বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাংবাদিক মানিক হত্যায় ৯ জনের যাবজ্জীবন

অসন্তোষ পরিবারের

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

সাংবাদিক মানিক হত্যায় ৯ জনের যাবজ্জীবন

খুলনার সাংবাদিক মানিক চন্দ্র সাহা হত্যা মামলার রায়ে ৯ আসামিকে যাবজ্জীবন  কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম এ রব হাওলাদার গতকাল দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। এ মামলার ১১ আসামির মধ্যে বাকি দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে অপর মামলার রায়ে সব আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এদিকে রায় ঘোষণার পর আদালত চত্বরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন নিহতের স্বজন ও খুলনার সাংবাদিক নেতারা। আইনজীবীরা জানান, চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রায়ে মিঠুন, সুমন ওরফে নুরুজ্জামান, মো. আকবর আলী শিকদার, বুলবুল ওরফে বুলু, আকরাম ওরফে বোমারু আকরাম, সাত্তার ওরফে ডিসকো সাত্তার, সাকা ওরফে সাখাওয়াত, বেল্লাল ও সরো ওরফে সরোয়ারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার অপর দুই আসামি শওকত হোসেন ও আ. হাই ইসলাম ওরফে কচিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় আসামিদের মধ্যে আলী আকবর শিকদার, সুমন ওরফে নুরুজ্জামান, আকরাম হোসেন, আ. হাই ইসলাম ওরফে কচি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা পলাতক। এ ছাড়া মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি নিষিদ্ধ ঘোষিত জনযুদ্ধের আঞ্চলিক নেতা আলতাফ ওরফে বিডিআর আলতাফ, আ. রশিদ ও মাহফুজ ওরফে মাফিজ আগেই ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এনামুল হক বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর হলেও হত্যা মামলার রায়ে অন্তত ৯ জনের যাবজ্জীবন ও অর্থদণ্ড হওয়ায় আমরা খুশি।’ তবে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট পারভেজ আলম বলেন, ‘আমি শাস্তিটাকে যৌক্তিক শাস্তি মনে করি না। এটা হচ্ছে শুধু আইওয়াশ। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা উচ্চ আদালতে যাবে এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস উচ্চ আদালতে তারা সবাই প্রতিকার পাবে।’  এদিকে দীর্ঘ এক যুগ পর চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষণা হলেও আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন নিহতের সহকর্মী, খুলনার সাংবাদিক নেতা ও পরিবারের স্বজনরা। তাদের আশা ছিল, দোষীদের মিলবে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি। আদালতে আসা মানিক সাহার ছোট ভাই প্রদীপ সাহা রায়ের বিষয়ে মতামত প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা সন্তুষ্ট নই।

মামলায় প্রথম থেকেই চার্জশিটে মদদদাতা, অর্থদাতাদের নাম আসেনি। যে কারণে তারা পার পেয়ে গেছে।’ ভাইয়ের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি হবে— এমনটাই আশা করেছিলেন তিনি। তবে মানিক সাহার স্ত্রী নন্দা সাহা, মেয়ে নাতাশা ও পর্শিয়া সাংবাদিকদের সামনে রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হননি। খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এস এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘রায়ে আমরা কেউ খুশি নই। মামলার রায়ে কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি। বিস্ফোরক অংশের মামলায় সবাইকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি উচ্চ আদালতে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে।’ উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি খুলনা প্রেসক্লাবের অদূরে ছোট মির্জাপুরে প্রবেশমুখের রাস্তায় দুষ্কৃতকারীদের বোমা হামলায় নিহত হন মানিক চন্দ্র সাহা। তিনি খুলনা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি, দৈনিক সংবাদ ও একুশে টেলিভিশনের খুলনা ব্যুরো প্রধান, বিবিসি বাংলা বিভাগের কন্ট্রিবিউটর ছিলেন। এ ছাড়া মরণোত্তর একুশে পদক পান তিনি।

সর্বশেষ খবর