বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

চবিতে ১৩ গ্রুপ এক বছরে অর্ধশত সংঘর্ষ

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চবিতে ১৩ গ্রুপ এক বছরে অর্ধশত সংঘর্ষ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) নিয়ন্ত্রণহীন ছাত্রলীগ। লাগাম টানতে ছাত্রলীগের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করেও থামানো যায়নি তাদের। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর আগের মতোই চলছে তাদের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ আর দলাদলি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টেন্ডার, নিয়োগবাণিজ্য, নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ-হানাহানি, অবরোধ, ট্রেনের বগি আর হল দখল সব কিছুতেই একাকার ছাত্রলীগ। তারা এতটাই বেপরোয়া ও বেসামাল যে ‘পান থেকে চুন খসলেই’ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে তাদের বিভিন্ন দল-উপদল। গত এক বছরে তাদের নিজেদের মধ্যে অর্ধ শতাধিক সংঘর্ষ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নিয়ন্ত্রণহীন ছাত্রলীগের লাগাম টানতে গত ৯ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তারপরও থামানো যায়নি তাদের। টেন্ডার এবং নিয়োগ বাণিজ্যে ছাত্রলীগ জড়িয়ে পড়ার অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন চবি ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু। তিনি বলেন, এটা অপপ্রচার ছাড়া কিছুই নয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অপপ্রচারটা এত জোরালোভাবে করছে যে মিথ্যাটাই যেন আজ সত্যে পরিণত হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যায়কে কখনো চবি ছাত্রলীগ আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না। দায়িত্ব নেওয়ার পর এ পর্যন্ত যারাই অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জানা যায়, ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি ছাত্রলীগ-শিবিরের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে মামুন হোসেন নামে এক শিবির নেতা নিহত এবং উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়। ওই সংঘর্ষের পর থেকে শিবিরের শক্ত ঘাঁটি চবি ক্যাম্পাসে তাদের আধিপত্য খর্ব হতে থাকে। পরবর্তী এক বছরে পুরো ক্যাম্পাসে একক আধিপত্য বিস্তার করে ছাত্রলীগ। গত বছরের ২১ জুলাই চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী আলমগীর টিপুকে সভাপতি এবং সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী ফজলে রাব্বী সুজনকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এ কমিটি ঘোষণার পর থেকে ক্যাম্পাসে বেপরোয়া হয়ে ওঠে দুই গ্রুপ। এ দুই গ্রুপের মধ্যেই সৃষ্টি হয় শাটল ট্রেনের বগি ভিত্তিক এবং ক্যাম্পাস ভিত্তিক কমপক্ষে ১৩টি উপগ্রুপ। এ সময় চবির উন্নয়ন কাজের টেন্ডার ভাগাভাগি, নিয়োগ বাণিজ্য, আধিপত্য বিস্তার, হলের সিট ও বগি দখল, চিকা মারা, বিভিন্ন দিবসে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার সময়, বান্ধবীকে অশালীন মন্তব্য করা, সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে কটূক্তি করা নিয়ে একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। গত ২০ নভেম্বর চবি ক্যাম্পাস থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পর দিয়াজকে খুনের অভিযোগে চবি ছাত্রলীগ নেতা ও সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেনসহ ১০ জন আসামি করে মামলা করেছে দিয়াজের পরিবার। তবে ছাত্রলীগের একাধিক সূত্রে দাবি, এ ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে চবির শত কোটি টাকার টেন্ডার। ছাত্রলীগের একাধিক সূত্রে জানা যায়, চবিতে ছাত্রলীগের ১৩ অধিক গ্রুপ এবং উপ-গ্রুপ থাকলেও প্রায় শত কোটি টাকার টেন্ডারকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সব গ্রুপ দুই গ্রুপের অধীনে একত্র হয়।

এর মধ্যে একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে চবি ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু এবং সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী সুজন। অপর গ্রুপটির নেতৃত্বে ছিলেন সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যুবরণ করা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী এবং চবি ছাত্রলীগের দুই সহসভাপতি রাশেদ হোসেন এবং রেজাউল করিম। গত দুই মাসে এ দুই গ্রুপের অনুসারীদের মধ্যে ১০টির অধিক সংঘর্ষ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রভাব, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ছাত্রলীগকে ব্যবহার এবং প্রশাসনের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে চবিতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপগ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।

সর্বশেষ খবর