একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের পলাতক আসামি শরীয়তপুরের রাজাকার ইদ্রিস আলী সরদারকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গতকাল বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেয়। অন্য দুই বিচারপতি হলেন মো. শাহিনুর ইসলাম ও মো. সোহরাওয়ার্দী। আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা চারটি অভিযোগের চারটিই প্রমাণিত হয়েছে। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বা গুলি করে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারবে সরকার। পলাতক ইদ্রিসের সাজা কার্যকর করতে স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করতে প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নিতে বলা হয়েছে। ২ নভেম্বর উভয় পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়। এ মামলার দুই আসামির মধ্যে সোলায়মান মোল্লা ওরফে সোলেমান মৌলভী গ্রেফতারের পর অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ায় তাকে অভিযোগ থেকে বাদ দেওয়া হয়। এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা, জেয়াদ আল মালুম ও রেজিয়া সুলতানা চমন এবং ইদ্রিসের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম শুনানি করেন। প্রথম অভিযোগ, শরীয়তপুরের পালং থানার কাশাভোগ বাজার ও মধ্যপাড়া গ্রামে গণহত্যা, হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। এ অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড। দ্বিতীয় অভিযোগ, শরীয়তপুরের পালং থানার আঙ্গারি বাজার, মালোপাড়া ও রুদ্রকর গ্রামে চিংড়া গ্রাম এবং গণহত্যা, হত্যা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং হাওলাদার জুটমিলে আটকে রেখে নির্যাতন ও হত?্যা। এ অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড। তৃতীয় অভিযোগ, মাদারীপুরে আওয়ামী লীগ নেতা শীলেন্দ্র কৃষ্ণ পালের বাড়িতে হামলা, চার পাহারাদারকে নির্যাতনের পর হত্যা, বাড়িতে ভাঙচুর। এ অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড। চতুর্থ অভিযোগ, মাদারীপুরের বিভিন্ন স্থানে পরিকল্পিত দমন-পীড়ন, হত্যা, ধর্ষণ চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টির মা?ধ?্যমে হিন্দুদের দেশ ত?্যাগে বাধ্য করা। সাত বছরের কারাদণ্ড। অভিযোগপত্রের তথ?্য অনুযায়ী, ইদ্রিস আলী ষাটের দশকে ছিলেন জামায়াতের তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের স্থানীয় নেতা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তিনি জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। শরীয়তপুরের সদর উপজেলার স্বর্ণঘোষ গ্রামের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ তালুকদার ২০১০ সালের ১১ মে ইদ্রিস আলী ও সোলায়মান মোল্লাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের আদালতে মামলা করেন। ওই মামলা পরে পাঠানো হয় ট্রাইব্যুনালে।