শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন

আলোচনায় সাখাওয়াত, থাকবেন না বর্জন

সাবেক দুই এমপি ব্যস্ত ছেলেদের নিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক ও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

আলোচনায় সাখাওয়াত, থাকবেন না বর্জন

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের শেষ পর্যন্ত থাকা না থাকা নিয়ে বিএনপিতে রয়েছে নানা আলোচনা। সর্বশেষ তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ভালো না থাকায় দলের ভিতরে-বাইরে এ নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক। নেতা-কর্মীরা এও বলছেন, বর্জনের সংস্কৃতি থেকে বিএনপিকে বেরিয়ে আসতে হবে। যত কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে টিকে থাকলে ফলাফল ধানের শীষের পক্ষেই আসবে। এ দিকে প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী মনে করছেন, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে না। তাই অনেকটা বিনা বাধায় তিনি জয়ী হবেন। এ কারণে দলের নেতা-কর্মীরা মাঠে কাজ করুক আর না করুক, তাতে কোনো সমস্যা দেখছেন না তিনি। সর্বশেষ একসঙ্গে হওয়া ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যেই ভোট ডাকাতির অভিযোগ এনে সরে দাঁড়ায় বিএনপি। এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের আগের রাতে বর্জন করে দলটি। এ নিয়ে নির্বাচনের সাত ঘণ্টা আগে দলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার সংবাদ সম্মেলনে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। একই অবস্থা হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে দলের প্রার্থী এম মনজুরুল আলমের ক্ষেত্রেও। অনেকটা রাগে-ক্ষোভে অভিমানে শেষ পর্যন্ত বিএনপি থেকেও সরে দাঁড়ান চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর এক সময়ের শিষ্য মনজুর আলম। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনেও অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের কি একই পরিণতি ভোগ করতে হয় কি না—তা নিয়ে বিএনপির ভিতরে-বাইরে নানা সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্যই আমরা অংশগ্রহণ করছি। তবে বিগত সর্বশেষ তিন সিটির মতো যদি আগের রাতেই ভোটকেন্দ্র দখল করে সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে সিল মারার মহোৎসব হয়, তাহলে ওই নির্বাচনে থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তখন বর্জন করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা থাকবে না। সুষ্ঠু ভোট হলে আমরা কেন সরে দাঁড়াব।’

সাবেক দুই এমপি ব্যস্ত ছেলেদের নিয়ে : বিএনপির সাবেক দুই এমপির ছেলেই কাউন্সিলর প্রার্থী। এদের মধ্যে শহরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালামের পুত্র আবুল কাউছার আশা। সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ সাদরিল সিদ্ধিরগঞ্জের ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। তাই ধানের শীষের মেয়র পদপ্রার্থীর চেয়ে দুই ছেলেকে বিজয়ী করাই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে তাদের কাছে। দুজনই সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে অনীহা প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে।

মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, ভবিষ্যতে নিজেদের এমপি হওয়ার পাশাপাশি ছেলেদের কাউন্সিলর পদে বিজয়ী করানোই তাদের লক্ষ্য। মেয়র কে হলো না হলো—তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। দলীয় নেতা-সমর্থকদের ধারণা আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে গোপন সমঝোতার কারণেই প্রার্থী হননি সাবেক এই দুই এমপি। গিয়াস উদ্দিন সম্পর্কে সেলিনা হায়াৎ আইভীর ভগ্নিপতি ও জেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল কাদিরের উকিল শ্বশুর। জানা গেছে, বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান গত কয়েক দিন ধরে সাবেক ওই দুই এমপির এলাকায় ঘুরে বেড়ালেও দেখা যায়নি তাদের। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে।

আইভী ব্যস্ত শামীম ওসমান দমনে : সাখাওয়াত : এনসিসিতে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান অভিযোগ করেছেন, ‘বিগত দিনে প্রাচ্যের ড্যান্ডি নারায়ণগঞ্জ শহরকে ময়লার শহরে পরিণত করা হয়েছে। শীতলক্ষ্যাকে পরিণত করা হয়েছে ড্রেনে। অযৌক্তিক ভাবে মানুষের ঘাড়ে চাপিয়েছে ট্যাক্সের বোঝা।

সন্ত্রাস-গুম-মাদক নির্মূল ও সামাজিক উন্নয়নে উদাসীন আইভী ছিলেন শুধু শামীম ওসমান দমনে ব্যস্ত।’

বিএনপির মামলায় জর্জরিত নেতাদের ব্যক্তিগত বিভেদ ভুলে দলীয় সাংগঠনিক কাঠামোকে গতিশীল করার জন্যও আহ্বান রাখেন সাখাওয়াত। তিনি বলেন, ‘সমাজ থেকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং নির্যাতন দূর করে স্বয়ংসম্পূর্ণ, উন্নত ও আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়ে তোলার জন্য ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে জনগণের সমর্থন চাইছি।’ গতকাল সকালে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে পরিবহন বহুমুখী সমবায় সমিতি কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে সাখাওয়াত এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নগর বিএনপির সেক্রেটারি এ টি এম কামাল, নারায়ণগঞ্জ মিনিবাস সমবায় সমিতির সভাপতি ফারুক হোসেন, সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন খোকা, মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহেদ আহম্মেদ, জেলা গার্মেন্ট শ্রমিক দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নূর মোহম্মদ, বিএনপি নেতা আবু আল ইউসুফ খান টিপু, মিঠু, সুজন প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর