রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

যুক্তরাষ্ট্রের তিন রাজ্যে পুনরায় ভোট গণনা

প্রতিদিন ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সৃষ্ট ধূম্রজাল দূর করার পাশাপাশি নির্বাচন প্রক্রিয়া পুরোপুরি স্বচ্ছ ছিল তা জনসমক্ষে প্রকাশের স্বার্থে উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের ভোট পুনরায় গণনা শুরু হয়েছে। গ্রিন পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ড. জিল স্টাইনের আবেদনের ভিত্তিতে শুক্রবার উইসকনসিন অঙ্গরাজ্য নির্বাচন কমিশন পুনরায় গণনা শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশনের প্রশাসক মাইকেল হ্যাস এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘১৩ ডিসেম্বরের মধ্যেই পুনরায় গণনার কাজ সম্পন্ন হবে।’ শুক্রবার ছিল পুনরায় গণনার আবেদন জানানোর শেষ সময় এবং জিল স্টাইন পুনরায় গণনার জন্য প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করেই আবেদন জানান। খবর এনআরবি নিউজের। উইসকনসিন রাজ্যের মতো পেনসিলভেনিয়া ও মিশিগানের ভোট গণনা নিয়েও বিতর্ক ও সন্দেহ-সংশয় রয়েছে। এ দুটি রাজ্যের ভোটও পুনরায় গণনার জন্য প্রয়োজনীয় ফি সংগৃহীত হয়েছে বলে গ্রিন পার্টির এই প্রার্থী জানিয়েছেন। মোট গৃহীত ভোটের মাত্র ১% পেয়েছেন তিনি। পুনরায় গণনার ফলে ইতিমধ্যে ঘোষিত ফলাফলে পরিবর্তন ঘটলে জিল স্টাইনের বিজয়ী হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই নিশ্চিত জেনেও তিনি তা করছেন। কারণ হিসেবে বলেছেন, ‘উই ডিজার্ভ ইলেকশন্স উই ক্যান ট্রাস্ট’, অর্থাৎ ‘আমরা তেমন নির্বাচনে প্রত্যাশী যার প্রতি আস্থা রাখতে পারি।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘নির্বাচনব্যবস্থার প্রতি যাতে সবার বিশ্বাস থাকে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করার পাশাপাশি আমরা পরাজিত হিলারি ক্লিনটনকেও সহযোগিতা করতে চাই।’ পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের ভোট পুনরায় গণনার আবেদন জানানোর শেষ সময় আসছে সোমবার এবং মিশিগানে বুধবার।

ইতিমধ্যে ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী উইসকনসিন রাজ্যে মাত্র ২৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে ট্রাম্পের কাছে হেরেছেন হিলারি ক্লিনটন। আর এ রাজ্যে স্টাইন পেয়েছেন মোট ৩১ হাজার ৬ ভোট। অন্য প্রার্থী গ্যারি জনসন পেয়েছেন ১ লাখ ৬ হাজার ভোট। এ রাজ্যের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যাপারেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। এরও পর্যালোচনা চলছে পৃথক আরেকটি অডিট কমিটির মাধ্যমে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও নির্বাচনবিষয়ক আইনজীবী হিলারি ক্লিনটন শিবিরকে দোদুল্যমান তিনটি রাজ্য উইসকনসিন, মিশিগান ও পেনসিলভেনিয়ার ভোট পুনর্গণনার দাবি তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা ক্লিনটনের প্রচার শিবিরের চেয়ারম্যান জন পোডেস্টা ও সাধারণ পরামর্শক মার্ক ইলিয়াসকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন হ্যাকড হওয়ার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, ওই তিনটি রাজ্যের ইলেকট্রনিক মেশিনে ভোট গ্রহণ করা কাউন্টিগুলোয় হিলারি ৭ শতাংশ কম ভোট পেয়েছেন। এর পেছনে হ্যাকারদের হাত থাকতে পারে। ৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং বিশ্বকে হতবাক করে দিয়ে হিলারির মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদকে হারিয়ে ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন নিউইয়র্কের আবাসন ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সর্বশেষ বিজয়ের ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটনের অর্জিত ইলেকটোরাল ভোটের ব্যবধান যথাক্রমে ৩০০ ও ২৩২। সে ক্ষেত্রে ২০টি ইলেকটোরাল ভোটের পেনসিলভেনিয়ায় ট্রাম্প ও হিলারির ভোটপ্রাপ্তির ব্যবধান ছিল ১ দশমিক ১, অর্থাৎ ৪৮ দশমিক ৮ ও ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ, ১০টি ইলেকটোরাল ভোটের উইসকনসিনে ১ শতাংশ, অর্থাৎ ৪৭ দশমিক ৯ ও ৪৬ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ১৬টি ইলেকটোরাল ভোটের মিশিগান অঙ্গরাজ্যে সেই ব্যবধান পপুলার ভোটের ক্ষেত্রে মাত্র ১০ হাজার ৭০৪ ভোট। তাতে এই তিন অঙ্গরাজ্যে ভোট পুনর্গণনায় হিলারি ক্লিনটন যদি জিতে যান, তবে ইলেকটোরাল ভোটের সেই ব্যবধান গিয়ে দাঁড়াবে যথাক্রমে ২৫৪ ও ২৭৮। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিজয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে থাকবে না, বরং হিলারি ক্লিনটনের পক্ষেই চলে আসবে। কারণ, এই তিন রাজ্যে ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ৪৬।

১৯ ডিসেম্বর ইলেকটোরাল কলেজের ভোট গ্রহণ করা হবে আনুষ্ঠানিকভাবে। সে সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প তার অর্জিত ৩০০ ভোট অক্ষত রাখতে পারবেন কিনা, এখন দেখার পালা। এ নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই সাধারণ আমেরিকানদের মধ্যেও।

সর্বশেষ খবর