মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নারায়গঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন
এখন শুধুই অপেক্ষা

শ্রমিকরাই নির্ধারণ করবেন নগরপিতার ভাগ্য

গোলাম রাব্বানী

আগামী ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (এনসিসি) লক্ষাধিক শ্রমজীবীই নির্ধারণ করবেন নগরপিতার ভাগ্য। এ নিয়ে হেভিওয়েট দুই প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সাখাওয়াত হোসেন খান এ নিয়ে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন। অন্য প্রার্থীদেরও টার্গেট শ্রমজীবীদের দিকে। জানা যায়, বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় নৌশ্রমিক, মোটর মেকানিক, গার্মেন্ট শ্রমিকসহ ছোটখাট শিল্প কলকারখানায় নানা শ্রমজীবীদের বসবাস। এর মধ্যে একটি অংশ ভাসমানও রয়েছে। আবার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে সেখানে বসতিও গড়েছেন অনেকে। সিদ্ধিরগঞ্জেও একই অবস্থা। এ এলাকায় ভোটার সংখ্যা দেড় লাখেরও বেশি। এর অর্ধেকেই শ্রমিক। বন্দর এলাকার ভোটার সংখ্যাও লক্ষাধিক। সেখানেও শ্রমজীবীর সংখ্যা বেশি। তবে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডেও শ্রমিক-কর্মচারীদের বসবাস রয়েছে।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, এনসিসিতে ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩৯২ জন। এর মধ্যে লক্ষাধিক শ্রমিক ভোটার রয়েছেন। আর মেয়র নির্বাচিত হতে ভোটের প্রয়োজন হবে দুই লক্ষাধিক বা তার কম। তাই শ্রমিকরা যে প্রার্থীর পক্ষে থাকবেন তিনি হবেন এই সিটির মেয়র। এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি গঠনের পর প্রথম নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভী এক লাখ ৮০ হাজার ৪৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছিলেন ৭৮ হাজার ৭০৫ ভোট। বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার শেষ মুহূর্তে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও পেয়েছিলেন সাত হাজার ৬১৬ ভোট।

মেয়র পদে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘নারায়ণগঞ্জকে বলা হয় বন্দরনগরী। স্বভাবতই এখানে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা বেশি। তাই এ শ্রেণি যেদিকে যাবে, ভোটের পাল্লা তারই বাড়বে। আমি একজন শ্রমিক নেতা। শ্রমিকদের সুখ-দুঃখে সব সময় পাশে ছিলাম, এখনো আছি, ভবিষ্যতেও থাকব। আশা করছি, শ্রমিকদের ভোট আমিই বেশি পাব।’

বিশ্লেষকদের মতে, শ্রমিকরা সরাসরি কোনো দলের হয়ে কাজ না করলেও তারা বিপদে-আপদে যাকে কাছে পান তাকেই ভোট দেন। সেই হিসেবে এবারও শ্রমজীবীদের ভোট আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটিতে প্রধান ফ্যাক্টর। সেই সঙ্গে আগের নির্বাচনের চেয়ে এবারে ভোটার সংখ্যাও বেড়েছে। আগে ভোটার ছিল ৪ লাখ চার হাজার ১৮৯ জন। এবারে ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩৯২ জন। তবে আগের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও সেলিনা হায়াৎ আইভী দুজনের মধ্যে শ্রমিকদের ভোট ভাগ হয়েছিল। কিন্ত এবারে একজন শ্রমিক নেতা মেয়র প্রার্থী হওয়ায় শ্রমিক-কর্মচারীদের ভোটেও ভাগাভাগি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ৮ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে শ্রমিকদের ভোট যে বেশি পাবেন তারই ভাগ্য বদলে যাবে। তিনি হবেন নারায়ণগঞ্জের নগরপিতা। ভোটের এই হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রার্থী রয়েছে নির্বাচনে। তাই দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও ভোট পাওয়ার নানা পথঘাট খোঁজা শুরু করেছেন। কাগজ-কলমে ভোটের হিসাব কষতে শুরু করেছেন। আগামী ৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। পরের দিন চূড়ান্ত হবে মেয়র প্রার্থীর সংখ্যাও। তারপরই পাল্টে যাবে ভোটের হিসাব-নিকাশ। তবে আপাতত মেয়রের ভাগ্য নির্ধারণে শ্রমিক ভোটারদের প্রধান ফ্যাক্টর বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। ইসি সূত্র জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আগের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল চার লাখ চার হাজার ১৮৯ জন। ভোট কেন্দ্র ছিল ১৬৩টি। এতে সেলিনা হায়াৎ আইভী পেয়েলিছেন এক লাখ ৮০ হাজার ৪৮ ভোট। নিকটতম প্রার্থী শামীম ওসমান পেয়েছিলেন ৭৮ হাজার ৭০৫ ভোট। ওই নির্বাচনে ভোট পড়েছিল দুই লাখ ৮২ হাজার ৫৯২টি।

সর্বশেষ খবর