রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
জেলা পরিষদ নির্বাচন

শর্ত দিয়ে ভোট কেনাবেচা

কেন্দ্রে মোবাইল ফোনে নিষেধাজ্ঞার বাস্তবায়ন চান প্রার্থীরা
খুলনায় বিদ্রোহী প্রার্থীর ওপর হামলার অভিযোগ

গোলাম রাব্বানী

আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে আগেভাগেই শুরু হয়েছে ভোট কেনাবেচা। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ নির্বাচনে প্রভাবশালী

প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ডিজিটাল পদ্ধতির আশ্রয় নিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্দিষ্ট প্রার্থীকে ভোট দান নিশ্চিত করতে সিলমারা ব্যালটের ছবি মোবাইল ফোনে তুলে আনার শর্তে মোটা অংকে কেনা হচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের ভোট। এমন পদ্ধতিতে ভোট কেনাবেচা শুরু হওয়ার খবরে শঙ্কায় রয়েছেন ক্লিন ইমেজের প্রার্থীরা। তারা বলছেন— এ নির্বাচনে অভিনব পদ্ধতিতে ভোট কেনাবেচা হলে প্রভাবশালী প্রার্থীদের কাছে আগেই হেরে যেতে বাধ্য হবেন তারা। প্রার্থীরা বলেছেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার হচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা এবং ভোটার সংখ্যাও কম। আর ভোটারদের কাছে রয়েছে স্মার্ট ফোন। এই ফোন ব্যবহার করে সিলমারা ব্যালটের ছবি খুব সহজেই তোলা সম্ভব। কেননা ভোটদানের গোপন কক্ষে আর কেউ থাকবে না। তাই নির্বাচন কমিশন যদি ভোটকেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি না করে, তাহলে এ পদ্ধতিতে ভোট কেনাবেচা বন্ধ করা যাবে না। এ জন্য ক্লিন ইমেজের প্রার্থীরা ভোটকেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বহু প্রার্থী ভোট কেনাবেচার অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রার্থীকেও কিনে নেওয়া হচ্ছে। যাতে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হলেও একক প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারা যায়। তবে ভোট কেনার চেয়ে প্রার্থী কিনতে টাকা লাগছে বেশি। এই টাকার কোনো হিসাব নেই। যে জেলায় মাত্র দুই-তিনজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, সেখানে প্রার্থী কেনাটাই এখন প্রভাবশালী চেয়ারম্যান প্রার্থীর মূল টার্গেট বলে জানা গেছে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোটকেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আছে। এটি প্রয়োগে বিশেষ ব্যবস্থা নেবে ইসি। এ জন্য একটি বিশেষ পরিপত্রও জারি করা হবে। এর পরেও যদি কেউ ফোন নিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করেন, প্রয়োজনে তার ফোন বাজেয়াপ্তসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (নির্বাচন শাখা) উপ-সচিব ফরদাহ আহমদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভোটকেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহারে ইসির নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবুও যদি কেউ ফোন নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে তা জমা দিয়ে ভোটের ব্যালট নিতে হবে। ইসি এ বিষয়ে কঠোরভাবে দেখবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা বলছেন, স্থানীয় সরকারের অন্য নির্বাচনগুলোর মতো এটিও দলীয় ভিত্তিতে হলে টাকার ছড়াছড়ি কম হতো। এতে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার প্রবণতাও কমত। নির্দলীয় কাঠামোতে নির্বাচন হওয়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ থাকছে না। এ পরিস্থিতিতে কেউ কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাই নির্বাচনে টাকার খেলা হচ্ছে।

জানা যায়, নির্বাচনকে ঘিরে নানা প্রলোভন দেখাচ্ছেন প্রার্থীরা। প্রার্থীর প্রস্তাবক ও সমর্থক হতে প্রথমেই দুজন ভোটারকে টাকা দিয়ে কেনা হচ্ছে। এবার বিজয়ী হতে যত ভোট প্রয়োজন তা হিসাব করেই কেনাবেচা হচ্ছে। ভোটারদের অফার দেওয়া হচ্ছে টিভি-ফ্রিজ, মোটরসাইকেলসহ নানা সামগ্রীর। নারী ভোটারদের ক্ষেত্রে শাড়ি, দেশি-বিদেশি শাল, গহনাসহ নানা আকর্ষণীয় উপহার। এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ নির্বাচনে স্বল্পসংখ্যক ভোটার হওয়ায় অনেক সমস্যা হতে পারে। এমনকি ভোটারকে আটকে রাখারও শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ভোট প্রদানের বিষয়ে অনেক নতুন অভিনব পদ্ধতির কথা শোনা যাচ্ছে। তবে নির্বাচন কমিশন কঠোর ব্যবস্থা নিলে ভোট সুষ্ঠু হবে।

খুলনায় বিদ্রোহী প্রার্থীর ওপর হামলা : নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা জানান, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করায় খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী অজয় সরকারের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজন। গতকাল দুপুরে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, হামলাকারীরা অজয়ের পেটে ছুরিকাঘাত করেন। একই সঙ্গে তার ব্যবহৃত পাজেরো গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করা হয়। অজয় সরকার বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ কয়েক দিন ধরে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিচ্ছিল। তাদের কথা না শোনায় এ হামলা হয়েছে। হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ কর্মী। উল্লেখ্য, গতকাল ছিল খুলনা জেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিন। এদিন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক অজয় সরকার সমর্থকসহ উপস্থিত ছিলেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে অজয় সরকার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর