বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন

মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীর অর্ধেকই মামলার আসামি

রোমান চৌধুরী সুমন ও এম এম শাহীন, নারায়ণগঞ্জ থেকে

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (এনসিসি) বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকে মেয়র পদপ্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের বিরুদ্ধে দুটি মামলার খড়গ ঝুলছে। এরমধ্যে একটি নারায়ণগঞ্জ সদরে আরেকটি ফতুল্লা থানায়। ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, গাড়ি পোড়ানোসহ অন্তত ২৮টি মামলা রয়েছে। শুধু এই দুজন নন, মেয়র ও কাউন্সিলর পদে অন্তত অর্ধেকের বিরুদ্ধেই মামলার খড়গ ঝুলছে। অনেকের মামলার অভিযোগপত্রও দায়ের করা হয়েছে। সাধারণ কাউন্সিলরদের পাশাপাশি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধেও মাদকসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। মামলা হওয়া প্রার্থীদের অধিকাংশই বিএনপি সমর্থক বলে জানা গেছে। জানা যায়, এনসিসি নির্বাচনে আটজন মেয়র, ৩৭ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও ১৬৬ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী শওকত হাশেম শকুর বিরুদ্ধে চাষাঢ়া বোমা হামলাসহ ৫-৬টি মামলা রয়েছে। দলসমর্থিত ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, গাড়ি পোড়ানোসহ ২৮টি মামলার খড়গ ঝুলছে। ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাবেক ছাত্রদল নেতা অহিদুল ইসলাম ছক্কুর বিরুদ্ধে রয়েছে ১২টি মামলা। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, ৩১ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি, যুবলীগ নেতা ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে দুটি ও ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মো. ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এ ছাড়া যুবদল নেতা মো. ইকবাল হোসেন ভন্ডোরের বিরুদ্ধে দুটি ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হেকিমের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। ৩ নম্বর ওয়ার্ড সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শাহজালাল বাদলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনসহ ৯টি, যুবলীগ নেতা তোফায়েল হোসেনের বিরুদ্ধে একটি মারামারির মামলা রয়েছে।

জানা যায়, কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে মাদকসহ ছয়টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের এ আর রাসেলের বিরুদ্ধে একটি, যুবলীগ নেতা আরিফুল হক হাছানের বিরুদ্ধে মাদক আইনে একটি ও যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা রয়েছে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিনের ছেলে গোলাম মুহাম্মদ সাদরিলের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলার খড়গ ঝুলছে। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে চারটি জ্বালাও-পোড়াও মামলা রয়েছে। গিয়াসউদ্দিনের অপর ছেলে গোলাম মুহাম্মদ সানভীরের বিরুদ্ধে একটি হত্যাসহ ও দুটি জ্বালাও-পোড়াও মামলা রয়েছে।

সূত্রমতে, মো. নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি চুরির মামলা, আওয়ামী লীগ সমর্থক মো. আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি নিষ্পত্তিকৃত মামলা ও মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা ছিল। এর মধ্যে ২২টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বর্তমানে একটি হত্যা মামলা আদালতে বিচারাধীন। এ হত্যা মামলাটি ১৯৯৮ সালের।

আওয়ামী লীগ সমর্থক সিরাজুল ইসলাম মণ্ডলের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে পুলিশ কনস্টেবল মফিজ উদ্দিন হত্যা মামলা রয়েছে। ওই মামলায় সিরাজুল ইসলাম মণ্ডল চার্জশিটভুক্ত আসামি। এ ছাড়াও ওই ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা এস এম আসলামের নামে একটি ও আওয়ামী লীগ সমর্থক মজিবর রহমান মণ্ডলের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবিব ও আওয়ামী লীগ সমর্থক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধেও একটি করে মামলা রয়েছে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থক উজ্জ্বল হোসেন, আওয়ামী লীগ সমর্থক সালাউদ্দিন, বিএনপি সমর্থক গাজী সেলিম আহমেদের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা রয়েছে। এ ছাড়াও বিএনপি নেতা সাগর প্রধানের বিরুদ্ধে দুটি রাজনৈতিক মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইসরাফিল প্রধান, ব্যবসায়ী মো. সিরাজুল ইসলাম ও রোকশত আলীর বিরুদ্ধে একটি করে মামলা রয়েছে। এ ছাড়াও ব্যবসায়ী মো. শাহজালালের বিরুদ্ধে দুটি মামলা আদালতে বিচারাধীন। বন্দর থানা সূত্রে জানা যায়, ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপি নেতা শাহেনশাহের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় অস্ত্র আইনসহ তিনটি মামলা রয়েছে। ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপি নেতা হান্নান সরকারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। বিএনপি নেতা কাজী রেদয়ানুল হক মামুনের বিরুদ্ধে দুটি, বিএনপি নেতা নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে দুটি এবং ২২ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপি নেতা সুলতান আহাম্মেদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী যুবলীগ নেতা রাহাতের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।

ছাত্রদল নেতা আবুল কাউসার আশার বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিএনপি নেতা এনায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। কাউন্সিলর প্রার্থী হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান বাবুলের বিরুদ্ধে দুটি মামলা আদালতে বিচারাধীন বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও ১ নম্বর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী নাজমা বেগমের বিরুদ্ধে দুটি মাদক ও একটি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। এ ছাড়া ২ নম্বর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ডলি আক্তারের বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে।

সংশোধনী : গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিন এ ‘লঙ্ঘনের হিড়িক আচরণবিধি’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শেষ প্যারায় ২ নম্বর ওয়ার্ডে সাত খুনে নিহত নজরুল ইসলামের পরিবর্তে ভুলবশত সাত খুনের আসামি উল্লেখ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর