শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

হিমালয় জয় করেছে ওরা চারজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

হিমালয় জয় করেছে ওরা চারজন

হিমালয় পর্বতশৃঙ্গ জয় বাংলাদেশিদের কাছে এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। আর এ স্বপ্ন দেশের অভিযানপ্রিয় তরুণ প্রজন্মের কাছে বাস্তব করে তুলেছেন পর্বতারোহী মুসা ইব্রাহীম, মোহাম্মদ আবদুল মুহিত, নিশাত মজুমদার ও ওয়াসফিয়া নাজরীনরা। হিমালয় পর্বতের চূড়ায় ১৯৫৩  সালে প্রথম মানব পদচিহ্ন পড়লেও ২০১০ সালে মুসা ইব্রাহীমের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশির পদচিহ্ন পড়ে পৃথিবীর উচ্চতম শুভ্র বরফচূড়ায়, হিমালয় শৃঙ্গে ওড়ানো হয় লাল সবুজের পতাকা। এরপর একে একে ২০১১ ও ২০১২ সালে এভারেস্ট পর্বত জয় করেন মুহিত, নিশাত ও ওয়াসফিয়ারা। তবে ২০১৩ সালে আরেক বাংলাদেশি মোহাম্মদ খালেদ হোসেন এভারেস্ট জয় করলেও পর্বত থেকে নামার সময় মৃত্যু হয়। পৃথিবীর উচ্চতম এই পর্বত জয়ের দুঃসাহসিক অভিযানে সফল হয়ে পুরো বিশ্বের কাছে দেশের নাম আরও উজ্বল করেন বাংলাদেশের এই তরুণ-তরুণীরা। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন মুসা ইব্রাহীম। লালমনিরহাটের ছেলে মুসা ইব্রাহীম ২০১০ সালের ২৩ মে এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেন। সাগরতল থেকে ২৯ হাজার ৩৫ ফুট উচ্চতায় হিমালয়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় প্রথম বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান মুসা। তিনি নর্থ আলপাইন ক্লাব বাংলাদেশ নামের পবর্তারোহণ ক্লাবের মহাসচিব। এর আগে মুসা সাংবাদিকতায় জড়িত ছিলেন। পর্বত আরোহণে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়াতে ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন এভারেস্ট একাডেমি। এভারেস্ট ছাড়াও ২০১১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মুসা আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত কিলিমানজারো চূড়া জয় করেন। মোহাম্মদ আবদুল মুহিত দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ২০১১ সালের ২১ মে এভারেস্ট জয় করেন। ১৯৭০ সালের ৪ জানুয়ারি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুরে তার জন্ম। মুসা ইব্রাহীমের এভারেস্ট জয়ের এক বছর পরই মুহিত এভারেস্ট জয় করেন। বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের সদস্য হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন মুহিত। এভারেস্ট জয়ের আগে মুহিত বিশ্বের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ চো ওয়ো (৮ হাজার ২০১ মিটার) জয় করেন (২০০৯ সালে)। বাংলাদেশি পর্বতারোহীদের মধ্যে তিনিই প্রথম এ সাফল্য অর্জন করেন। মুহিত দ্বিতীয়বার ২০১২ সালে নিশাত মজুমদারের সঙ্গে আবারও এভারেস্ট জয় করেন। বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে ২০১২ সালের ১৯ মে এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেন নিশাত মজুমদার। লক্ষ্মীপুরে ১৯৮১ সালের ৫ জানুয়ারি তার জন্ম। ঢাকার বটমূলী হোম বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মাধ্যমিক ও ১৯৯৯ সালে শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক আর ঢাকা সিটি কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন তিনি। নিশাত ঢাকা ওয়াসার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি এভারেস্ট বেস ক্যাম্প, হিমালয়ের মেরা ও সিঙ্গাচুলি পর্বতশৃঙ্গ আরোহণ করেন। পৃথিবীর পঞ্চম পর্বতশৃঙ্গ মাকালুতে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ অভিযানেও অংশ নেন তিনি। এ ছাড়া হিমালয়ের চেকিগো নামের একটি শৃঙ্গেও সফল অভিযান করেন। দেশের দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০১২ সালের ২৬ মে এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করেন ওয়াসফিয়া নাজরীন। এ ছাড়া দেশের প্রথম পর্বতারোহী হিসেবে সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন তিনি। তার জন্ম ১৯৮২ সালের ২৭ অক্টোবর। ঢাকায় জন্মগ্রহণকারী এই নারীর শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামে। রাজধানীর স্কলাসটিকা স্কুল থেকে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল শেষে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় এগনেস স্কট বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি সামাজিক মনোবিজ্ঞান ও স্টুডিও আর্ট বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি একজন উন্নয়নকর্মী হিসেবেও বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে যোগদান করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট কর্মসূচি নিয়ে তিনি ব্যস্ত। তার মেন্টর হিসেবে আছেন পৃথিবীর প্রথম সেভেন সামিট বিজয়ী কানাডার প্যাট্রিক মোরো। বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০১১ সালের ওয়াসফিয়া তার সেভেন সামিট অভিযান শুরু করেন। আর ২০১৫ সালের ১৮ নভেম্বর ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া অঞ্চল দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার (ওশেনিয়া) সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কারস্তনেজ পিরামিড জয়ের মধ্য দিয়ে সাতটি পর্বত জয় সম্পন্ন করেন। ওয়াসফিয়া ন্যাশনাল জিওগ্রাফির বর্ষসেরা অভিযাত্রীর খেতাব পেয়েছেন। দুঃসাহসী অভিযানের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে নিজের অঙ্গীকার ও কর্মতত্পরতার জন্য তাকে ২০১৪ সালের অন্যতম বর্ষসেরা হিসেবে মনোনীত করা হয়। তবে দুভার্গ্যজনকভাবে বাংলাদেশের হিমালয় পর্বত বিজয়ীদের মধ্যে মোহাম্মদ খালেদ হোসেন এভারেস্ট জয় করে ফেরার পথে ২০১৩ সালের ২০ মে মৃত্যুমুখে পড়েন। এভারেস্ট জয় করে নেমে আসার পথে ৮ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় অজানা কারণে তার মৃত্যু হয়। এভারেস্টের সর্বোচ্চ চূড়া (২৯.০৩৫ ফুট) জয় করে নেমে আসার পথে সাউথ সামিটে (প্রায় ২৮ হাজার ৭৫০ ফুট) পৌঁছানোর পর তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। পর্বতারোহণ ছাড়াও খালেদ ‘কাজলের দিনরাত্রি’ নামে একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন। খালেদ ২০০৬ সালে সিকিমের ফ্রে পর্বত, ২০০৯ সালে নেপালের মাকালু, ২০১০ সালে হিমালয়ের বাংলাদেশ-নেপাল ফ্রেন্ডশিপ পিক এবং ২০১১ সালে অন্নপূর্ণা রেঞ্জের সিঙ্গুচুলি পর্বত জয় করেন।

সর্বশেষ খবর