বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন

রায় ঘোষণা ১৬ জানুয়ারি

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার রায় ঘোষণার জন্য আগামী ১৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে। গতকাল নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে সর্বশেষ তিন আসামির আইনজীবীরা তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য ওই তারিখ ধার্য করা হয়।

গতকাল আদালতে র‌্যাব-১১-এর সাবেক কর্মকর্তা মাসুদ রানা, র‌্যাবের সাবেক সদস্য এএসআই বজলুর রহমান ও সিপাহি আসাদুজ্জামান নূরের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ৩৫ আসামির সবার পক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন সম্পন্ন হলো।

এ মামলায় প্রধান আসামি নূর হোসেন, র‌্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক কর্মকর্তা আরিফ হোসেন ও মাসুদ রানাসহ ২৩ জন কারাগারে আছেন। তবে নূর হোসেনের চার সহযোগীসহ ১২ আসামি এখনো পলাতক।  গতকাল আদালতে র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা মাসুদ রানার পক্ষে অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফরহাদ আব্বাস। এএসআই বজলুর রহমান ও কনস্টেবল আসাদুজ্জামান নূরের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান। ওই তিনজনের আইনজীবীরা যুক্তিতর্কে নিজেদের মক্কেল নির্দোষ দাবি করে তাদের খালাস চান। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে নাসিকের প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর অপহৃতদের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দরের শান্তির চর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে একটি এবং নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের মেয়ের জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় পৃথক মামলা করেন।

নিহতদের স্বজনদের প্রত্যাশা : নারায়ণগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সাত খুন মামলার বিচারকাজ শেষ হয়েছে। এখন বহুল প্রতীক্ষিত রায়ের পালা। সাত খুনের ঘটনায় ১২৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। তাও মাত্র আট মাসের মধ্যে। এ ছাড়া সাত কার্যদিবসের মধ্যে যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। যুক্তিতর্কের শুরু থেকে সাত খুনের দুটি মামলায় অভিযুক্ত ৩৫ আসামির বিরুদ্ধে সাত খুনের পরিকল্পনা, অপহরণ, হত্যা, গুমসহ আনুষঙ্গিক সব প্রমাণ শতভাগ উপস্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ ৩৫ আসামির প্রত্যেকের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করেছে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘সাত খুনের মামলার সুষ্ঠু বিচার হবে এ প্রত্যাশা শুধু নারায়ণগঞ্জবাসীর নয়, সমগ্র বাংলাদেশের। আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে। সেই আস্থা থেকেই আমার প্রত্যাশা, আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবে। কারণ সাক্ষ্য-প্রমাণে আসামিদের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়েছে।’ নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও একটি মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। এ ঘটনার পর থেকেই হুমকি দিয়ে যাচ্ছে আসামিপক্ষের লোকজন। আমরা চাই আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড যেন দেয় আদালত।’ নিহত গাড়িচালক জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নূপুর বেগম বলেন, ‘আমি বিধবা হয়েছি। আমার সন্তান বাবাকে হারিয়েছে। এই আসামিদের সবার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আদালত এর সুষ্ঠু বিচার করে আসামিদের ফাঁসি দেবে এটাই প্রত্যাশা।’ নিহত লিটনের ভাই রফিক মিয়া বলেন, ‘আমরা স্বজন হারিয়েছি। আমরাই এ দুঃখ বুঝি। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের বলেন, ‘আমরা ভুক্তভোগী পরিবার। আমাদের প্রত্যাশা দেশবাসী জানেন। তাই আদালতের কাছে প্রার্থনা, যাতে এমন একটা রায় দেওয়া হয়, আর কোনো বাবাকে তার সন্তান যেন না হারাতে হয়। আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানাচ্ছি।’ মামলার অন্য বাদী নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল বলেন, ‘বিচার শেষে দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রত্যাশা করছি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর