শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সব দেশে জনপ্রিয় উবারের অনুমতি নেই ঢাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ট্যাক্সি সার্ভিস নেটওয়ার্ক উবারকে ঢাকায় ‘অবৈধ’ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সিসেবা উবার ঢাকায় কার্যক্রম শুরুর তিন দিনের মাথায় ওই সেবাকে ‘অবৈধ’ উল্লেখ করে গতকাল বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিআরটিএ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অনলাইনভিত্তিক ট্যাক্সি সার্ভিস ‘উবার’ সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে যা মোটরযান আইন ও বিধির পরিপন্থী। এ ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট ‘উবার’ মালিক ও চালকদের অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোভিত্তিক অনলাইন ট্রান্সপোর্টেশন নেটওয়ার্ক কোম্পানি উবার বিশ্বের ৭৪টি দেশের ৪৫০টি শহরের মানুষ তাদের অ্যাপ ব্যবহার করে প্রতিদিন গড়ে ৫০ লাখের বেশি বার ট্যাক্সিতে চড়ছে। ব্যক্তিগত গাড়ি আছে এমন যে কেউ অ্যাপ ডাউনলোড করে ই-মেইল ও ফোন নম্বর ব্যবহার করে নিবন্ধনের মাধ্যমে উবারের চালক হতে পারেন। একই অ্যাপ ব্যবহার করে সেবা পান যাত্রীরা। উবার ম্যাপে যাত্রীরা চালকদের তাত্ক্ষণিক অবস্থান জেনে নিয়ে তাকে ডাকতে পারেন। গাড়ির গতি, দূরত্ব, সময় অনুযায়ী উবার ম্যাপ তাদের মাণদণ্ড অনুযায়ী ভাড়া হিসাব করে দেয়। যাত্রা শেষে নগদ টাকা বা ক্রেডিট-ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে ভাড়া মেটানো যায়।

উবার নিয়ে বিআরটিএ’র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ট্যাক্সিক্যাব সেবা দিতে হয় ‘ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন, ২০১০’ অনুযায়ী। কোনো কোম্পানি ট্যাক্সিক্যাব চালাতে চাইলে তাকে অবশ্যই বিআরটিএ’র মাধ্যমে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩-এর ৫১ ধারা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় রুট পারমিট নেওয়া বাধ্যতামূলক। বিআরটিএ’র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় ‘স্মার্টফোনে ট্যাক্সিসেবা উবার চালু হলো ঢাকায়’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদের প্রতি বিআরটিএ’র দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। বিআরটিএ তথা সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস পরিচালনা করা সম্পূর্ণ বেআইনি, অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’

উল্লেখ্য, প্রায় পৌনে ২ কোটি মানুষের মেগাসিটি ঢাকায় বর্তমানে ট্যাক্সি সার্ভিস বেহাল। ১৯৯৭ সালে যে ট্যাক্সি সার্ভিসের সূচনা হয়েছিল ১৯ বছর শেষে তার কিছুই অবশিষ্ট নেই। দ্বিতীয় পর‌্যায়ে ২০১৪ সালের এপ্রিলে দুটি কোম্পানি যে ট্যাক্সি চালু করেছে সেগুলোর গলা কাটা ভাড়া। দিনে ৩০০ ট্যাক্সিও ঢাকার রাস্তায় চলে না। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ঘন ঘন নীতিমালা পরিবর্তনের কারণে ট্যাক্সিক্যাব সেক্টর রুগ্ন খাতে পরিণত হয়। ফলে একসময়ের প্রায় ১১ হাজার ট্যাক্সির মধ্যে সবই রাস্তা থেকে উঠে গেছে। পরিবহন ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান চৌধুরী খসরু বলেন, ‘একটি সভ্য দেশের রাজধানীতে মানসম্পন্ন ট্যাক্সিক্যাব থাকবে না, তা ভাবাই যায় না।’

এদিকে উবার নিষিদ্ধ করে দেওয়া বিআরটিএ’র বিজ্ঞপ্তির সমালোচনা করেছেন সাধারণ মানুষ। এটি ঢাকাবাসীর সহজ ট্যাক্সিসেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিআরটিএ’র প্রতিবন্ধক বলে মন্তব্য করছেন তারা। উবারের কাছাকাছি অফিস ভারতে। সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশে এ অ্যাপ চালুর ঘোষণা দেয় উবার। বলা হয়, গ্রামীণফোনও উবারের এ উদ্যোগের সঙ্গে আছে। উবারের এই সহজ সেবা বাংলাদেশে চালু হওয়ার খবরে অনেকেই আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সেদিনই উবার অ্যাপ ডাউনলোড করে ট্যাক্সি চড়েন অনেকে। সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, যাত্রীদের জন্য সেবা পাওয়া সহজ হওয়ার পাশাপাশি অন্য পেশায় থেকেও সুবিধাজনক সময়ে ভাড়ায় গাড়ি চালিয়ে বাড়তি রোজগারের সুযোগ করে দেবে উবার। উবারের ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট অমিত জেইন ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখে প্রযুক্তির শক্তিকে চালক, যাত্রী ও শহরের সুবিধার্থে কাজে লাগানোর সুযোগ পেয়ে আমরা রোমাঞ্চিত।’ কিন্তু সার্ভিস চালুর তিন দিনের মাথায় সড়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ সারা বিশ্বে জনপ্রিয় এই সার্ভিসকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করল।

সর্বশেষ খবর