শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন

কাউন্সিলর প্রার্থীদের সম্পদের পাহাড়

অধিকাংশের শিক্ষা অষ্টম শ্রেণীর নিচে

গোলাম রাব্বানী ও রফিকুল ইসলাম রনি

হাজী আনোয়ার ইসলাম। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে ১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী। নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় নিজেকে ‘ব্যবসায়ী’ উল্লেখ করেছেন। দেখিয়েছেন প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্পদ। কৃষিজমি (হাওর) দেখিয়েছেন সাড়ে ৪ একর। অকৃষি জমি রয়েছে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার। রয়েছে তিন তলার দুটি বিল্ডিং। নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে দেনা প্রায় ৮৩ লাখ টাকা। নিজের নামে ঋণ ১০ লাখ টাকা। হলফনামায় নিজেকে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন দাবি করেছেন এই প্রার্থী। ২২ ডিসেম্বর নাসিক নির্বাচনে আট মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি ২৭ ওয়ার্ডে লড়ছেন ১৬৬ সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী। শুধু আনোয়ার ইসলাম নন, কাউন্সিলর প্রার্থীর বড় একটি অংশেরই রয়েছে সম্পদের পাহাড়। এদের অনেকেই এখনো কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আবার প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থক হওয়ায় রাজনৈতিক সুবিধাও পেয়েছেন তারা। তবে কাউন্সিলর প্রার্থীর বেশির ভাগই নিম্নমাধ্যমিকের গণ্ডি পার হননি। এর মধ্যে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্নই বেশি। পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছেন এমন সংখ্যাও কম নয়। প্রায় সবার পেশা ব্যবসা। মুদি দোকানদারও প্রার্থী হয়েছেন। হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কাউন্সিলর পদটি গুরুত্বহীন ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন করে রাখায় যোগ্য প্রতিনিধিরা আসছেন না। মেয়র পদে শিক্ষিত লোক এলেও কাউন্সিলর পদে সেই অর্থে আসছেন না। অনেকটা মস্তাননির্ভর প্রতিনিধি আসছেন। এর আগেও নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলর প্রার্থীর অর্ধেকই ছিলেন এসএসসি পাসের নিচে। কাউন্সিলর পদও অনেকটা দলীয়করণের ফলে প্রকৃত সমাজসেবীরা আসছেন না।’

৫ নম্বর ওয়ার্ডে আট প্রার্থীর মধ্যে স্বশিক্ষিত গোলাম মো. সাদরিল ও ইসমাইল হোসেন। আনিসুর রহমান অষ্টম শ্রেণি পাস। গোলাম মো. সাদরিল ব্যবসায়ী। স্বশিক্ষিত হলেও শেয়ারবাজারে তার বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। তার বিরুদ্ধে নয়টি ফৌজদারি মামলার খড়্গ ঝুলছে। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ রয়েছে ৬ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে ৩৫ ভরি সোনা ও নগদ রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে তার একটি পাঁচ তলা ভবন রয়েছে। হলফনামায় ধারদেনা দেখিয়েছেন ২২ লাখ টাকা।

একই ওয়ার্ডে সাদরিলের ভাই গোলাম মো. কায়সারও কাউন্সিলর প্রার্থী। হলফনামায় বিবিএ পাস উল্লেখ করেছেন। তারও শেয়ারবাজারে প্রায় আড়াই কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে ৩০ ভরি সোনা ও স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে পাঁচ তলা একটি ভবন। ধারদেনা দেখিয়েছেন প্রায় দেড় কোটি টাকা।

হাজী ইউনুস মিয়া। ১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী। হলফনামায় নিজেকে ব্যবসায়ী উল্লেখ করেছেন। স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দেখিয়েছেন প্রায় অর্ধ কোটি টাকার। রয়েছে চার তলার একটি বাড়ি। ২০ শতাংশ অকৃষি জমি। যৌথ মালিকানায় ৬ শতাংশের দোতলা বাড়ি। ঋণের পরিমাণ ৩৫ লাখ টাকা। শিক্ষাগত যোগ্যতায় দেখিয়েছেন পঞ্চম শ্রেণি পাস।

২ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আবদুল হাকিম। ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। তার সম্পদ রয়েছে ২৫ লাখ টাকার। সোনা প্রায় ৭২ কেজি। রয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশের ওপর একটি বাড়ি ও যৌথ মালিকানায় তিন তলা বিল্ডিং।

একই ওয়ার্ডের মো. ইকবাল হোসেন পেশায় ব্যবসায়ী। ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় ২২ লাখ টাকা দেখিয়েছেন। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ আড়াই লাখ টাকা, একটি প্রাইভেট কার ও ২০ ভরি সোনা এবং যৌথ মালিকানায় ৩০ শতাংশের ওপর একটি বাড়ি। নিজেকে ৭০ লাখ টাকার ঋণগ্রস্ত দেখিয়েছেন।

২ নম্বর ওয়ার্ডের সোহরাব হোসেন। ব্যবসায়ী এই প্রার্থীর সাড়ে ২৪ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। আছে দুটি মোটর গাড়ি, স্ত্রীর নামে ২০ ভরি সোনা, অকৃষি জমি ৩১ শতাংশ, নিজের নামে দুটি দোকান ও দুটি বাড়ি। ঋণ রয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।

একই ওয়ার্ডের সেলিনা ইসলাম। কাউন্সিলর প্রার্থী। এসএসসি পাস এই গৃহিণীর বার্ষিক আয় ৫ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদ প্রায় ৩৬ লাখ টাকা। যৌথ মালিকানায় ছয় তলা একটি, সাড়ে ১৮ শতাংশের ওপর আরেকটি বাড়ি এবং ৭৪ শতাংশ অকৃষি জমি ও নিজের ১১২ ভরি সোনা রয়েছে।

১ নম্বর ওয়ার্ডে আট সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীর কেউই নিম্নমাধ্যমিকের গণ্ডি পার হননি। এর মধ্যে চারজনই অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। তারা হলেন আনোয়ার ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, রওশন আলী ও আবদুর রহীম। পঞ্চম শ্রেণি পাস হাজী ইউনুস মিয়া। অষ্টম শ্রেণি পাস ওমর ফারুক, কামাল হোসেন খন্দকার ও জাহিদুল ইসলাম।

২ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী নয়জন। হলফনামায় স্বশিক্ষিত ও অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন মো. ইসমাইল, মো. আবদুল হাকিম ও সোহরাব হোসেন। অষ্টম শ্রেণি পাস হাজী আবদুর রহীম মিয়া, হাজী সুমন কাজী ও মো. ইকবাল হোসেন।

৩ নম্বর ওয়ার্ডে তিন কাউন্সিলর প্রার্থীর দুজন স্বশিক্ষিত। তারা হলেন আলমগীর হোসেন ও তোফায়েল হোসেন। শাহজালাল মাধ্যমিক পাস। পেশায় ব্যবসায়ী এই প্রার্থীর বার্ষিক আয় ৯ লাখ টাকার বেশি। তার স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে ৩০ ভরি। দালানসহ ২৮ শতাংশ জমি। তিনি প্রায় ২৯ লাখ টাকা ঋণ দেখিয়েছেন।

৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী নয়জন। এর মধ্যে চারজন স্বশিক্ষিত ও স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। তারা হলেন নাজমুল হক, লোকমান হোসেন, সালামত মো. সাইফুল্লাহ ও মো. সোহেল রানা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর