্তাবনা দিয়েছেন তাতে সরকার ভয় পেয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা জানে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতা হারাবে। অন্যদিকে বর্তমান ইসি ও প্রশাসনের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব কিনা— সেই প্রশ্ন তুললেও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ‘চ্যালেঞ্জ হিসেবে’ নেওয়ার কথা বলেছেন মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান। মনোনয়নপত্র জমার আনুষ্ঠানিকতা এখনও শেষ না হলেও আইভীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে সাখাওয়াত বলেন, নারায়ণগঞ্জে সরকারের যতগুলো অর্গান রয়েছে সেগুলো তারা ব্যবহার করছেন— এটা নির্বাচনী আচরণবিধির চরম লঙ্ঘন। এই বিষয়গুলোর প্রতি নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি দেওয়া উচিত ছিল। নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আসলে যে চশমা পরেছে, তারা শুধু অন্য গণতান্ত্রিক শক্তি যে রয়েছে তাদেরকে দেখে, সরকারি দলকে দেখতে পায় না। ক্ষমতাসীন দলের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার মো. নুরুজ্জামান তালুকদার। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আচরণবিধি যেই লঙ্ঘন করুক তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মূলত প্রতীক বরাদ্দের পরই আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি কঠোরভাবে দেখা হবে। নির্বাচন সুষুম ও নিরপেক্ষ করতে এবং সব প্রার্থীকে সমান সুযোগ দেওয়ার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা হবে।’

সর্বশেষ খবর