শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন

আশরাফের দোয়া, আকরাম রাব্বী আনোয়ার সমস্যা

গালাগাল শুনেও নৌকার পক্ষেই থাকব : শামীম

নিজস্ব প্রতিবেদক

আশরাফের দোয়া, আকরাম রাব্বী আনোয়ার সমস্যা

আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের দোয়া নিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি গতকাল সকালে সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে তার হেয়ার রোডের বাসভবনে দেখা করেন। আধঘণ্টার বৈঠকে সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে আইভীর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার কৌশল নিয়ে কথা হয়। এ সময় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের দোয়া চেয়ে আইভী বলেন, ‘আমি যখন পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হই, আপনি তখন নির্বাচনের প্রচারণায় গিয়ে তিন দিন ছিলেন। নির্বাচনী মাঠে থেকে আপনি আমাকে বিজয়ী করে এনেছেন। আমি আপনার দোয়া নিতে এসেছি।’ জবাবে আশরাফ বলেন, ‘তুমি এগিয়ে যাও, দল তোমার পাশে আছে।’

তিন নিয়ে সমস্যা : বিগত নাসিক নির্বাচনে এস এম আকরাম হোসেন, রফিউর রাব্বী ও আনোয়ার হোসেন ছিলেন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর প্রধান হাতিয়ার। সেই নির্বাচনে আইভী ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। এবারের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের অনুগত প্রার্থী। দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন। যে তিনজনকে সামনে রেখে বিগত নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন সেই তিনজনকে নিয়েই এবার সমস্যায় আইভী। কারণ তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এস এম আকরাম হোসেন দল ছেড়ে মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যে যোগ দিয়েছেন। তাই তাকে নৌকার পক্ষে কাজে লাগাতে পারবেন না। ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি ওই সময়টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নারায়ণগঞ্জ শাখার আহ্বায়ক। এই সংগঠনটি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রবিরোধী কর্মসূচি পালন করছে এবং সরকারবিরোধী নানা ধরনের কথা বলছে। বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছেন না স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। রাব্বীকে সঙ্গে নিয়েই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। এতে দলীয় নেতা-কর্মীদের ভুরু কুঁচকে রয়েছে। আইভীর অন্যতম ভরসা ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন। তিনি ছিলেন আইভীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান। আনোয়ার এবার মেয়র পদে মনোনয়ন চেয়েছিলেন, পাননি। সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত আনোয়ার হোসেন আইভীর পক্ষে মাঠে নামেননি।

নারায়ণগঞ্জ সিটিতে গুঞ্জন : আইভীর একদার ‘তিন ভরসা’ এখন ‘ তিন সমস্যা’ হয়ে উঠেছে।

দলীয় সূত্রমতে, দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে মাঠে নামানোসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে নাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে। কারণ সর্বশেষ এক বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জের প্রয়াত জনপ্রিয় নেতা এ কে এম শামসুজ্জোহাকে নিয়ে আইভীর নেতিবাচক মন্তব্য মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। তবে নেতা-কর্মীদের শান্ত থেকে দলের স্বার্থে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি এ কে এম শামীম ওসমান। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার অভিভাবক-আমার নেত্রী-আমার মা জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন আমি তার পক্ষেই কাজ করব। আইভী আমার প্রয়াত বাবাকে নিয়ে যতই গালাগাল করুক, আমি দলের স্বার্থে-নেত্রীর নির্দেশে নৌকার পক্ষে কাজ করব।’ তিনি বলেন, ‘সে ডাকুক বা না ডাকুক আমি দল করি, দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করবই।’ স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, সম্প্রতি গণভবনে শামীম ও আইভীকে মিলিয়ে দেওয়ার পর জেলা আওয়ামী লীগের একটি ঐক্যের সৃষ্টি হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল আইভীকে প্রয়োজনে বিরোধীদের ঘরেও যেতে হবে। কিন্তু তিনি সে রকম কোনো উদ্যোগ নেননি। কয়েক দিন পর আইভী আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে বক্তব্য দেন, ‘শামীম ওসমান থাকলে ভালো, না থাকলে আরও ভালো।’ এমনকি সেদিন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর নারায়ণগঞ্জের গণমানুষের নেতা প্রয়াত শামসুজ্জোহা ওসমানকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। জেলা দলীয় সূত্রমতে, কয়েক দিন আগেও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়, তারা আইভীর পক্ষে কাজ করবে। কিন্তু আইভীর একের পর এক বিরূপ মন্তব্যে এখন ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।

গত কয়েক দিনে দেখা গেছে, আইভী নাসিকের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জনতার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন কিন্তু সেখানে দলের কোনো শীর্ষ নেতা নেই। মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলকেও দেখা যাচ্ছে না। নেই ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারাও।

এদিকে গতকাল সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। সবাই এক আছে, এক থাকবে। উন্নয়নের স্বার্থে আমি সব সময় নিরপেক্ষ ছিলাম। উন্নয়নের জন্যই নিরলস কাজ করে গেছি। আমার এ উন্নয়নকৃত রাস্তাঘাট আওয়ামী লীগ-বিএনপি সবাই ব্যবহার করছে। অতএব আমি বিশ্বাস করি, দলমতনির্বিশেষে সবাই নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করবেন।’

সর্বশেষ খবর