বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন

তোলপাড় সামসুজোহাকে নিয়ে মন্তব্যে, সাবধানী কথা আইভীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

তোলপাড় সামসুজোহাকে নিয়ে মন্তব্যে, সাবধানী কথা আইভীর

সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের পিতা আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা প্রয়াত এ কে এম সামসুজোহা সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর এক মন্তব্যে সেখানে তোলপাড় চলছে। আওয়ামী  লীগের স্থানীয় নেতারা তার বেফাঁস মন্তব্যে ক্ষোভ ও ঘৃণা জানিয়েছেন। তাদের অনেকে পদত্যাগের হুমকিও দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার সকালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (এনসিসি) নির্বাচন নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা কৌশল নির্ধারণী এক বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে দলীয় প্রার্থী আইভী বলেন, শামীম ওসমান থাকলে ভালো, না থাকলে আরও ভালো। তিনি শামীম ওসমানের পিতা সামসুজোহা সম্পর্কে বলেন, তার (শামীম ওসমান) বাবার অবদানের চেয়ে আমার বাবার অবদান কম কী ছিল? তার বাবা দল করে টাকা কামাই করেছেন। আর আমার বাবা দল করে অর্থ-সম্পদ খুইয়েছেন। এ মন্তব্য সম্পর্কে গতকাল টিভি চ্যানেল নিউজ২৪কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘ধানমন্ডিতে নির্বাচন নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আমি এ ধরনের কথাই বলিনি। আমি জানি না আপনারা (গণমাধ্যম) এ ধরনের কথা কোথা থেকে পেয়েছেন। আমার মনে হয়, যাদের কাছ থেকে আপনারা শুনছেন, তাদের জিজ্ঞাসা করা ভালো। এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না। আপনাদের কাছে অনুরোধ, আমাদের স্বাভাবিকভাবে নির্বাচন করতে দিন। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে যা যা প্রয়োজন, সে কাজে সহযোগিতা করুন।’

এদিকে এ মন্তব্য কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী নেতা শামীম ওসমান ও আইভীর মধ্যে নতুন করে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে গণভবনের বৈঠকের মাধ্যমে দুই নেতার মধ্যে যে ঐক্য প্রক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল তা এখন ভেস্তে যেতে বসেছে। নারায়ণগঞ্জের শামীমঘনিষ্ঠ নেতারা জানান, দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে শামীম ওসমান দলীয় মেয়র প্রার্থী আইভীকে মুঠোফোনে দুই দফা বার্তা পাঠিয়ে নির্বাচনে কীভাবে কাজ করা যায় তা জানতে চাইলেও তিনি কোনো প্রত্যুত্তর পাননি। বরং বার্তা পাঠানোর কদিন পর উল্টো তিনি আইভীর মুখ থেকে তার পিতা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য শুনেছেন। এ মন্তব্যে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতারা অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় ও হতাশ। তারা আইভীর মন্তব্যের বিচার চান। তা না হলে গণপদত্যাগ করার কথাও বলছেন। আইভীর দম্ভোক্তি আর অহমিকায় নৌকার ভরাডুবি হলে তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে বলে তারা মন্তব্য করেন। শামীম ওসমানের মরহুম পিতা সম্পর্কে অসম্মানজনক মন্তব্য করাকে ‘হীন মানসিকতা’ আখ্যা দিয়ে আইভীকে তার মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রশীদ। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আইভীর পিতা প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আলী আহাম্মদ চুনকাকে নিয়ে শামীম ওসমান কখনই কোনো বিরূপ মন্তব্য করেননি। সেখানে সামসুজোহার মতো একজন কর্মীবান্ধব ও নির্লোভ মানুষকে নিয়ে এমন মন্তব্য দিয়ে আইভী প্রমাণ করেছেন, তিনি কখনই ঐক্যের পথে ছিলেন না, ঐক্য চানও না।

সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামসুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, ‘প্রয়াত এ কে এম সামসুজোহা ব্যক্তিগত জীবনে দল ও কর্মীদের জন্য এতটাই করেছিলেন যে নিজের বাড়ি পর্যন্ত নিলামে উঠেছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে গৃহবন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত করতে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনি মোশতাকের মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পায়ে ঠেলেছিলেন। জাতীয় চার নেতাকে হত্যার সময় তিনি ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলী একই সেলে ছিলেন। এমন একজন নেতাকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্যকারীর নাম মুখে আনতেও ঘৃণা হচ্ছে আমার। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয়ভাবে কঠোর সিদ্ধান্ত না হলে আমরা গণপদ্যতাগ করব।’ নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ থাকায় পত্রিকা বা টিভি কিছুই দেখতে পারিনি। তবে বিষয়টি শুনেছি।’ তিনি বলেন, ‘জোহা ভাই ছিলেন আমার রাজনৈতিক গুরু। তার হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছি। যদি আইভী এমন মন্তব্য করে থাকেন, তবে তা নিন্দনীয়। কারণ, সামসুজোহা একজন কর্মীবান্ধব ও বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত সৈনিক ছিলেন। তিনি কোরবানির জন্য কেনা গরু বিক্রি করে কর্মীদের ঈদ করতে টাকা দিয়েছিলেন। তার সম্পর্কে এমন মন্তব্য শুনে আমি লজ্জিত।’ নারায়ণগঞ্জ জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোপীনাথ দাস বলেন, ‘আইভী কেন্দ্রে গিয়ে নারায়ণগঞ্জে সংখ্যালঘু নেতাদের নিয়ে প্রতিনিধি দল পাঠাতে বলেছেন। প্রতিনিধি দলের আসা উচিত এবং আইভীর পরিবার যে দেওভোগে হিন্দু সম্পত্তি ‘জিউস পুকুর’ দখল করে রেখেছে, তা তাদের আগে উদ্ধার করা উচিত।’ এ ব্যাপারে আরও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, সহসভাপতি চন্দন শীল, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাইফ উল্লাহ বাদল, সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিনসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সর্বশেষ খবর