সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে প্রয়োজনে মিয়ানমার আক্রমণ

জহিরুল ইসলাম হিরন, মালয়েশিয়া

রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে প্রয়োজনে মিয়ানমার আক্রমণ

নাজিব রাজাক

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে বিক্ষোভ করতে মালয়েশিয়ার হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমেছে। স্থানীয় সময় গতকাল সকাল থেকেই বিক্ষোভ সমাবেশ এবং র‌্যালি চলছে রাজধানী কুয়ালালামপুরের পথে পথে। জনগণের  সঙ্গে সেই গণর‌্যালিতে অংশ নিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকও। তার সঙ্গে হাত মিলিয়ে যোগ দিয়েছেন মালয়েশিয়ার বিরোধী দল পার্টি ইসলাম সে-মালয়েশিয়ার (পিএএস) সভাপতি আবদুল হাদি আওয়াং। তাদের দাবি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে পূর্ব ঘোষিত প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শেষে নাজিব রাজ্জাক কড়া ভাষায় মিয়ানমারকে হুমকি দেন। যদিও মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে ওই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ না করতে নাজিব রাজাককে অনুরোধ করা হয়। গতকাল কুয়ালালামপুরে রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন জানাতে ডাকা ওই সভায় তিনি আরও বলেন, তিনি মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি এবং তার সরকারের প্রতি একটি শক্ত বার্তা পৌঁছে দিতে চান। পাশাপাশি তিনি অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনকে (ওআইসি) যথাযথ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। ওআইসি ও জাতিসংঘের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দয়া করে কিছু করুন। জাতিসংঘ কিছু করেনি। বিশ্ব এভাবে গণহত্যার বিষয়টি বসে বসে দেখতে পারে না। তিনি আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর পরিকল্পিতভাবে যে হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের খবর আসছে সেই অভিযোগগুলোর তদন্ত করে। শুধু তাই নয়, রাজাক মিয়ানমারের নেত্রী সু চির নোবেল পাওয়াকে ব্যঙ্গ করে বলেন, তার নোবেলের কাজ কী? আমরা তাকে বলতে চাই, যথেষ্ট হয়েছে... আমরা অবশ্যই মুসলমান ও ইসলামকে রক্ষা করব।’ রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ও রাষ্ট্রীয় মদদে ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে দেশটি ক্রমেই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সমালোচনামুখর হচ্ছে। বিশ্বের ইতিহাসে ক্ষমতাসীন কোনো প্রধানমন্ত্রীর নিপীড়িত রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য রাজপথে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার নজির নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, মালয়েশিয়ার টালমাটাল রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ ও সৌদি বাদশাকে খুশি করতে নাজিব মাঠে নেমেছেন। প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক শেষ পর্যন্ত লড়াই করার অঙ্গীকার করে বলেন, ‘তারা আমাকে সতর্ক করেছিল। কিন্তু আমার কিছু যায় আসে না। কারণ আমি এখানে এসেছি মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং মালয়েশিয়ার জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে নিজের যোগ্যতা নিয়ে।’ তিনি আরও বলেন, ‘৩ কোটি ১০ লাখ লোকের একটা সরকারের প্রধান হিসেবে আমাকে তারা কী করতে বলে? তারা কি চায় আমি চোখ বুজে থাকি? আমার মুখ বন্ধ করে রাখি? আমি তা করব না। তাদেরকে (রোহিঙ্গা) আমাদের রক্ষা করতেই হবে। তারা আমাদের মুসলমান ভাই, তাদের জীবনের মূল্য আছে।’ র‌্যালির একদিন আগেই নাজিব রাজাক মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে হওয়া আচরণ নিয়ে কড়া কথা বলেছেন। একে ‘জাতিগত নির্মূলকরণ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এভাবে নির্বিচারে মানুষকে জীবন্ত পোড়ানো হবে আর নারীদের ধর্ষণ করা হবে, মালয়েশিয়া তা কখনই মেনে নেবে না।

সর্বশেষ খবর