বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাংলাদেশে ঢুকেছে ২১ হাজার রোহিঙ্গা

মিয়ানমারে সহিংসতা গণহত্যা নয় : কফি আনান

প্রতিদিন ডেস্ক

অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা (আইওএম) বলেছে, মিয়ানমার থেকে গত কয়েক সপ্তাহে প্রায় ২১ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। যাদের বড় অংশই নারী ও শিশু। এদের বেশির ভাগই টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে। তারা বলছেন, তাদের পরিবারের পুরুষদের হত্যা করা হয়েছে। এদিকে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত কমিশনের প্রধান কফি আনানের মতে, মিয়ানমারে এখন যা ঘটছে— তা সহিংসতা; গণহত্যা নয়। খবর বিবিসির।

কফি আনান আরও বলেন, পারস্পারিক অবিশ্বাস থেকেই দেশটিতে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

পরিচয় মিলেছে সেই শিশুর : মিয়ানমার অংশে নাফ নদের তীরে কাদায় মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা শিশুটির পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম তৌহিদ। মিয়ানমারের মংডু থানার বড়গজিরবিল গ্রামের বাসিন্দা সে। বাবার নাম জাফর আলম। তিনি মালয়েশিয়া  প্রবাসী। শিশুটির মায়ের নাম ছেনোয়ারা বেগম। গত রবিবার রাতে মিয়ানমারের বড়গজিরবিল গ্রাম থেকে একদল রোহিঙ্গা নৌকা নিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টার সময়ে ডুবে যাওয়া নৌকায় অন্যদের সঙ্গে তৌহিদ ও তার মাও ছিলেন। পরে তার লাশ পাওয়া যায় মিয়ানমারের নাফ নদের কাদায় আটকে থাকা অবস্থায়। এই নৌকাডুবির পর রেহেনা  বেগম নামের এক নারী সাঁতার কেটে বাংলাদেশের জলসীমায় লালদিয়া দ্বীপে আশ্রয় নেন। সোমবার ভোরে বাংলাদেশি জেলেরা মুমূর্ষু অবস্থায় ওই নারীকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। গত রাতে সাংবাদিকরা তৌহিদের ছবি রেহেনা বেগম দেখিয়ে তার পরিচয় জানতে চান। তখন তিনি জানান, শিশুটির নাম তৌহিদ। সে তার খালাতো ভাই।

টেকনাফে রোহিঙ্গা নারীর মরদেহ উদ্ধার : এদিকে টেকনাফের স্থল বন্দর সংলগ্ন নাফ নদ থেকে এক রোহিঙ্গা নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বেলা ১টার দিকে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। টেকনাফ থানার ওসি আবদুল মজিদ জানান, সকালের দিকে টেকনাফ স্থল বন্দর সংলগ্ন নাফ নদে এক নারীর মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। তার বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। 

মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ : মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা বন্ধের দাবিতে গতকাল রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বেলা ১১টার দিকে বায়তুল মোকাররমের সামনে থেকে নেতা-কর্মীরা গুলশানে দেশটির দূতাবাস অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলসহ স্মারকলিপি জমা দেওয়ার জন্য রওনা দেন। মিছিল পল্টন মোড় হয়ে নাইটিংগেল মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ তাদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়। এ সময় পল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল, শান্তিনগর, মৎস্য ভবনসহ আশপাশের এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে পীর চরমোনাই আগামী ১৮ ডিসেম্বর মিয়ানমার অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

পরে সংগঠনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল দূতাবাসে গিয়ে স্মারকলিপি পেশ করে। দূতাবাসের চিফ প্রটোকল অফিসার স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক এ টি এম হেমায়েত উদ্দিন, প্রকৌশলী আশরাফুল আলম, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, অধ্যক্ষ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, আলহাজ আবদুর রহমান। সমাবেশে পীর চরমোনাই বলেন, মিয়ানমারে মুসলিম গণহত্যা বন্ধের জন্য যা করার প্রয়োজন তাই করতে হবে। অর্থনৈতিক অবরোধ সৃষ্টি করতে মিয়ানমারের সব পণ্য বর্জন করতে হবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সেখানে গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। পীর চরমোনাই বলেন, মিয়ানমারে গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, শিশু হত্যা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনা বন্ধ না করলে আগামী ১৮ ডিসেম্বর মিয়ানমার অভিমুখে লংমার্চ করে প্রয়োজনে নাফ নদ সাঁতার কেটে আমরা মিয়ানমারের মুসলমানের পাশে দাঁড়াব। কোনো অজুহাতেই তাদের রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত করা যাবে না।

সর্বশেষ খবর