বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিতর্কমুক্ত নির্বাচন কমিশন গঠন অসম্ভব

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

বিতর্কমুক্ত নির্বাচন কমিশন গঠন অসম্ভব

জিয়াউদ্দিন বাবলু

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেছেন, বিতর্কমুক্ত নির্বাচন কমিশন গঠন করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন কমিশনকে সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত করেছেন খালেদা জিয়া। এ সংকট থেকে উত্তরণে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন পাস করাসহ সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা এবং নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের      সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় একথা বলেন সাবেক এ মন্ত্রী।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কেন অংশ নিচ্ছে না জানতে চাইলে জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, গতবারও আমরা নাসিক নির্বাচনে অংশ নেইনি। এবারও নিচ্ছি না। এটা আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। জেলা পরিষদ নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি অংশ নিচ্ছে না। তবে আমরা প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আগামীতে আমরা জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেব। নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে বলেন, ’৯০ পরবর্তী সময়ে যতগুলো নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে সেগুলোর কোনোটিই বিতর্কমুক্ত ছিল না। বিগত পাঁচটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা সে কথাই বলে। এবারও যে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে তা নিয়ে গঠনের আগেই বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। এখন যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে—এবং তার জন্য যে পদ্ধতিতে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করা হয়— তাতে বিতর্কমুক্ত নির্বাচন অসম্ভব। তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০০৫-০৭ আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন কমিশনকে সবচেয়ে বিতর্কিত করেছেন। ভোটার তালিকায় এক কোটি ৫০ লাখ ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন এবং বিএনপি ক্যাডারদের নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ করেছিলেন। নির্বাচন কমিশন গঠনে খালেদা জিয়া যে প্রস্তাব দিয়েছেন তাতে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। কৌশলে তিনি জামায়াতকে পৃষ্ঠপোষকতা করে চলেছেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করার কথা বলেন। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলতে চাই তিনি ’৯১ সালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে আটক রেখেছিলেন। জাতীয় পার্টির অফিস বন্ধ রেখেছিলেন। সারা দেশে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। জাতীয় পার্টির ১৫৪টি নির্বাচনী সভা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। দলের ওপর স্টিম রোলার চালানো হয়েছিল। ’৯১ সালের নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ ছিল না। উনি এখন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চান কীভাবে? খালেদা জিয়া দেশে প্রতিহিংসা, বিদ্বেষ এবং জিঘাংসার রাজনীতি শুরু করেন। 

১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির ক্ষমতা হস্তান্তর প্রসঙ্গে বলেন, সেদিন গণতান্ত্রিক ধারা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য এইচ এম এরশাদ ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। পদত্যাগ করেছিলেন আলোচনার ভিত্তিতে। তিনি বলেন, ১৯৮২ সালে তৎকালীন সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে এইচ এম এরশাদের রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ অসাংবিধানিক ছিল না। রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে ইচ্ছুক ছিলেন না। তিনি ক্ষমতা দিয়েছিলেন সামরিক বাহিনীকে। ওই সময় সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে এইচ এম এরশাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। আজকের গণতান্ত্রিক শাসনের যে সুবাতাস বইছে তার ভিত্তি রচনা করেছিলেন এইচ এম এরশাদ। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির সাবেক এ মহাসচিব বলেন, ২৬ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে। অনেক চড়াই-উত্রাই পেরিয়ে জাতীয় পার্টিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। আমরাই একমাত্র দল এত দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থেকেও সংগঠনকে শক্তিশালী করে আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি। বর্তমান সরকারে জাতীয় পার্টির তিন মন্ত্রী এবং পার্টির চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এ ছাড়া গতবারের মহাজোট সরকারেও জাতীয় পার্টির মন্ত্রী ছিল তাহলে ২৬ বছর কীভাবে আপনারা ক্ষমতার বাইরে? জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, রাষ্ট্রপ্রধান না হলে ক্ষমতায় আছি একথা বলা যায় না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি অংশ নিয়েছিল। আগামী নির্বাচনে এইচ এম এরশাদ না রওশন এরশাদ, কার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে জানতে চাইলে বাবলু বলেন, এরশাদ লাঙ্গলের প্রতীক, উন্নয়নের প্রতীক, গণতন্ত্রের প্রতীক। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অবশ্যই এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে অংশ নেবে।

আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে জাতীয় পার্টি আবারও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে জোট বাঁধবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়ার কোনো উপায় নেই। নির্বাচন কমিশনের বিধান অনুযায়ী পরপর দুবার নির্বাচনে অংশ না নিলে দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়। তাই আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে দলটি বাধ্য। তিনি বলেন, আমরা একক নির্বাচনের জন্য এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে মাঠ গোছাচ্ছি। কোনো দলের সঙ্গে জোট করা যায় তা ভেবে দেখার সময় এখন নয়। তবে পার্টির চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্তই নেবেন আমরা সবাই তা মেনে নেব।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমান নির্যাতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্যাতন বন্ধ করতে জাতিসংঘের কাছে আহ্বান জানাব মিয়ানমারে শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠান। এ নিয়ে প্রধান বিরোধী দলের রাজপথে কোনো কর্মসূচি নেই কেন জানতে চাইলে বাবলু বলেন, এ নিয়ে আমাদের পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা শিগগিরই রাজপথে কর্মসূচি দেব। সরকারের সফলতা-ব্যর্থতা প্রসঙ্গে জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, আন্তর্জাতিক মহলে বর্তমান সরকার অনেক সুনাম অর্জন করেছে। চাল রপ্তানি, সবজি উৎপাদন, মাছ উৎপাদন, দারিদ্র্য বিমোচন, মাতৃমৃত্যু হার কমানোসহ নানান উন্নয়ন রয়েছে। তবে মানুষ শান্তি চায়, নিরাপত্তা চায় উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে চায়।

সর্বশেষ খবর