রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জেলা সম্মেলনে অনুমতি মিলছে না বিএনপির

সাড়া নেই স্থান বরাদ্দের আবেদনে কোথাও অনুমোদন মিললেও জুড়ে দেওয়া হয় শর্ত

শফিউল আলম দোলন

জেলা সম্মেলনে অনুমতি মিলছে না বিএনপির

জেলা সম্মেলন করারও অনুমতি পাচ্ছে না বিএনপি। স্থানীয় প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কার কথা বলে সম্মেলনের জন্য স্থান বরাদ্দের আবেদন নাকচ করে দিচ্ছে। কোথাও কোথাও অনুমতি মিললেও নানা শর্ত জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিএনপির পক্ষে জেলা সম্মেলন বা প্রতিনিধি সম্মেলনের আয়োজন করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৩ নভেম্বর ময়মনসিংহ দক্ষিণের সম্মেলনের তারিখ থাকলেও প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় তা স্থগিত করা হয়। এর আগে একই কারণে বাতিল করা হয় ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ও মহানগরের সম্মেলন। অনুমতি না থাকায় ফরিদপুর জেলা বিএনপির ১৪ নভেম্বরের সম্মেলন হতে পারেনি। ফলে আগামীকাল ঢাকার নয়াপল্টনে ভাসানী মিলনায়তনে ফরিদপুর জেলা সম্মেলন করা হচ্ছে। প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় বাতিল করা হয় শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন। একইভাবে খুলনা মহানগরীর কোনো উপজেলা সম্মেলনের জন্য স্থানীয় প্রশাসন অনুমতি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন বিএনপির স্থানীয় নেতারা। কিশোরগঞ্জে নানা শর্তে শহরের বাইরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সম্মেলনের অনুমতি দেওয়া হয়। শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল মাইক ব্যবহার করা যাবে না। একইভাবে তোরণ নির্মাণ করা ও মিছিল করে সম্মেলনে যোগ দেওয়া যাবে না। এ প্রসঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী মাসের মধ্যে অন্তত ৪০টি জেলা সম্মেলন শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। বিএনপির সব কর্মসূচিই হবে শান্তিপূর্ণ। কিন্তু হঠাৎ করে বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অজুহাত দেখিয়ে সম্মেলনের স্থান বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। দু-এক জায়গায় দেওয়া হলেও নানা শর্ত জুড়ে জেলা শহরের বাইরের কোনো স্থানে সম্মেলন করার কথা বলা হচ্ছে। অথচ এসব জায়গায় জেলা সম্মেলন দূরের কথা, উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলন করাও সম্ভব নয়। ময়মনসিংহ (দক্ষিণ) জেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাব আকন্দ জানান, ময়মনসিংহ তারেক স্মৃতি মিলনায়তনে ২৩ নভেম্বরের সম্মেলনের জন্য ১৩ নভেম্বর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করা হয়। এর নয় দিন পর জেলা প্রশাসন চিঠি দিয়ে নিরাপত্তার অজুহাতে তা নাকচ করে দেয়। বিএনপির জেলা সম্মেলনের জন্য অনুমতি না দেওয়া প্রসঙ্গে ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নূরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলটির পক্ষ থেকে অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের ভিতরেই দুই গ্রুপের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব। তারা একে-অন্যকে হুমকিও দিচ্ছিল। এ অবস্থায় নিরাপত্তা ও জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকায় অনুমতি দেওয়া সম্ভব হয়নি। ২৬ নভেম্বর জামালপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন হলেও প্রথমে নিরাপত্তার কথা বলে প্রশাসন অনুমতি দিতে চায়নি। পরে বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ূমের অনুরোধে ১৭ শর্তে অনুমতি দেওয়া হয়। সম্প্রতি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। নানা টালবাহানা করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুমতি দেওয়া হলেও অনেক শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত বিএনপি আর সমাবেশ করেনি।

বিএনপিকে জেলা সম্মেলন করার অনুমতি না দেওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ—টিআইবির অন্যতম ট্রাস্টি এম হাফিজউদ্দিন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে যেহেতু গণতন্ত্র নেই, এমন পরিস্থিতিতে সভা-সমাবেশের অনুমতি না দেওয়াটাই তো স্বাভাবিক। কারণ যে কোনো অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতিতে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এমনটাই হয়ে থাকে। তিনি বলেন, জেলা পর্যায়ে তো পরের কথা, বিএনপির সমাবেশ নিয়ে এ সরকার সম্প্রতি ঢাকায় যা করল, তা একেবারে নজিরবিহীন। নিজেরা ঢাকঢোল পিটিয়ে রাজধানীতে কাউন্সিল করল, অথচ বিএনপিকে ঢাকার কোথাও সমাবেশ করার অনুমতি দিল না। রাজনৈতিক এ অবস্থার উত্তরণে আপাতত কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যে ভয়েস দরকার, তা এখন আর দেশে কারও মুখে শোনা যাচ্ছে না। জাতীয় সংসদে যে বিরোধী দল আছে, সেটি সরকারের গৃহপালিত। তা ছাড়া বিএনপিকে দিয়ে এখন আর কিছু হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ বিএনপির আগের শক্তি নেই।

সর্বশেষ খবর