বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ রপ্তানি করছে চাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ রপ্তানি করছে চাল

দীর্ঘদিন দেশে চালের সংকট ছিল। এমনকি ১৯৭৪ সালে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ তৈরি হয়েছিল। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর এখন আর সেই সংকট নেই। এখন বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। শুধু তাই নয়, চাল এখন রপ্তানিও করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গত কয়েক বছরে  দেশের মানুষকে খাওয়ানোর জন্য একটি চালও আমদানি করেনি সরকার। এখন সুযোগ তৈরি হয়েছে খাদ্য রপ্তানির  দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের। সর্বশেষ গত ২৮ নভেম্বরের তথ্য অনুযায়ী দেশে খাদ্যশস্যের মোট মজুদ ৬ দশমিক ৯৬ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চাল ৪ দশমিক ৫৭ লাখ মেট্রিক টন এবং গম ২ দশমিক ৩৯ লাখ মেট্রিক টন। কেবল উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, হেক্টর প্রতি ধান উৎপাদনের দিক  থেকেও অধিকাংশ দেশকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। সূত্রমতে, বাংলাদেশের চাল নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে ইরাক, মিসর, মালদ্বীপ, নাইজেরিয়া, মরক্কো, সাউথ আফ্রিকাসহ  বেশ কয়েকটি দেশ। ইতিমধ্যে ইরাকের রাষ্ট্রদূত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে চাল নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। রপ্তানির বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে ইতিমধ্যে সরকারি উদ্যোগে খাদ্যশস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে গুণগতমানের পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগ্রহী ক্রেতা দেশের পাশাপাশি নতুন দেশও খোঁজা হচ্ছে। আগ্রহী দেশগুলোয় চালের নমুনা পাঠানোর চিন্তা করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। দরদামে পোষালে বিশ্ববাজারে ২ লাখ টন মোটা চাল রপ্তানি করার একটি পরিকল্পনাও আছে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে।এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চাল রপ্তানির জন্য আমরা চেষ্টা করছি। ইরাকের রাষ্ট্রদূত ইতিমধ্যে আমাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। ব্যাপক সম্ভাবনাময় খাত এটা। জানা যায়, স্বাধীনতার ঠিক পরে ১৯৭২ সালে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছিল এক কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন। সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য ওই খাদ্য পর্যাপ্ত ছিল না। এর পরের ৪৪ বছরে এখানে মানুষ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি, আর আবাদি জমি কমেছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। অথচ দেশে এখন খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে তিন গুণ বেশি; ভুট্টাসহ এর পরিমাণ এখন পাঁচ কোটি মেট্রিক টনের বেশি।  নেই খাদ্য ঘাটতিও। অন্যদিকে শুধু চাল নয়, খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য রেকর্ড ছুঁয়েছে। ইতিমধ্যে চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ রোপা আমন উৎপাদনের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১০১ শতাংশ বেশি উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। প্রায় প্রতিটি খাদ্যশস্য উৎপাদনেই রেকর্ড করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ফল ও মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হার বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশের  চেয়ে বেশি। প্রতিদিনই বাড়ছে সবজির উৎপাদন। জাতীয় পরিসংখ্যান বলছে, কৃষি খাতে জিডিপির অবদান প্রায় ২১ শতাংশ, কৃষি শ্রমে ৪৮ শতাংশ আর কৃষির সাব- সেক্টরসহ এ অবদান ৫৬ শতাংশ।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশের ছয়টি কৃষিপণ্য দুই বছর আগেই রেকর্ড গড়তে সক্ষম হয়েছে। চাল, গম, ভুট্টা, আলু, পাট এবং পিয়াজ মিলিয়ে উৎপাদন তখনই ৫ কোটি টন ছাড়িয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ ছয়টি প্রধান ফসলের মোট উৎপাদন ছিল ৪ কোটি ৯৪ লাখ ৬৯ হাজার ৭৩২ টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রাথমিক হিসাবে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ কোটি ৬ লাখ ৫০ হাজার ২১৫ টন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ছয়টি ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ১১ লাখ ৮০ হাজার ৪৮৩ টন। এর মধ্যে চাল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৮৬৭ টন, গম ৪৪ হাজার ৯২৮ টন, পাট ১১ হাজার ৭৬১ টন, ভুট্টা ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪২৮ টন, পিয়াজ ৩ লাখ ১৭ হাজার ২৩৮ টন এবং আলুর উৎপাদন বেড়েছে ৩ লাখ ৪ হাজার ২৬১ টন।

সর্বশেষ খবর