বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
জাবির হলে অস্ত্রের খেলা!

অস্তিত্ব সংকটে অন্য সংগঠনগুলো

শরিফুল ইসলাম সীমান্ত

অস্তিত্ব সংকটে অন্য সংগঠনগুলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কয়েক বছর ধরে ছাত্রলীগের একক আধিপত্যের কারণে অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ফলে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক কার্যক্রম কেবল কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ। ছাত্রলীগের একক আধিপত্যের কারণে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ক্যাম্পাসে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। ছাত্রদলের কোনো নেতা ক্যাম্পাসে ঢুকলেই ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হচ্ছেন। যে কারণে ছাত্রদল এখন ক্যাম্পাসে ঢুকতেই ভয় পায়। গত ছয় মাসে তিনবার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মারধরের ঘটনা ঘটেছে। গত ২৬ আগস্ট সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ছাত্রদলের জাবি শাখার সহ-সভাপতি শহীদুল ইসলাম তুষার। ক্যাম্পাসে জানাজা দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছ অনুমতি চাইলে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষ হতে পারে বলে তুষারের লাশ ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন।

এ ছাড়া ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ছাত্র ইউনিয়ন এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের উল্লেখ করার মতো উপস্থিতি চোখে পড়ে না। ছাত্রমৈত্রী এবং জাসদ ছাত্রলীগের কমিটি থাকলেও তাদের কোনো কার্যক্রম নেই। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগের কোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ না থাকায় তারা এখন নিজেরা অন্তর্দ্বন্দ্ব আর মারামারিতে জড়িয়ে পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কার্যক্রমও নিয়ন্ত্রণ করছে ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ এই আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়টিতে হলের সিট বণ্টনের দায়িত্ব হল প্রশাসনের। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আসন বরাদ্দের কাজটি করে ছাত্রলীগ। এতে অনেক সময় হলের রুম এবং সিট দখলকে কেন্দ্র করে তারা নিজেরাই মারামারিতে লিপ্ত হয়ে পড়েন।  ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে এক বছরের জন্য গঠিত হয় জাবি ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি। এর মধ্যে একাধিকবার নতুন কমিটি গঠনের জন্য তারিখ ঘোষণা করা হলেও কমিটি হয়নি। অবশেষে ডিসেম্বরে নতুন কমিটি গঠন করা হবে বলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ঘোষণা দিয়েছে। সম্ভাব্য নতুন কমিটিকে ঘিরে জাবি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনেক ‘অছাত্র’ এবং ‘বিতর্কিত’ নেতা-কর্মী পদ পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, অছাত্র এবং বিতর্কিতরা কমিটিতে এলে নিয়মিত ছাত্রদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হবে। এতে ক্যাম্পাসে নতুন করে সংঘর্ষ এবং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জাবি শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ছাত্রলীগের এক কর্মী অন্য কর্মীকে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে আড্ডা জমানোর একটি ছবি নিয়ে ক্যাম্পাসে তোলপাড় চলছে। ছবিতে দেখা যায়, শাখা ছাত্রলীগের দুই কর্মী বিদেশি পিস্তল নিয়ে আড্ডায় মেতেছেন। আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, অন্য গ্রুপ মোকাবিলাসহ নিজ স্বার্থে এই অস্ত্র মজুদ করা হচ্ছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।

সম্প্রতি তোলা এই ছবিতে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগ কর্মী মো. ফিরোজ মাহমুদ আরেক ছাত্রলীগ কর্মী শুভজিৎ অন্তুর কপালে একটি বিদেশি নাইন এমএম পিস্তল ঠেকিয়ে আড্ডায় মেতেছেন। আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, অন্তু পিস্তল নিয়ে বসে আছেন। অভিযুক্ত দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের ছাত্র। তারা হল ছাত্রলীগ কর্মী আফফান হোসেন আপনের (অর্থনীতি, ৪১তম ব্যাচ) অনুসারী। তারা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনির সঙ্গে রাজনীতি করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নাইন এমএম পিস্তলটি ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত কর্মী আসিফ আহমেদের। হলে আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগে প্রায় দুই বছর আগে আসিফ আহমেদকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। আসিফ রসায়ন বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের ছাত্র। হলের একাধিক ছাত্র অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগ কর্মীরা এই পিস্তল দিয়ে প্রায়ই রাতে হলের ছাদে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

সর্বশেষ খবর