বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নীরবে সময় কাটছে বাবুলের

মিতু হত্যায় অস্ত্র মামলার বিচার শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

নীরবে সময় কাটছে বাবুলের

বাবুল আক্তার - মাহমুদা মিতু

অনেকটা নীরবেই সময় পার করছেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার। স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার পর থেকে তিনি রাজধানীর খিলগাঁওয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকছেন। কাউকে কিছু বলছেন না। প্রয়োজন ছাড়া কারও সঙ্গে দেখাও করছেন না। তবে প্রতিদিন সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে বিকালে ফিরছেন। অনেক  সময় দুপুরে খাওয়ার জন্য বাসায়ও আসছেন। নিয়মিত নামাজ আদায় করছেন, সন্তানদের সময় দিচ্ছেন এবং সময় পেলেই বই পড়ছেন। গতকাল নিহত মিতুর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। মিতুর পরিবার বলছে, বাবুল আগে থেকেই কম কথা বলতেন। এখনো কম কথা বলেন। প্রয়োজন ছাড়া কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। তার দুই সন্তান আক্তার মাহমুদা মাহির (৮) ও তাবাসসুম তাজমিন টাপুরকে (৫) স্থানীয় একটি স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে মাহিরকে প্রথম ও টাপুরকে প্লে শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া-আসার কাজটি করছেন বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে বাবুল তার দুই সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি মাগুরায় গিয়েছিলেন। সেখানে বেশ কিছুদিন ছিলেন। ঢাকায় ফিরেই দুই সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করে দেন বাবুল। বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মাহির ও টাপুর প্রায় সময়ই মাকে খুঁজে ফেরে। ঘরের এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত কোথাও খুঁজতে বাদ রাখে না। না পেয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে। মা ছাড়া কি সন্তানরা ভালো থাকতে পারে! মাহির ও টাপুর ঠিকমতো খাবার খাচ্ছে না। জোরও করি না। বাবুল বাসা থেকে বের হলেই টাপুর দুই পা জড়িয়ে ধরছে। বাবুল তার দুই সন্তানকে বুঝতেই দিচ্ছে না তাদের মা নেই।’ তবে বাবুল বর্তমানে একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করছেন বলে জানা গেছে। মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বাবুল নিয়মিত সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। ফিরছেন বিকালে। মাঝে মাঝে দুপুরেও বাসায় আসছেন। তবে চাকরি করেন কি না সে বিষয়ে আমাদের কিছু বলেননি। আমরা জানতে চাইনি।’ তিনি বলেন, ‘১৮ নভেম্বর মিতুর ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়েছিলাম। রিং হলেও কেউ রিসিভ করেনি। পরে ওই নম্বর থেকে কল ব্যাক করা হয়। বলে, আপনারা ফোন দিয়েছিলেন? এরপর ওই ব্যক্তি মোবাইলের সিম সম্পর্কে বলে, আমি হাতির ঝিলে তিনটি সিম পেয়েছি। তিনি কী করেন জানতে চাইলে বলা হয়, আমি একজন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক। মিতু মারা গেল চট্টগ্রামে, সিম মিলল ঢাকার হাতির ঝিলে। হিসাব মেলাতে পারছি না।’ বাবুলের শাশুড়ি সাহিদা মোশাররফ বলেন, ‘মাহির ও টাপুরকে পড়ায় মনোযোগী করতে সবাই চেষ্টা করছি। সোমবার রাতে মিতুর কথা আলোচনা করতেই মাহির বলে, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। ভালো লাগছে না বলে কান্না করতে থাকে। ওই রাতে সে আর বই ধরেনি। গতকাল টাপুরের স্কুলে একটি অনুষ্ঠান ছিল। সবার অভিভাবককে দেখে টাপুর বলে, আম্মু কই। আম্মুকে ফোন কর। না পেতেই মুখ গম্ভীর করে বাবার কোলে চড়ে আর নামেনি।’ ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। পরদিন পাঁচলাইশ থানায় বাবুল নিজেই বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেন। ঘটনার পর থেকেই এসপি বাবুল রাজধানীর খিলগাঁওয়ে মেরাদিয়ার ভূঁইয়াপাড়ায় শ্বশুরের ২২০/এ নম্বর বাড়িতে থাকছেন।

মিতু নিহতের ঘটনায় এ পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৫ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন রাশেদ ও নবী। কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া মুছা ও কালু এখনো পুলিশের খাতায় পলাতক রয়েছেন। তবে মুছার পরিবার বলছে, পুলিশই মুছাকে তুলে নিয়ে গেছে। পুলিশের চাকরি থেকে ৬ সেপ্টেম্বর বাবুলকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

অস্ত্র মামলার বিচার শুরু : চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় ব্যবহূত অস্ত্র উদ্ধারের মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে আদালত আগামী ১৮ জানুয়ারি থেকে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছে। এ মামলার দুই আসামি হলেন এহতেশামুল হক ভোলা ও রিকশাচালক মনির হোসেন। গতকাল চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. শাহ নূর দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বলে জানান চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারের পর ভোলা ও মনির এখন কারাগারে আছেন। তাদের বিরুদ্ধে নগরীর বাকলিয়া থানায় হওয়া অস্ত্র আইনের এই মামলাটির অভিযোগপত্র ২৮ জুলাই আদালতে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মহিম উদ্দিন। অভিযোগপত্রে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত অস্ত্র সরবরাহকারী ভোলা ও মনিরকে আসামি করা হয়। এর আগে ২৭ জুন ভোলা এবং পরদিন মনির গ্রেফতার হন। মনিরের কাছ থেকে অস্ত্র দুটি উদ্ধার করা হয়েছিল। ১৪ জুলাই মনির আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর