শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

হবে ব্যাপক ভোট কেনাবেচা

মাহমুদ আজহার

হবে ব্যাপক ভোট কেনাবেচা

আওয়ামী লীগের জন্য মুজিব কোট, বিএনপির জন্য সাফারি, জামায়াতের জন্য পাঞ্জাবি-পাজামা আর মহিলাদের জন্য শাড়ি। জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রশাসক পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য সম্প্রতি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন প্রকাশ্যেই এসব উপঢৌকন বিতরণ করেছেন। শুধু মমতাজ উদ্দিনই নন, সারা দেশের চিত্র প্রায় একই। কেউ প্রকাশ্যে, কেউ অপ্রকাশ্যে ভোটারদের কাছে টানতে নানা প্রলোভনের অফার দিচ্ছেন। এরই মধ্যে ৬১ জেলায় জেলা পরিষদ প্রশাসক পদে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশার আবেদন করেছেন সাত শতাধিক। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, সারা দেশে তাদেরই প্রায় তিন হাজার মনোনয়নপ্রত্যাশী হতে পারে। দেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ৬১ জেলায় চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন ১ ডিসেম্বর। নির্বাচন ২৮ ডিসেম্বর। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রশাসক পদে প্রতি জেলায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন আওয়ামী লীগেরই অন্তত চার থেকে পাঁচজন করে প্রার্থী। এর মধ্যে অনেকেই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ পদের জন্য আবেদন করেছেন। অনেকে একক সিদ্ধান্তেই স্থানীয় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

এদিকে তফসিল ঘোষণার দিন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ঘোষণা করা হলেও পরে হঠাৎ জেলা প্রশাসকদেরই এ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও সরকারি দলের প্রার্থীরা বেশি সুবিধা ভোগ করবেন বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন। নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা বলছেন, স্থানীয় সরকারের অন্য নির্বাচনগুলোর মতো এটিও দলীয় ভিত্তিতে হলে টাকার ছড়াছড়ি কম হতো। এতে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার প্রবণতাও কমত। তা না হওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়বে। নির্দলীয় কাঠামোতে নির্বাচন হওয়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ থাকছে না। এ পরিস্থিতিতে কেউ কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাই নির্বাচনে টাকার খেলা হতে পারে বলে শঙ্কা তাদের। জানা যায়, নির্বাচন ঘিরে নানা প্রলোভন দেখাচ্ছেন প্রার্থীরা। প্রার্থীর প্রস্তাবক ও সমর্থকদের অফার দেওয়া হচ্ছে টিভি-ফ্রিজ, মোটরসাইকেলসহ নানা সামগ্রীর। নারী ভোটারদের ক্ষেত্রে শাড়ি, দেশি-বিদেশি শাল, গয়নাসহ নানা আকর্ষণীয় উপহার। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রশাসক পদে প্রার্থী হতে প্রয়োজন শুধু দুজন স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির। এ ক্ষেত্রে ২৫ বছরের যে কোনো নাগরিকই প্রার্থী হতে পারেন। তবে প্রার্থীর জন্য একজন প্রস্তাবক আর একজন সমর্থকই যথেষ্ট। মনোনয়ন সংগ্রহে টাকার প্রয়োজন নেই। তবে প্রশাসক পদে জামানত ২০ হাজার টাকা, সংরক্ষিত ও সাধারণ সদস্য পদে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, প্রার্থীরা শুরুতেই একজন সমর্থক ও একজন প্রস্তাবককে টাকার বিনিময়ে ‘ম্যানেজ’ করছেন। এরপর চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলেই বাকি ভোটারদের বাগে আনতে নানা প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। একজন স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিকে প্রস্তাবক ও একজনকে সমর্থক হতে হয়। এ ক্ষেত্রে দুজন ভোটারকে পক্ষে রাখতে পারলেই ২৫ বছরের বাংলাদেশি যে কোনো নাগরিক জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী হতে পারেন। ময়মনসিংহ জেলায় এরই মধ্যে পাঁচজন নেতা মনোনয়ন ফরম তুলতে কেন্দ্রে আবেদন করেছেন। তারা হলেন অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা, ইউসুফ খান পাঠান, মজিবুর রহমান মিল্কী, গোলাম ফেরদৌস জিল্লু ও আবদুর রাজ্জাক। প্রত্যেকেই স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির কাছে যাচ্ছেন। সব জেলার চিত্র একই। কোনো কোনো জেলায় ছাড়িয়ে গেছে ডজন প্রার্থী।

ভোটবৃত্তান্ত : প্রতিটি জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং ইউপির চেয়ারম্যান ও সদস্য জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার হবেন। তাদের ভোটেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচিত হবেন। এ হিসেবে স্থানীয় সরকারের চার ধরনের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬৭ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি এ নির্বাচনে ভোট দেবেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার ইউনিয়ন পরিষদে। দেশে বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা সাড়ে চার হাজার। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গড়ে ১৩ জন করে প্রায় ৬০ হাজারের মতো নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন। ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদে প্রায় দেড় হাজার; ৩২০টি পৌরসভায় সাড়ে ৫ হাজার এবং ১১টি সিটি করপোরেশনে প্রায় সাড়ে ৫০০ নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর