মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

হবিগঞ্জে মন্দিরে আগুন পুলিশ মোতায়েন

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

হবিগঞ্জ শহরতলির ভাদৈ ও ধুলিয়াখাল এলাকার তিনটি মসজিদে কোরআন শরিফ ও কিতাবে আগুন দেয়ার ঘটনার পর রবিবার গভীর রাতে মাধবপুরের একটি মন্দিরে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে। পরিস্থিতি যাতে অস্বাভাবিক না হয় সে জন্য জনপ্রতিনিধি,  প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন তত্পর রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বুল্লা জমিদারবাড়ির নাট মন্দির রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এতে প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাড়ির মালিক অমরেন্দ্র রায় জানান, রাত আড়াইটার দিকে হঠাৎ জানালার ফাঁক দিয়ে আগুন দেখতে পেয়ে বাড়ির লোকজন ঘর থেকে বের হয়ে দেখে নাট মন্দিরের চালা দাউ দাউ করে জ্বলছে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুনের শিখা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বাড়ির লোকজন চিৎকার করলে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। পরে ভোর রাতে মাধবপুর দমকল কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। হবিগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে ৩০ অক্টোবর কিছু লোক বুল্লা ইসকন মন্দিরে হামলার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামি করে অধ্যক্ষ মোহ বংশী দাস মাধবপুর থানায় মামলা করেন। এতে আসামিরা ইসকনের জমিদাতা অমরেন্দ্র রায়ের ওপর ক্ষুব্ধ। তার ধারণা মামলার আসামিরাই শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মন্দিরে আগুন দিয়েছে। জমিদারের উত্তরাধিকারী অমরেন্দ্র রায় জানান, এ ঘটনার পর পরিবার পরিজন নিয়ে তিনি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। সাবেক ইউপি সদস্য অজিত কুমার রায় জানান, এই নাট মন্দিরে শত বছর ধরে পূজা অর্চনাসহ ধর্মীয় প্রার্থনা ও গ্রামের সালিশ বৈঠক হতো। খবর পেয়ে মাধবপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এসএম রাজু আহম্মেদ, দক্ষিণ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রাশেদুর রহমান এবং দুপুরে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম, মাধবপুর পৌর মেয়র হীরেন্দ্র লাল সাহা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুখলেছুর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) টিনা পাল, স্থানীয় চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম মামুন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি হরিশ চন্দ্র দেব, শ্রীদাম দাশগুপ্ত, মনোজ পাল, পূজা উদযাপন নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোকতাদির হোসেন জানান, যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের খুঁজে বের করে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের বলেন যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে সমাজে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায় তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এদিকে রবিবার বিকেলে হবিগঞ্জের ৩টি মসজিদে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সবকটি মসজিদে অনেক পবিত্র কোরআন শরিফ এবং বিভিন্ন কিতাব পুড়ে যায়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির, জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম ও পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র।  মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। বিষয়টি যাতে কেউ ভিন্নখাতে প্রবাহিত না করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি না হয় সেদিক বিবেচনায় রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ সময় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩টি মসজিদে ১০টি করে পবিত্র কোরআন শরিফ প্রদান করা হয়। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র বলেন, কিছুদিন আগে এক পাগল ভাদৈ গ্রামে মসজিদে আগুন লাগিয়েছিল। তবে ৩টি মসজিদে আগুন দেয়ায় বিষয়টি রহস্যজনক মনে হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত চলছে। তিনি এ ব্যাপারে সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানান।

সর্বশেষ খবর