শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
রয়টার্সের প্রতিবেদন

আইএসের অনুমোদন নিয়েই গুলশান হামলা

প্রতিদিন ডেস্ক

গুলশানের হলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পরিকল্পনায় আইএসের (ইসলামিক স্টেট) অনুমোদন নিয়েছিলেন হামলার মূল হোতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরী। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক বিশেষ প্রতিবেদনে দাবি করেছে, পরিকল্পনায় আইএসের অনুমোদন পাওয়ার পর তামিম গুলশানে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

বাংলাদেশ পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স এ তথ্য দিয়েছে। তবে ওই পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। বলা হয়েছে, তার দেওয়া তথ্যগুলো ‘স্পর্শকাতর’ বলে পরিচয় প্রকাশ না করার অঙ্গীকার ছিল। ফলে তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। রয়টার্স জানিয়েছে, তথ্যগুলো তারাও স্বাধীনভাবে পর্যালোচনা করে দেখেনি। বাংলাদেশ পুলিশের বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবু তারেক মোহাম্মদ তাজুদ্দীন কাওসার নামে এক আইএস নেতার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তামিমের। সেই আবু তারেক তাকে বেশি করে বিদেশি সদস্য জোগাড় করার তাগিদ দিতেন। রয়টার্সের দাবি অনুযায়ী, যে পুলিশ কর্তকর্তা তাদের এ তথ্য দিয়েছেন, তামিম ও আবু তারেক দুজনের যোগাযোগের প্রত্যক্ষদর্শী তিনি। ওই পুলিশ কর্মকর্তার বরাতে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তামিম আর আবু তারেকের যোগাযোগ থাকা অবস্থায় তাদের মধ্যে গুলশান হামলা সম্পর্কে একটি প্রবন্ধের খসড়াও তাদের আলোচ্য প্রসঙ্গের মধ্যে ছিল। পরে তা ইসলামিক স্টেটের কথিত ম্যাগাজিনে প্রকাশ করা হয়। গুলশান হামলার পরিকল্পনা শেষে তামিম আইএসের বিশেষজ্ঞদের হলি আর্টিজানে পাঠাতে বলেন। হামলার আগে সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের পাঠানোর প্রস্তাব করেন তামিম। ১ জুলাই গুলশানের ওই ক্যাফেতে আইএসের নামে হামলা চালানো হয়। এতে ২২ জন নিহত হন, যাদের বেশির ভাগই বিদেশি।

উল্লেখ্য, পুলিশের দাবি অনুযায়ী নব্য জেএমবির সামরিক কমান্ডার তামিমের পরিকল্পনাতেই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিত জঙ্গি হামলা করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর তামিম দুবাই হয়ে ঢাকায় আসার পর আত্মগোপনে থেকে জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় সিটিটিসির এক অভিযানে দুই সহযোগীসহ নিহত হন এই তামিম চৌধুরী। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটি) একটি সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় তামিম নিহত হওয়ার পর তার চেহারা দেখে প্রাথমিকভাবে তাকে তামিম চৌধুরী বলে শনাক্ত করা হয়। পরে শরীর থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে কানাডা পুলিশের কাছে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য পাঠানো হয়। ৮ নভেম্বর কানাডা পুলিশের পক্ষ থেকে তামিমের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয় সিটি ইউনিটে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নব্য জেএমবির মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরী ঢাকায় বসে আইএসের কাছে টুইটারে বার্তা পাঠাতেন। এমনকি গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার টুইট বার্তা ও নিহতদের ছবিও আইএসের কাছে পাঠিয়েছিলেন তামিম। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটি) অনুসন্ধানে তখন এসব তথ্য মেলে। সিটিটিসি সূত্র তখন আরও জানিয়েছিল, গুলশান হামলার আগে আইএসের পক্ষ থেকে প্রায় ৫০টি হামলার দায় স্বীকার করা হয়। প্রতিটি বার্তা তামিম চৌধুরী টুইটারে লিখে পাঠাতেন। আইএসের প্রতিনিধির কাছে পাঠানোর পর সেসব বার্তা প্রকাশ করা হতো আইএসের কথিত আমাক এজেন্সির মাধ্যমে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, তামিমের ল্যাপটপ থেকে উদ্ধার করা বার্তাগুলোর সঙ্গে আমাক এজেন্সির দায় স্বীকার করা বার্তাগুলোর মিল আছে। ঢাকায় বসেই তামিম এসব বার্তা পাঠাতেন। সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা সে সময় জানান, কানাডায় তামিমের পরিবারের সদস্যরা উইন্সসরে থাকেন। তার পৈতৃক নিবাস সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের বড়গ্রামে। তার দাদার নাম আবদুল মজিদ চৌধুরী। তামিমের বাবা শফি আহমেদ জাহাজে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই তিনি পরিবার নিয়ে কানাডায় পাড়ি জমান। তামিমের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সেখানেই।

সর্বশেষ খবর