মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

লাখ লাখ অবৈধ ভোট পড়েছে

লাখ লাখ অবৈধ ভোট পড়েছে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষ হয়েছে ২০ দিন আগে। কিন্তু এর ফলাফল নিয়ে বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি। ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে এগিয়ে থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প  প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তবে পপুলার ভোটে হিলারি ট্রাম্পের চেয়ে কমপক্ষে ২০ লাখ ভোট বেশি পেয়েছেন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, কারণ ক্যালিফোর্নিয়ার সব ভোট গোনা এখনো শেষ হয়নি। এ অবস্থায় ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, হিলারির পক্ষে লাখ লাখ জাল ভোট পড়েছে। এসব ভোট বাদ দিলে পপুলার ভোটেও তিনি (ট্রাম্প) জয়ী হবেন। তিনি আরও দাবি করেন, যদি জাল ভোট না পরত তাহলে পপুলার ভোটেও তিনি এগিয়ে থাকতেন। নির্বাচনে গ্রিন পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন জিল স্টেইন। তিনি অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্পের পক্ষে অনেক রাজ্যে কারচুপি হয়েছে। এ জন্য তিনি উইসকনসিন, মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ার ভোট পুনর্গণনার জন্য দাবি জানিয়েছেন। ইলেকট্রনিক ভোট যন্ত্রে কারচুপি হয়েছে গ্রিন পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জিলস্টাইনের এই অভিযোগ আমলে এনে উইসকনসিনের নির্বাচন কমিশন সে রাজ্যের ভোট পুনর্গণনার নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে উইসকনসিনের ভোট পুনর্গণনা শুরু হয়ে গেছে। আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট পুনর্গণনা শেষ করতে হবে। জিলের ভোট পুনর্গণনার উদ্যোগে সমর্থন দিয়েছে হিলারির শিবির। উক্ত রাজ্যগুলোয় ভোট পুনর্গণনার উদ্যোগ এবং এক্ষেত্রে হিলারি শিবিরের সমর্থন দেওয়ার প্রেক্ষিতেই নির্বাচনে জাল ভোট পড়েছে বলে দাবি করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে এ উদ্যোগকে ভণ্ডামি ও ষড়যন্ত্র বলেও অভিহিত করেছেন তিনি। অবশ্য নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন রাজ্যে আগাম ভোট চলাকালীনও একই অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি।

বিবিসির খবর অনুসারে, নির্বাচনে ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৪৯টির ভোট গণনা হয়েছে। এতে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ৬ কোটি ১২ লাখ ১ হাজার ৩১ ভোট। তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির হিলারি ক্লিনটন পেয়েছেন ৬ কোটি ২৫ লাখ ২৩ হাজার ১৬২। তবে জয়-পরাজয় নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের ক্ষেত্রে ট্রাম্প পেয়েছেন ২৯০, আর হিলারি পেয়েছেন ২৩২। এদিকে প্রথমে গররাজি থাকলেও দলের সমর্থকদের চাপের কারণে হিলারি ক্লিনটনও এই পুনর্গণনায় অংশ নিচ্ছেন। তিনি এ কাজে কোনো অর্থ ব্যয় করছেন না। তবে নিজের আইনজীবীদের ভোট গণনার সময় উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে গ্রিন পার্টি পেনসিলভানিয়া ও মিশিগানে কারচুপির অভিযোগে ভোট গণনার দাবি জানালে হিলারি শিবির তাতেও অংশ নেবে বলে জানিয়েছে। আর এই খবরের কোনোটাই ভালোভাবে নিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভোট পুনর্গণনা শুরু হয়েছে জেনে তার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, এই কাজে অকারণে সময় ও অর্থ ব্যয় হবে, কিন্তু ফলাফলের কোনো হেরফের হবে না। সে সময় এই চেষ্টাকে তিনি দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছিলেন। রবিবার অবশ্য তার গলার স্বর যথেষ্ট বদলে গেল। টুইটারে ট্রাম্প দাবি করলেন, হিলারি নন, তিনিই মোট ভোটের হিসাবে জিতেছেন। হিলারির মোট ভোটের পরিমাণ তার চেয়ে বেশি, কারণ লাখ লাখ জাল ভোট হিলারির বাক্সে পড়েছে। তার দাবি, ‘এই জাল ভোটগুলো বাদ দিলে আমিই মোট ভোটের হিসাবে জয়ী হব।’ অবশ্য এমন দাবির পক্ষে কোনো যুক্তি-প্রমাণ তুলে ধরেননি ট্রাম্প। জানা গেছে, ট্রাম্পের সমর্থক হিসেবে পরিচিত অতি দক্ষিণপন্থি ওয়েব পোর্টাল ড্রাজ রিপোর্ট ১৪ নভেম্বর এক প্রতিবেদনে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ভোটার তালিকায় প্রায় ৩০ লাখের নাম নিবন্ধন করা হয়েছে, যারা নাগরিক নন। অবৈধ ভোটারের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে সেখানে। ওয়েব পোর্টালটির এই দাবির সূত্র হলো টেক্সাসের সাবেক স্বাস্থ্য কমিশনার গ্রেগ ফিলিপ্সের একটি টুইট বার্তা। তাতে তিনি অভিযোগ করেছেন, এবারের নির্বাচনে ৩০ লাখ জাল ভোট পড়েছে। ১৩ নভেম্বর সেই টুইট বার্তায় তিনি আরও বলেন, তার কাছে ১৮ লাখ ভোটারের নাম-ঠিকানাসহ একটি ডেটাবেইস আছে। এর মধ্যে নাগরিক নন, এমন ৩০ লাখ লোকের নাম রয়েছে। ভোটাধিকার না থাকলেও ওই ব্যক্তিরা হিলারির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ফিলিপ্সও তার এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থিত করতে পারেননি। মূলত ফিলিপ্সের ওই বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে ড্রাজ রিপোর্ট প্রকাশ করার পর ট্রাম্প পপুলার ভোটে নিজেকে জয়ী বলে দাবি করেন। এএফপি, বিবিসি।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর