বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জবির নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্যে শতভাগ নিয়ন্ত্রণ

রাশেদ হোসাইন

জবির নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্যে শতভাগ নিয়ন্ত্রণ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) এক সময় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সরব উপস্থিতি থাকলেও এখন কেবলই ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কোনো কার্যক্রম নেই। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঝে-মধ্যে আন্দোলনে সরব হলেও ছাত্রলীগের হামলায় এখন তারাও অনেকটা কোণঠাসা।

আট  বছর ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই ছাত্রদলের। গত ৬ ফেব্রুয়ারি অছাত্র ও বিবাহিতদের নিয়ে গঠিত কমিটি এক মিনিটের জন্য ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেনি। প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি চালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ওই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর কয়েক দফা হামলা চালায় ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ওই হামলা থেকে রেহাই পায়নি সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব টেন্ডারবাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য থেকে নিয়োগ বাণিজ্যে সব কিছুতেই ছাত্রলীগের শতভাগ নিয়ন্ত্রণ। এমনকি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুষ্ঠানেও জোরপূর্বক অতিথি আসন দখল নেন ছাত্রলীগের নেতারা। ২০১২ সালের ৩ অক্টোবর এফ এম শরিফুল ইসলামকে সভাপতি ও এস এম সিরাজুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত এক বছর মেয়াদি কমিটি চার বছর ধরে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সাংগঠনিক কাজের চেয়ে ব্যক্তিগত লাভের দিকে মনোযাগ বেশি। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই এই অভিযোগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস বিভাগ এবং প্রকৌশল দফতর থেকে চলতি বছরেই ছোট-বড় প্রায় ২৫টির মতো কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। যার শতভাগই দখল করে নেয় ছাত্রলীগ। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন কিংবা বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত সব অনুষ্ঠানেই জোর করে অতিথির চেয়ার দখলে নেওয়ার অভিযোগ আছে।

 ক্যাম্পাসে বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার পরও ছাত্রলীগের ওই দুই নেতার অনুমতি না নিলে তারা অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেন। গত ৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রচারণামূলক অনুষ্ঠান করতে আসে।  ছাত্রলীগের কর্মীরা এই অনুষ্ঠান বন্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা হামলা করে লুটপাটও চালায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে একক নিয়ন্ত্রণ ছাত্রলীগের। গত বছরের অক্টোবরে ৩৩টি পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রশাসন।

এ নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার কথা ছিল গত বছরের ৩ ডিসেম্বর। ওই নিয়োগে ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দেওয়া তালিকার কয়েকজনকে বাদ দেওয়ায় সিন্ডিকেট মিটিং চলাকালীন ওই দুই নেতা উপস্থিত হয়ে হৈচৈ শুরু করেন। পরে সিন্ডিকেট নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। গত ২০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এক চিঠির মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর আগে ওই দুই নেতাই প্রায় ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেন। প্রতিটি পদের বিপরীতে ৮ থেকে ১২ লাখ টাকার বাণিজ্য করে ছাত্রলীগ।

জানতে চাইলে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সব ধরনের ইতিবাচক কাজেই কেবল ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতা আছে। কোনো ধরনের নেতিবাচক কাজে ছাত্রলীগ জড়িত নয়।

সর্বশেষ খবর