শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রাখে আল্লাহ মারে কে?

নেতা-কর্মীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী

রফিকুল ইসলাম রনি

রাখে আল্লাহ মারে কে?

শেখ হাসিনা

আমি বোনাস লাইফে আছি। আমাকে একবার নয়, দুবার নয়, ১৯ বার হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। মৃত্যুকে পরোয়া করি না। জীবন দেওয়ার মালিক আল্লাহ। জীবন নেওয়ার মালিকও আল্লাহ। রাখে আল্লাহ  মারে কে? কথাগুলো বলেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চার দিনের হাঙ্গেরি সফর শেষে বুধবার রাতে দেশে ফিরে গণভবনে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমি জীবনের মায়া করি না। আল্লাহ যতদিন আমাকে দিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করাবেন, ততদিন আমি করে যাব। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহারা খাতুন ও লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানসহ কয়েকজন দলীয় নেতা, সামরিক ও বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। গত রবিবার হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তুর্কমেনিস্তানে জরুরি অবতরণ করে। আর মাত্র ১৫ মিনিট বিমানটি আকাশে উড়লে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত বলে জানা গেছে। 

দলীয় সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জে আসার পর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, নেত্রী, বিমানের ওই ঘটনা শোনার পর আমরা খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম। তাত্ক্ষণিক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। একই সঙ্গে দায়িত্বে অবহেলার জন্য প্রাথমিকভাবে দায়ী ছয়জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরাও (সংসদীয় কমিটি) তদন্ত করছি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও করছে। এটা কোনো ষড়যন্ত্র হোক আর দুর্ঘটনাই হোক, দ্রুতগতিতে তদন্ত চলছে। এ সময় দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহারা খাতুন আপ্লুত হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মৃত্যুকে ভয় করি না। যতবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি, আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে এনেছেন। আমার ওপর আল্লাহর বিশেষ রহমত আছে। একটা কথা মনে রাখবেন, রাখে আল্লাহ মারে কে? তিনি যতদিন হায়াত দিয়েছেন, ততদিন দেশের জন্য কাজ করব। এরপর বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি গণভবনে যান। আগে থেকেই সেখানে দলীয় কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। গণভবনে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবেশ করেন, তখন উপস্থিত নেতা-কর্মীরা তাকে সালাম দেন। কুশল বিনিময়ের এক ফাঁকে দুজন কেন্দ্রীয় নেতা বিমানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন। তারা বলেন, নেত্রী, এটা নিছক কোনো ঘটনা নয়। রীতিমতো ষড়যন্ত্র। এ ঘটনার জন্য বিমানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করতে হবে। তবে বিমানমন্ত্রীকে নিয়ে নেতা-কর্মীদের দাবি আমলে নেননি প্রধানমন্ত্রী। এ সময় কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন বলে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান।

বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হবে না : বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে অন্য কোনো দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর  গোপালকৃষ্ণ প্রভু পারিকর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দেখা করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন। দুই দিনের সফর শেষে গতকালই ঢাকা ত্যাগ করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সহায়তার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর যেসব সদস্য জীবন দিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর পরবর্তী ভারত সফরের সময় তাদের সম্মান জানানো হবে। সম্প্রতি ভারতের কোস্টগার্ড বাংলাদেশি জেলেদের সাগর থেকে উদ্ধার করে দেশে ফেরত পাঠানোর ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশের কোস্টগার্ডের সক্ষমতা আরও বাড়াতে প্রশিক্ষণ সহযোগিতার প্রস্তাব দেন। মনোহর পারিকর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহফুজুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে ওই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর