শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

যুদ্ধাপরাধের তদন্ত জামায়াতের আমির মকবুলের বিরুদ্ধে

আহমেদ আল আমীন

যুদ্ধাপরাধের তদন্ত জামায়াতের আমির মকবুলের বিরুদ্ধে

এবার জামায়াতে ইসলামীর নতুন আমির মকবুল আহমাদের পালা। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে এখন অনুসন্ধান চালাচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ইতিমধ্যে মকবুলের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের জন্য তার এলাকা ফেনীতে সরেজমিন পরিদর্শনও করেছে সংস্থাটি। জেলার রাজাকার তালিকায় তার নাম রয়েছে বলে তদন্ত সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি করেছে। শিগগিরই অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত সংস্থার একটি টিম আবারও ফেনী যাবে। তবে এ বিষয়ে তদন্ত সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত কিছু না জানালেও সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে অপরাধ ও অভিযোগের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পেলে জামায়াতের নয়া আমির মকবুলের বিরুদ্ধেও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হবে। উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক দুই আমিরসহ দলটির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা ইতিমধ্যে আদালতে দণ্ডিত হয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের প্রেক্ষাপটে গত সেপ্টেম্বরে নির্বাচিত হয়ে ১৭ অক্টোবর আমির হিসেবে শপথ নেন মকবুল আহমাদ। এর আগে ছয় বছর তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার জন্ম ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলার পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ওমরাবাদ গ্রামে। সম্প্রতি স্থানীয় গণমাধ্যমে মকবুলের মানবতাবিরোধী অপরাধের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে তদন্ত সংস্থার টনক নড়ে। তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে ফেনীর দাগনভূঁইয়া এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়। তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মকবুলের মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তদন্ত সংস্থা সরেজমিন ফেনী পরিদর্শনে গিয়ে এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে। আমাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাছাড়া জেলার রাজাকার তালিকায়ও তার নাম রয়েছে। এরই মধ্যে তদন্তের অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আরও অনুসন্ধান চলবে। জানা গেছে, সম্প্রতি অনুসন্ধান কার্যক্রমে গিয়ে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম ফেনীর নানা স্তরের পেশাজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও প্রত্যক্ষদর্শীসহ বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই সময় এ বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তদন্ত সংস্থা। এছাড়া ফেনী জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসসহ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থ, পত্র-পত্রিকা ইত্যাদিও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধান শেষে তদন্ত সংস্থায় প্রতিবেদন দেবে তদন্তকারী টিম। তদন্ত কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম বলেন, মকবুলের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর আমরা তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাই। ইতিমধ্যে ফেনীর দাগনভূঁইয়ায় মকবুলের এলাকায় আমরা অনুসন্ধান চালিয়েছি। অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। তথ্যের গোপনীয়তা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এবং সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিষয়টি মাথায় রেখে এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে চাচ্ছি না। উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলে তখন বিস্তারিত জানানো হবে। এদিকে মকবুলের মানবতাবিরোধী অপরাধে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে ফেনীতে সংঘটিত মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা ও নির্দেশ দান, কারো ঘরবাড়িতে হামলা এবং লুটপাট চালানো ও পুড়িয়ে দেওয়াসহ কোনো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেই মকবুলের সম্পর্ক নেই। তাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হীন উদ্দেশ্যেই এসব বানোয়াট অভিযোগ প্রচার করা হচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত কয়েক বছরে নিজামী ছাড়াও জামায়াতের আরও চার শীর্ষ নেতার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এর বাইরে দলের সাবেক আমির গোলাম আযম ৯০ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে হাসপাতালের প্রিজন সেলে মারা গেছেন।

 

সর্বশেষ খবর