বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে ১০ হাজার রোহিঙ্গা : জাতিসংঘ

প্রতিদিন ডেস্ক

বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে ১০ হাজার রোহিঙ্গা : জাতিসংঘ

মিয়ানমার থেকে অন্তত ১০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন বলে দাবি করছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা। ব্যাংককে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) মুখপাত্র ভিভিয়ান ট্যান বলেছেন, সেখানকার পরিস্থিতি খুবই অনিশ্চিত এবং পালিয়ে আসা শরণার্থীর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। তিনি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, বিভিন্ন মানবিক ত্রাণ সংস্থার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা অনুমান করছেন অন্তত ১০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রাখাইন  প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে দমন অভিযান চালাচ্ছে, এতে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। এদিকে, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে মিয়ানমারে এসেছেন। কিন্তু তাকে রাখাইন প্রদেশে যেতে দেওয়া হবে কিনা, স্পষ্ট নয়। অন্যদিকে, মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী যেভাবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে, জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা এর আগে তাকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযানের’ সঙ্গে তুলনা করেন। মিয়ানমার সরকার অবশ্য এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেছে, তারা কেবল রোহিঙ্গা জঙ্গিদের দমনে অভিযান চালাচ্ছে। আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, টেকনাফ ও উখিয়ায় খাদ্য ও শীতবস্ত্র সংকটে সহস্রাধিক অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা শিশু চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। প্রতি রাতেই দলে দলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা উখিয়ার কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প, টেকনাফের শামলাপুর অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছাড়াও সমুদ্র উপকূলবর্তী ঝাউবাগান, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, কক্সবাজার, মহেশখালী, উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছেন। রোহিঙ্গাদের মধ্যে বেশির ভাগই স্বামী ও স্বজনহারা নারী এবং শিশু। এদের নেই খাবার ব্যবস্থা, শীতবস্ত্র ও পোশাক। শীতবস্ত্রের অভাবে ও খাদ্য সংকটে শত শত শিশু ঠাণ্ডাজনিতসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শতাধিক রোহিঙ্গাকে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।

লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে এবং অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। মিডিয়াসহ সবার নজর কাড়ছে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে (স্থানীয় ভাষায় টাল) অনুপ্রবেশকারী মা-বাবা হারা দুই পরিবারের ১১ এতিম শিশু। এসব শিশু ক্যাম্পের ‘এ’ ব্লকে মো. কবিরের আশ্রয়ে রয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় মিয়ানমার বাহিনীর অত্যাচারের লোমহর্ষক ঘটনা। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা জানান, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের উত্তর জামবইন্যা মুসলমান অধ্যুষিত গ্রামে মিয়ানমার বাহিনী অভিযান চালিয়ে দুই শতাধিক বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। অনেককে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মহিলাদের ধর্ষণসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এ অভিযানে মিয়ানমার সেনাদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন সৈয়দ আহমদ (৪০), তার দুই পুত্র মো. আইয়ুব (২৩), আবদুশ শুক্কুর (২০), সৈয়দ আহমদের স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৩৮), মো. আইয়ুবের স্ত্রী রাজিয়া বেগম (২০)। আবদুশ শুক্কুরের স্ত্রী মুহসেনা (২০) ধর্ষণের শিকার হন। এ দুই পরিবারে রয়েছে ১১ শিশু। এরা হচ্ছে জান্নাত আরা (১৫), হাসিনা (১১), রাশিদা বেগম (৯), মো. আইয়ুব (৭), জাহেদুর রহমান (৪), ইয়াসমিন (২), সুফাইরা (১১), সুহাইদ (৯), রিদুয়ান (৭), মো. আনাস (৫), আবদুর রহমান (২)। সৈয়দ আহমদের পুত্র খাইর মোহাম্মদ (২৭) সেনা অভিযান চলাকালে পাশের গ্রামে থাকায় হামলার শিকার হননি। খাইর মোহাম্মদই মা-বাবা হারা ১১ এতিম শিশু ও স্বামীহারা ধর্ষিতা মুহসেনা এবং স্ত্রী রেহানা বেগম (২৫) ও চার শিশু সন্তান শহীদ নুর (৮), আনেসা বিবি (৬), মো. এহসান (৪), মিনা আক্তারকে (২) নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং তুলাতলী ঘাট দিয়ে গভীর রাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন। তাদের সঙ্গে রয়েছে স্বজনহারা আরেক নির্যাতিত পরিবার। খাইর মোহাম্মদ বলেন, ‘মা-বাবা হারালেও অসহায় ১১ শিশুর ভবিষ্যৎ চিন্তা করে এবং নিজেদের বাঁচার তাগিদে এখানে চলে এসেছি। বাংলাদেশে এসে খাবার, থাকা, পোশাক ও শীতবস্ত্রের অভাব থাকলেও স্বস্তিবোধ করছি। এখানে অন্তত জীবনটা বাঁচাতে পারব।’ লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান হাফেজ মো. আইয়ুব জানান, মিয়ানমার সেনার বর্বরতায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। প্রায় দুই মাস ধরে রাত-দিন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু ঢুকছে। নুর বেগম ক্যাম্পের ‘এ’ ব্লকের একটি বাসায় আশ্রয়ে রয়েছেন। বাসার মালিক জুলেখা বেগম বলেন, ‘ক্যাম্পের বাইরে পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে ব্রিক ফিল্ডের পাশে শিশুসহ এক মহিলাকে দেখে মানবিক কারণে এনে আশ্রয় দিয়েছি।’

সর্বশেষ খবর