শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যারা

২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ৬১ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। গতকাল রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডে এ তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। বৈঠক শেষে গণভবনের গেটের সামনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রার্থীদের নাম গণমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সভায় তিন স্তরের জরিপ আর তৃণমূলের প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে এই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার একই উদ্দেশ্যে বৈঠক করা হয়। সেখানে ৫টি বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। ঘোষিত কমিটিতে বেশ কিছু জেলায় নতুন মুখ এসেছে। প্রার্থী তালিকায় চমক রয়েছে নারায়ণগঞ্জে। সেখানে সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দলীয় সমর্থন বঞ্চিত মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেয়েছেন। ব্রিফিংকালে ওবায়দুল কাদের বলেন, দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে নানা বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখানে মনোনয়নের বিষয় নয়, আমরা সিলেকশন করেছি। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এটা বলা যাবে। সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সদস্য বা সংরক্ষিত সদস্য পদে সিলেকশন করছি না। এটা চূড়ান্ত করবে জেলা আওয়ামী লীগ, সংশ্লিষ্ট উপজেলা-পৌরসভা আওয়ামী লীগের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনটি জরিপের ভিত্তিতে আমরা প্রার্থী মনোনীত করেছি। এ তালিকা থেকে যারা কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছেন তাদের নাম যাচাই-বাছাই করেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। বেশ কিছু জেলা থেকে ব্যক্তিগতভাবে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকও খোঁজখবর নিয়েছেন। বিচার করেই প্রার্থী করা হয়েছে, ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও রংপুর বিভাগের জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করা হয়। গতকাল চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা শেষে তা চূড়ান্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে মনোনয়ন বোর্ডের অধিকাংশ সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। প্রার্থী তালিকায় অধিকাংশ জেলার প্রবীণ রাজনীতিবিদ মনোনয়ন পেয়েছেন। দীর্ঘদিন জেলার রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় থাকলেও কেউ কেউ কখনই এমপি বা মন্ত্রী হতে পারেননি। তাদেরই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দিয়ে সম্মানিত করেছে আওয়ামী লীগ।  এবারই প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা থাকলেও জেলা পরিষদে প্রত্যক্ষ ভোটের বিধান নেই। পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন পরোক্ষ ভোটে। ভোট দেবেন ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। তাদের ভোটে ১ জন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও সংরক্ষিত ৫ জন নারী সদস্য নির্বাচিত হবেন। মনোনয়ন পেলেন যাঁরা : রংপুর বিভাগ— পঞ্চগড়-আবু বকর সিদ্দিক, ঠাকুরগাঁও-মুহাম্মদ সাদেক কোরাইশী, নীলফামারী-মো. মমতাজুল হক, কুড়িগ্রাম-মো. জাফর আলী, গাইবান্ধা-সৈয়দ শামসুল আলম, লালমনিরহাট-মতিয়ার রহমান, দিনাজপুর-আজিজুল ইমাম চৌধুরী, রংপুর-ছাফিয়া খানম। রাজশাহী বিভাগ— পাবনা-মোহাম্মদ রেজাউল রহিম লাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-মো. মইনুদ্দিন মণ্ডল, বগুড়া-ডা. মকবুল হোসেন, নাটোর-মো. সাজেদুর রহমান খান, জয়পুরহাট-আরিফুর রহমান রকেট, রাজশাহী-মাহবুব জামান ভুলু, নওগাঁ-এ কে এম ফজলে রাব্বী, সিরাজগঞ্জ- আবদুল লতিফ বিশ্বাস। খুলনা বিভাগ— বাগেরহাট-শেখ কামরুজ্জামান টুকু, খুলনা-শেখ হারুন অর রশীদ, মেহেরপুর-অ্যাডভোকেট মো. মিয়াজান আলী, কুষ্টিয়া-হাজী রবিউল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা-মাহফুজুর রহমান মনজু, মাগুরা-পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু, যশোর-শাহ্ হাদীউজ্জামান, নড়াইল-সৈয়দ আইয়ুব আলী, ঝিনাইদহ-কনককান্তি সাহা, সাতক্ষীরা-মুনসুর আহমেদ। বরিশাল বিভাগ— বরিশাল-খান আলতাফ হোসেন, ভোলা-আবদুল মোমিন টুলু, ঝালকাঠি- মো. সরদার শাহ আলম, পিরোজপুর-মো. শাহ আলম, বরগুনা- মো. দেলোয়ার হোসেন, পটুয়াখালী-আলহাজ খান মোশাররফ হোসেন। ঢাকা বিভাগ— ঢাকা-মাহবুবুর রহমান, টাঙ্গাইল-ফজলুর রহমান খান ফারুক, মানিকগঞ্জ-গোলাম মহীউদ্দীন, ফরিদপুর-মো. লোকমান হোসেন মৃধা, মুন্সীগঞ্জ-আলহাজ মো. মহিউদ্দিন, গাজীপুর-আখতারুজ্জামান, নরসিংদী-অ্যাডভোকেট মো. আসাদোজ্জামান, কিশোরগঞ্জ-মো. জিল্লুর রহমান, রাজবাড়ী-ফকীর আবদুল জব্বার, মাদারীপুর-মিয়াজউদ্দিন খান, শরীয়তপুর-ছাবেদুর রহমান (খোকা শিকদার), গোপালগঞ্জ-চৌধুরী এমদাদুল হক, নারায়ণগঞ্জ-আলহাজ আনোয়ার হোসেন। ময়মনসিংহ বিভাগ— ময়মনসিংহ-ইউসুফ খান পাঠান, শেরপুর-চন্দন কুমার পাল, জামালপুর-মো. এইচ আর জাহিদ আনোয়ার, নেত্রকোনা-প্রশান্ত কুমার রায়। সিলেট বিভাগ— সিলেট-লুত্ফর রহমান, হবিগঞ্জ-ডা. মো. মুশফিক হুসেন চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-মো. এনামুল কবীর ইমন, মৌলভীবাজার-আজিজুর রহমান। চট্টগ্রাম বিভাগ— চট্টগ্রাম- মোহাম্মদ আবদুচ সালাম, নোয়াখালী-ডা. এ বি এম জাফরউল্লাহ, কক্সবাজার-মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সৈয়দ এ কে এম এমদাদুল বারী, লক্ষ্মীপুর-শামসুল ইসলাম, কুমিল্লা-আবু তাহের, ফেনী-আজিজ আহমেদ চৌধুরী, চাঁদপুর-এম আবু ওসমান চৌধুরী। নির্বাচন কমিশন ২০ নভেম্বর দেশের তিন পার্বত্য জেলা (বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি) ব্যতীত ৬১টি জেলা পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ১ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ৩ ও ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ১১ ডিসেম্বর এবং প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ১২ ডিসেম্বর। ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। আওয়ামী লীগের দফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেতে ৭০৩ জন আবেদন করেছেন। দেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে সব থেকে বেশি আবেদন এসেছে খুলনা বিভাগ থেকে। এ বিভাগে আবেদন পড়েছে ১৩৩টি। আর সবচেয়ে কম ৩২টি আবেদন পড়েছে সিলেট বিভাগ থেকে। জেলা পর্যায়ে সর্বাধিক আবেদন পড়েছে পাবনা জেলা থেকে। এরপর শেরপুর থেকে ২৫টি, নোয়াখালীতে ২৩টি, চাঁদপুর ও পঞ্চগড় থেকে ২২টি করে আবেদন পড়েছে।

সর্বশেষ খবর