বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন

কাউন্সিলর প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপে

আহমদ সেলিম রেজা, নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে

কাউন্সিলর প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপে

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (এনসিসি) নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু না হলেও ২৭টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদ প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগে সেলিনা হায়াৎ আইভী   ও বিএনপিতে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা হওয়ায় নতুন মেরুকরণে পড়েছেন আগ্রহীরা। তারা এখন নিজ নিজ রাজনৈতিক দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতৃত্বের আশীর্বাদ আদায়ে ব্যস্ত। অনেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে নিজের অবস্থান ঘোষণা করেছেন, কেউ কেউ আটঘাট বেঁধেই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অবশ্য সময়সীমার আজ শেষ হচ্ছে, তবে ২৭টি কাউন্সিলর পদের জন্য ১৮৮ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আর সংরক্ষিত কাউন্সিলরের ৯টি পদের জন্য ৪০ জন কিনেছেন মনোনয়নপত্র। নারায়ণগঞ্জ সদর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দর নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগে এসেছে নতুনমাত্রা। কাউন্সিল প্রার্থীরা যারা এত দিন এককেন্দ্রিক দৌড়ঝাঁপ করছিলেন তারা এখন বেশ বেকায়দায় পড়েছেন। অনেকেই স্থানীয় সভাপতিদের আশীর্বাদ নিয়ে কাউন্সিলর হতে চেয়েছিলেন। এখন তাদের মাথায় হাত। কারণ কেন্দ্রীয়ভাবে তিন থানার শীর্ষ নেতৃত্বকেই দলের মনোনীত প্রার্থী ডা. আইভীর সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর ডা. আইভীর সমর্থন না নিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে নানা সংশয়ের। নতুন করে শুরু হয়েছে নানা লবিং। অন্যদিকে বিএনপির জেলা কমিটির সহসভাপতি সাখাওয়াত হোসেন মাঠের নেতা হিসেবে পরিচিত হলেও স্থানীয় বিএনপিতে এ নিয়ে উচ্ছ্বাস চাপা পড়েছে নানা চোরাসে তে। নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল মনোনয়ন না পাওয়ায় তার সমর্থকরা নাখোশ। জেলা সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকারের সমর্থকরা ভেবেছিল শেষ পর্যন্ত ম্যাডাম তাকেই মনোনয়ন দেবেন। কিন্তু সেটা হয়নি বলে তাদের মধ্যেও সজীবতা নেই। জেলা সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামানের সমর্থন দলীয় প্রার্থীর পক্ষে। কারণ দলীয় চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্তের প্রতি তিনি সব সময় অবিচল বলে স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও তার প্রতি আস্থাশীল। নারায়ণগঞ্জের নাগরিক সমাজ মনে করে, এই দুই দলের অভ্যন্তরেই রয়েছে দ্বন্দ্বের নানা চোরাসে াত। এ নিয়ে ভোটের বাক্সে উভয় প্রার্থীকে কম-বেশি দলে বিরাজমান চোরাসে াত মোকাবিলা করতে হবে। উভয় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা স্থানীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। এই ঘরের শত্রু বিভীষণকে মোকাবিলায় যিনি সফল হবেন তিনিই বিজয়ী হবেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী মনে করছেন, কাউন্সিলর পদে বিএনপির ভালো করার সম্ভাবনা আছে। তবে মেয়র পদে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে বিএনপিকে বেশ বেগ পেতে হবে। এক্ষেত্রে ভিন্নমত পাওয়া যায় বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেনের কাছে। গতকাল আদালত প্রাঙ্গণে মনোনয়নের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার সময় তিনি এ সম্পর্কে বলেন, নারায়ণগঞ্জের ৬০ ভাগ লোক বিএনপির ভোটার। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষে প্রার্থীর জন্য কাজ করবে। বিএনপির সবাই মাঠে নামবে এবং সবাই ঐক্যবদ্ধ। শুধু সরকারি প্রার্থীর মতো যেন বিএনপির প্রার্থীও নির্বাচন করতে পারে সেদিকে নির্বাচন কমিশনকে খেয়াল রাখার এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি। সরেজমিন মিজমিজি, মদনগঞ্জ ও সদরের আমলাপাড়ার স্থানীয় মুরব্বি ও দলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডা. আইভী আওয়ামী লীগের নমিনেশন পাওয়ায় সবাই আশা করছেন ভোট নিরপেক্ষ হবে। নির্বাচনী সংঘাতও কম হবে বলে তারা আশা করছেন। এখন চলছে ভোটের নানা হিসাব-নিকাশ। বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত নারায়ণগঞ্জ সদরে রয়েছে আঞ্চলিক ভোটারদের একটা আধিপত্য। যেমন এখানে সবচেয়ে বেশি ব্যবসায়ী ও কর্মজীবী মানুষ মুন্সীগঞ্জের। এ ছাড়া আছেন সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার ভোটার। এ ছাড়া সদর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও মদনগঞ্জের কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের উদ্বেগ ও নতুন করে দৌড়ঝাঁপের কথা। নানাভাবে চেষ্টা তদবির করে দলের আশীর্বাদ নিয়ে নিজের কাউন্সিলর প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে চাইছেন সবাই। এ জন্য গত নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীরা খুঁজে বেড়াচ্ছেন বর্তমান কাউন্সিলরদের ভুলভ্রান্তি। তারা কোথায় কী ভুল করেছেন, কোথায় ব্যর্থ হয়েছেন, কে মাদক ব্যবসার সহযোগিতা করেছেন, জাল-জালিয়াতি করে মানুষকে হয়রানি করেছেন-এসব বয়ান নিয়ে কাউন্সিল প্রার্থীরা হাজির হচ্ছেন দলের থানা ও জেলা নেতাদের কাছে।

সর্বশেষ খবর