সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন

প্রতীক নিয়ে মাঠে নামছেন প্রার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক ও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রতীক নিয়ে মাঠে নামছেন প্রার্থীরা

সেলিনা হায়াৎ আইভী - সাখাওয়াত হোসেন

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষ হয়েছে গতকাল। আজ প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পরে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক ও কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্দলীয় প্রতীক নিয়ে  নামবেন। গতকাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে একজন মেয়র প্রার্থী ও ১৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। ইসি সূত্র জানিয়েছে, এ নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন মেয়র পদে ৭, কাউন্সিলর পদে ১৫৬ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৮ জন। এদিকে এলডিপির প্রার্থী কামাল প্রধানকে গতকাল দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি প্রার্থী হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

প্রচারণার ব্যাপক প্রস্তুতি বিএনপি-আওয়ামী লীগের : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আজ প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। একই সঙ্গে প্রার্থীরা আজ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নামতে পারবেন। প্রচারণায় নামতে এখন আর কোনো বাধা নেই। প্রচারণা নিয়ে গতকাল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই প্রার্থীই ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। সকাল থেকে বিএনপি অফিসে দফায় দফায় এ নিয়ে বিএনপি অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বৈঠক করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজকে নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করবেন বলে জানা গেছে।

মাজার জিয়ারত দিয়ে প্রচারণা শুরু করবে বিএনপি : নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কদম রসুল দরগা (মাজার) জিয়ারতের মধ্য দিয়ে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করবেন বিএনপি মেয়র প্রার্থী। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। বিএনপি প্রার্থীর বিষয়ে জানিয়ে নগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল জানান, আজকে প্রতীক পাওয়ার পর আচারণবিধি মেনেই আমাদের প্রার্থী শহরে গণসংযোগ করবেন। এ নিয়ে নেতা-কর্মীরা দফায় দফায় শহরের ২নং রেলগেট বিএনপি কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী এ গণসংযোগে থাকবেন। এ ছাড়া তিনি আরও জানান, নির্বাচন পরিচালনায় ৩টি এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলার তিন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে। শহরের দায়িত্বে জেলা বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, বন্দরের দায়িত্বে সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ও সিদ্ধিরগঞ্জের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিনকে। নাসিকের ২৭টি ওয়ার্ড তিন ভাগে বিভক্ত করে নির্বাচন পরিচালনা করা হবে।

৬নং ওয়ার্ড থেকে আনুষ্ঠানিক গণসংযোগ শুরু করবেন আইভী : আজ ৫ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করবেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। এদিন তিনি সকালে প্রতীক নেওয়ার পর বিকেলে শুরু করবেন আনুষ্ঠানিক প্রচারণার কার্যক্রম। আইভীর মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা জহিরুল ইসলাম জহির গতকাল রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সকাল ১০টায় আইভী নারায়ণগঞ্জ শহরের দুই নং রেলগেটে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সমবেত হবেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডে রিটার্নিং অফিসারের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে প্রতীক নেবেন। এরপর বিকাল ৩টায় তিনি এনসিসি সিদ্ধিরগঞ্জের ৬নং ওয়ার্ড থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করবেন।

পুলিশ-বিজিবি-র‌্যাব-আনসার নিয়ে নিরাপত্তা পরিকল্পনা : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার দিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটের আগে-পরে চার দিনের জন্য মাঠে রাখা হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। এ ছাড়া এ নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারকে ডাকা হয়েছে। তবে নির্বাচনী মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনে সেনাবাহিনীর কর্মপরিকল্পনা রাখা হয়নি। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, এ নির্বাচনে বিএনপির সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবির পর পরিস্থিতি পর্যালোচনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধিও যুক্ত করা হলো। গতকাল আইনশৃঙ্খলা সভার সংশোধিত নোটিসে সংশ্লিষ্টদের উপস্থিত থাকার জন্য চিঠি বিতরণ করেছে ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখা। এর আগে আইনশৃঙ্খলা বৈঠকের সভার নোটিসে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি রাখা হয়নি। আগামী ১০ ডিসেম্বর শেরেবাংলানগরের এনইসি মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, মহাপুলিশ পরিদর্শক, স্থানীয় সরকার বিভাগ, বিজিবি, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার ও ভিডিপি, ডিজিএফআই, এনএসআই, স্পেশাল ব্রান্সের অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শকসহ প্রশাসন ও ইসির কর্মকর্তা, নারায়ণগঞ্জ রিটার্নিং কর্মকর্তাও উপস্থিত থাকবেন।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ইসির প্রস্তাবিত পরিপত্রে বলা হয়েছে, কেন্দ্রভিত্তিক ২২ থেকে ২৪ জন করে নিরাপত্তা সদস্য নিয়োজিত থাকবে। পুলিশ-এপিবিএন-ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে ২৭ ওয়ার্ডে একটি করে মোবাইল টিম ও ৯টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, র‌্যাবের ২৭টি, বিজিবির ১৪ প্লাটুন ও কোস্টগার্ডের ৩ প্লাটুন সদস্য টহলে থাকবে। ২০ ডিসেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এসব সদস্য নিয়োজিত হবে। ২২ ডিসেম্বর ভোট হবে এ সিটি করপোরেশনে। স্ট্যাটিক ফোর্স হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে র‌্যাব-পুলিশের টিম ও বিজিবির ৮ প্লাটুন রিজার্ভ ফোর্স সংরক্ষিত রাখার প্রস্তাবও রেখেছে ইসি।

এরই মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে ভোটের অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকে নির্বাচনী এলাকায় সেনা মোতায়েনের দাবি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলেছেন, কমিশন সুষ্ঠু ভোটের জন্য যা করা দরকার সে পদক্ষেপ নেবে। সেনা মোতায়েনের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, ভোটার ও প্রার্থীদের আস্থায় রাখতে হবে তাদের। ইসির আইনশৃঙ্খলা বৈঠকের আগে মেয়র প্রার্থী, সুধীজন, স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন ও একজন নির্বাচন কমিশনারের (জাবেদ আলী) উপস্থিতিতে মতবিনিময় সভা করবেন তারা। তিনি জানান, প্রার্থীদের আস্থায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রাখতে হবে। এ জন্য পর্যাপ্ত সদস্য নিয়োজিত রাখা হবে। সব ভোটকেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে নিরাপত্তা সদস্য রাখা হবে। টহলে রাখা হবে অনেক সদস্যকে। তিনি বলেন, প্রার্থীদের দাবিকে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেব। এমনভাবে তাদেরকে আশ্বস্ত করব, যাতে করে বিশেষ কোনো বাহিনীকে (সেনা মোতায়েন) সেক্ষেত্রে আর হয়তো প্রয়োজন পড়বে না। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে তা তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর