বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন

দুর্নীতি করিনি আবার সুযোগ পাব : আইভী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই : সাখাওয়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতি করিনি আবার সুযোগ পাব : আইভী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই : সাখাওয়াত

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (এনসিসি) মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। গতকাল বিকালে নগর ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে তিনি এ তথ্য জানান। এ সময় তিনি বলেন, ‘জবাবদিহিতার মধ্যে গত পাঁচ বছরে আমি কাজ করেছি। আল্লাহকে  হাজির-নাজির রেখে জনসেবা করেছি। এক টাকাও দুর্নীতি করিনি। আবারও জনসেবা করার সুযোগ চাই।’

এদিকে গতকাল দুপুরে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এ সময় রিটার্নিং অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদারের কাছে ক্ষমতাসীন নেতাদের বিরুদ্ধে মৌখিকভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড জরুরি। একই সঙ্গে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবিও করেন তিনি। জেলা রিটার্নিং অফিসে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন ও আবুল কালামকে সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন সাখাওয়াত। নগর ভবন ছাড়ার আগে আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ে বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াতের অভিযোগেরও জবাব দেন আইভী। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন করিনি। যদি প্রচারণায় সরকারি গাড়ি কিংবা সিটি করপোরেশন ভবন ব্যবহার করতাম তাহলে তা লঙ্ঘন হতো। এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের সময় আসেনি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ও প্রতীক বরাদ্দের পর এ ব্যাপারে কথা হবে।’ সদ্য বিদায়ী এই মেয়র বলেন, ‘আমি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। অচিরেই হয়তো এখানে কেউ নিয়োগ পেতে পারেন।’

পরে তিনি সিটি করপোরেশন থেকে তার ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে যান। বিকাল সাড়ে ৩টায় আইভী নগর ভবন থেকে হেঁটে ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে আসেন। এ সময় বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী তার সঙ্গে ছিলেন। অনেকটা আবেগতাড়িত হয়ে আইভী বলেন, ‘বিগত দিনের কাজ ও আমার সততার মূল্যায়ন হিসেবে আবারও নারায়ণগঞ্জবাসীর সেবা করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জবাসীকে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়েছেন, তাই নারায়ণগঞ্জবাসীও সেই প্রতীককে বিজয়ী করবেন বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস।’ বিদায়ী মেয়র আইভী বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ও এর আগে পৌরসভার আট বছর এই ১৩ বছরে আমি এক মুহূর্তের জন্যও থেমে থাকিনি। অনেক ষড়যন্ত্র, অপপ্রচারের পরও কাজ করেছি জনগণের কল্যাণে।’ এদিকে মনোনয়নপত্র তোলার সময় রিটার্নিং অফিসারকে সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি সবার জানা। তাই নির্বাচনের আগেই শহর থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার জরুরি। এ ছাড়া যাদের কাছে বৈধ অস্ত্র আছে তারাও যেন এসব অস্ত্র নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে আসতে না পারেন সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ সময় তিনি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনেরও জোর দাবি জানান।

অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত দাবি করেন, নারায়ণগঞ্জে এখনো নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করতে হলে সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া উচিত। এ সময় রিটার্নিং অফিসার তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, অচিরেই এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ৫ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচন কমিশন বেশ কঠোর থাকবে। এ নির্বাচন সফল করতে যা যা দরকার সব করা হবে। সব প্রার্থীকে সমান বিবেচনায় নেওয়া হবে। রিটার্নিং অফিসের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত সাংবাদিকদের বলেন, নারায়ণগঞ্জে বিএনপির ৬০ ভাগ ভোট রয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এ নির্বাচনে বিএনপিই জয়ী হবে। সুষ্ঠু ভোটের অনুকূল পরিবেশই জরুরি। তিনি বলেন, ‘দলের সব নেতা-কর্মী আজ ঐক্যবদ্ধ। নারায়ণগঞ্জবাসীও ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। এখন ভোটের পরিবেশ জরুরি। এ সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অধিকাংশ সময়ই সুষ্ঠু কোনো পরিবেশ ছিল না। আমি নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান জানাব, বিদায় বেলায় আর কালিমা লেপন করবেন না। তাহলে ইতিহাসে আপনারা খলনায়ক হিসেবেই থাকবেন।’

সর্বশেষ খবর