শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নির্বাচন নিয়ে একটি দল একক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন নিয়ে একটি দল একক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না

আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী

নতুন নির্বাচন পদ্ধতি কি হবে, তা কোনো একটি দল বা গোষ্ঠী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অতীত যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়েছিল, সেই ঐকমত্যেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠন করতে হবে। এ বিষয়ে কোনো দল একক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আমি মনে করি, ১৮ কোটি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে এ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য জরুরি।’

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সেরিনায় নিজ কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের  সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী। নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক’ সরকারের রূপরেখায় কি থাকছে, এমন প্রশ্নে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি এখনো আসেনি। ফেব্রুয়ারির মধ্যে যেটা গঠন করতে হবে, সেটাই এখন আলোচ্য বিষয়। যখন নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয় উঠে আসবে, তখন আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করব। তবে এ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া একটি প্রস্তাব দেবেন। তার কাজ চলছে।’ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে বিএনপির ১৩ দফা প্রস্তাব প্রসঙ্গে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন গঠনের রূপরেখা তুলে ধরেছেন। এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। রাষ্ট্রপতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাবনা পাঠানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু এখনো অনুমতি পাইনি। এ নিয়ে সারা দেশেই সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে জনমত রয়েছে। একটি আলোচনায় নিয়ে আসাই আমাদের এখন লক্ষ্য। বিভাগীয় পর্যায়ে এ নিয়ে কাজ চলছে। পরে এটা আরও ব্যাপকভাবে চেষ্টা চালানো হবে।’ বিএনপি প্রধানের প্রস্তাবনায় নির্বাচক কমিশনে কারা আসতে পারে, তাদের নাম প্রস্তাব করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে নামের কোনো প্রশ্ন আসছে না। আমরা সার্চ কমিটি গঠনে একটি গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া তুলে ধরেছি। সংবিধানে নেই, এটা গঠনের প্রক্রিয়া বা যোগ্যতা কি হবে। এতে শুধু বলা আছে, রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিতে পারবেন। যাতে সবার কাছেই এ নিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা সৃষ্টি হয়। যেটা বাংলাদেশে এখনো অনুপস্থিত। সেই পরিবেশ সৃষ্টি হলেই জনগণ মনে করবে, ভোট তাদের নাগরিক অধিকার। তাদের ভোটটা তারা প্রয়োগ করবে। একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার ও সংসদ হবে। এটা মাথায় রেখেই আমরা প্রস্তাব দিচ্ছি।’ শুরু থেকেই বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আন্দোলন করে আসছিল, এখন তারা সেখান থেকে সরে এসে বলছে, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার। এর কারণ কি? এ প্রসঙ্গে বিএনপির নীতি-নির্ধারণী ফোরামের এই সদস্য বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক বা সহায়ক একটি নাম। এতে কি আসে যায়। আমরা যে নামেই ডাকি না কেন, নির্বাচনকালীন সময়ে যে সরকার থাকবে, তারা নিরপেক্ষভাবে নির্বাচনটাকে পরিচালনা করবে। ওই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। এ জন্যই তত্ত্বাবধায়কের ধারণাটি এসেছিল। এটা আওয়ামী লীগেরই দাবি ছিল। ওই দাবির পক্ষে মতৈক্য তৈরি হয়। এরপর সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যুক্ত করা হয়। এখন হঠাৎ করেই অন্য দল বা গোষ্ঠীর মতামত নিচ্ছে না। সরকার প্রস্তাব গ্রহণ না করলে বিএনপি কি করবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা এখনই বলার সময় আসেনি। সরকার আমাদের প্রস্তাবে সাড়া না দিলে পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দেশের জনগণ চায় একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ভোট হোক। এ নিয়ে জনমতের সমস্যা নেই। এটাকে আলোচনায় নিয়ে আসতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ করতে হলে কি কি করতে হবে, তা নিয়েই আমরা প্রস্তাবনা দিয়েছি। এখন সরকারকেই বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।’ নির্বাচন কমিশন গঠনে স্বচ্ছতা থাকলে যার অধীনেই নির্বাচন হোক তা বিএনপি মানবে কি না—এমন প্রশ্নে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি আলাদা। এটা অন্যকিছুর সঙ্গে তুলনা করার সময় এখনো আসেনি। নির্বাচন কমিশনকে কিভাবে শক্তিশালী করা যায়, স্টেকহোল্ডারদের কাছে গ্রহণযোগ্য করা যায়, সেটা মাথায় নিয়েই প্রস্তাবনা দিয়েছি। এ নিয়ে আমরা একটি প্রস্তাব দেব। ওই সরকারের ভূমিকা কি থাকবে, তাদের কাজ কি হবে, তার উল্লেখ থাকবে। এটা সময়মতো দেওয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর