রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আটকে রাখা যাবে না বিনিয়োগের ফাইল

অ্যাকশন প্ল্যান করতে সচিবদের চিঠি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বিনিয়োগ প্রস্তাব সংক্রান্ত কোনো ফাইল আটকে রাখতে পারবে না সরকারের কোনো সংস্থা। এ সংক্রান্ত সেবার বিনিময়ে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করা যাবে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণের নামে চলবে না দীর্ঘসূত্রতা। যদি কোনো সংস্থায় এ ধরনের প্রক্রিয়াগত জটিলতা থাকে তবে তার কারণ চিহ্নিত করে সেটি দূর করার জন্য ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ নিতে হবে। বাংলাদেশকে বিনিয়োগের অন্যতম গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এ ধরনের নির্দেশনা দিয়ে সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ২০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম ওই চিঠি পাঠান।

জানা গেছে,  ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ব্যবসায় পরিবেশের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬ ধাপ এগিয়ে কীভাবে প্রথম ১০০ দেশের তালিকায় আনা যায় সেই পরিকল্পনা নিয়েই প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের কর্মকর্তাদের কাছে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠির সঙ্গে একটি খসড়া অ্যাকশন প্ল্যানও দেওয়া হয়েছে। সেটিকে অনুসরণ করেই সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে সংস্কার কার্যক্রম চালাতে হবে। সূত্রগুলো জানায়, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করতে এরই মধ্যে একাধিক মন্ত্রণালয় বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। একই জায়গা থেকে যাতে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সব সেবা দেওয়া যায় (ওয়ানস্টপ সার্ভিস) সে লক্ষ্যে একটি আইন করার কথা জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই বিচারিক দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিনিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে যাচ্ছে। এর সমাধানের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের বিনিয়োগ বিষয়ক মামলাগুলোর জন্য একটি টাস্কফোর্স ও স্পেশাল বেঞ্চ গঠনের বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে। যে কোনো বিনিয়োগ প্রকল্পে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ পেতে এক থেকে দেড় বছর কখনো বা তার চেয়ে বেশি সময় লাগে। এছাড়া ভূমি নিবন্ধন, কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিনিয়োগ সংক্রান্ত সেবা পেতে যেসব জটিলতা রয়েছে সেগুলো দ্রুতগতিতে, স্বল্প খরচে কীভাবে নিষ্পন্ন করা যায় সে বিষয়গুলো থাকবে সংস্কারের অগ্রভাগে। সম্প্রতি বিনিয়োগ সহজীকরণ বিষয়ে রাজধানীতে একটি সেমিনারও করেছে বিডা। ওই সেমিনারে সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ‘ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে দুই ধাপ এগিয়েছি। আরও উন্নতি করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য ভালো জায়গা। এ লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনার খসড়া তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের খসড়া অযাকশন প্ল্যান সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ে চলে যাবে। ডিসেম্বরের মধ্যে এটা চূড়ান্ত করে জানুয়ারি থেকে এর বাস্তবায়ন শুরু হবে। গত ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ওই সেমিনারের পরদিনই বিনিয়োগ সহজীকরণ সংক্রান্ত এই চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছে পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বিনিয়োগ ও ব্যবসায় সহজীকরণ’-এর ক্ষেত্রে বিশ্বের ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম। আগামী পাঁচবছরে বর্তমানের অবস্থানকে দুই অঙ্ক তথা ৯৯ বা তার নিচে নিয়ে আনাই হবে আমাদের লক্ষ্য। সচিবদের উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনা দিয়ে চিঠিতে আরো বলা হয়, বিনিয়োগ সেবার ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বিদ্যমান দীর্ঘসূত্রতা, অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যয় এবং অধিক সংখ্যক প্রক্রিয়া অনুসরণের যে নীতি চালু রয়েছে, তার কারণ খুঁজে বের করে এমন সংস্কার করতে হবে যা বিশ্বমানের একটি ‘বিনিয়োগ ও ব্যবসায় বান্ধব’ পরিবেশ সৃষ্টি করে।

সর্বশেষ খবর