রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিদায় বিশ্ববিপ্লবী কাস্ত্রো

প্রতিদিন ডেস্ক

বিদায় বিশ্ববিপ্লবী কাস্ত্রো

ফিদেল আলেজান্দ্রো কাস্ত্রো রুস ♦ জন্ম : ১৩ আগস্ট ১৯২৬, মৃত্যু : ২৫ নভেম্বর ২০১৬

কিউবার মহান বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো আর নেই। স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত ১০টা ২৯ মিনিটে রাজধানী হাভানার একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। কাস্ত্রোর ছোট ভাই ও দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে রাতের শেষ দিকে এক ঘোষণায় ভাইয়ের মৃত্যুর কথা দেশবাসীকে জানান। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। ৯ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন শেষে ৪ ডিসেম্বর তার দেহভস্ম করে সমাহিত করা হবে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। এর আগে রাউল কাস্ত্রো তার ঘোষণায় বলেছিলেন, ‘আজ (স্থানীয় সময় গতকাল) শনিবারই তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে।’ বিপ্লবী এই নেতার আকস্মিক মৃত্যুতে কিউবানরা শোকাহত ও স্তম্ভিত। ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্ব নেতারা। বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন ফিদেল কাস্ত্রোর জন্ম ১৯২৬ সালের ১৩ আগস্ট কিউবার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ওরিয়েন্ট প্রদেশে। ফিদেল কাস্ত্রো হিসেবে পরিচিত হলেও তার পুরো নাম ফিদেল আলেজান্দ্রো কাস্ত্রো রুজ। এক সময়কার গেরিলা এই যোদ্ধা প্রায় ৫০ বছর ধরে কিউবাকে শাসন করেছেন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৯৫৯ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত এবং পরবর্তী সময়ে ১৯৭৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশের শাসনভার সামলেছেন তিনি। কাস্ত্রোর দীর্ঘ এই শাসনকাল অবশ্য মসৃণ ছিল না। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই দেশটির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও স্বৈরশাসক ফুলজেনসিয়ো বাতিস্তা সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থ উত্থানের নেতৃত্ব দিয়ে ১৯৫৩ সালে জেলে যেতে হয় তাকে। শুধু তা-ই নয়, ক্ষমতায় থাকাকালে ৬৩৮ বার দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চক্রের হত্যাচেষ্টার মুখোমুখি হতে হয়েছে ফিদেলকে। শেষমেশ অবশ্য সব রকম হত্যাচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করে নিলেন তিনি। নিজের শাসনামলের শেষ দিকে বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভোগেন ফিদেল। অসুস্থতার কারণে ২০০৬ সালের পর থেকেই জনসমক্ষে কম দেখা যেত তাকে। শারীরিকভাবে বেশি দুর্বল হয়ে পড়লে অবশ্য ২০০৮ সালে ছোট ভাই রাউলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন তিনি। এর পর থেকে একদমই জনসমক্ষে দেখা যেত না তাকে। যদিও গত ১৩ আগস্ট কিউবার জনগণ মহাসমারোহে তার ৯০তম জন্মদিন উদ্যাপন করেন। সমালোচকরা স্বৈরশাসক হিসেবে দেখলেও সমর্থকদের মতে, স্বৈরশাসনের কবল থেকে কিউবাকে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো। রাষ্ট্রীয় টিভির ঘোষণায় রাউল কাস্ত্রো বলেন, ‘কিউবান বিপ্লবের কমান্ডার ইন চিফ আজ রাত ১০টা ২৯ মিনিটে স্থানীয় সময় মৃত্যুবরণ করেছেন।’ ‘সর্বদা জয়ের লক্ষ্যে’ এই স্লোগান উচ্চারণ করে ঘোষণার সমাপ্তি টানেন তিনি। এদিকে কাস্ত্রোর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। বিশেষ করে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর নেতারা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শোকবার্তা দিয়েছেন। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নিয়েতো তাকে মেক্সিকোর ‘মহান বন্ধু’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কাস্ত্রোকে ‘চিরদিনের সঙ্গী’ বলে অভিহিত করেছেন ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট সালভাদর সানচেজ চেরেন। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর মতে, বিশ্বের অন্য বিপ্লবীরা তার লেগাসি অবশ্যই অনুসরণ করবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘বিংশ শতাব্দীতে ফিদেল কাস্ত্রো ছিলেন একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব। ভারত তাদের একটি মহান বন্ধু হারাল।’ এক শোকবার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘ফিদেল কাস্ত্রো চলে গেলেও কিউবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অটুট থাকবে।’ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা মিখাইল গর্বাচেভ বলেন, ‘কিউবার বিরুদ্ধে কঠোরতম আমেরিকান অবরোধের সময় ফিদেল শত হত্যাচেষ্টা ও প্রতিকূলতায় নিজেকে রক্ষা করেছেন এবং নিজের দেশকে শক্তিশালী করেছেন। সে সময় তার ওপর পাহাড়সম চাপ ছিল।’

শোকাহত বাংলাদেশ : বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোক জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তিত্বরা। একাত্তরে মুক্তিকামী বাঙালিদের পক্ষে দাঁড়ানো ফিদেল কাস্ত্রোর অন্তিমযাত্রায় অংশ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল। কিউবার অবিসংবাদিত এই নেতাকে ২০১৩ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননায়’ ভূষিত করেছিল বাংলাদেশ। গতকাল সকালে মৃত্যু সংবাদ প্রাপ্তির পরপরই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোকবার্তা পাঠিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় তার অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যু বিশ্বরাজনীতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। শোষিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার সংগ্রামের কথা বিশ্ববাসী আজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। রাষ্ট্রপতি শোকবার্তায় কিউবার জনগণ ও সরকারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শোকবার্তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ফিদেল কাস্ত্রোর সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ফিদেলের অবদানের কথাও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ তার শোকবার্তায় বলেন, ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুতে বিশ্বরাজনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার বার্তায় বলেছেন,  একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ফিদেল কাস্ত্রোর অবদানের কথা বাংলাদেশিরা চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ শোকবার্তায় বলেছেন, দুনিয়ার মেহনতি মানুষের এ কিংবদন্তি নেতার শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুতে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো ও এক দিনের শোক ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের একাংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ছাড়াও শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ-কিউবা মৈত্রী সমিতি, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ ও বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ।

সর্বশেষ খবর