বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ ২০২১ সালের মধ্যে : প্রধানমন্ত্রী

বসুন্ধরা কনভেনশন সিটিতে বিদ্যুৎ সপ্তাহ উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক

শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ ২০২১ সালের মধ্যে : প্রধানমন্ত্রী

ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় গতকাল বিদ্যুৎ সপ্তাহ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সব মানুষের ঘরে ঘরে আলো জ্বালব। সেই লক্ষ্য নিয়েই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল সকালে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) ‘জাতীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ-২০১৬’ উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। এবারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘অদম্য বাংলাদেশ’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত সাত বছরে আমরা ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছি। এক কোটি ১৪ লাখ নতুন সংযোগ দিতে পেরেছি। এখন দেশের ৭৮ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা উপভোগ করছে। তিনি বলেন, উন্নয়নের প্রথম সোপানই হচ্ছে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ। এর মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ আমদানির ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে কথা হয়েছে। নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছি। সেখানে আমরা উৎপাদন করব, বিক্রি করব। বিদ্যুৎ নিয়ে আসব। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া আমরা সৌরবিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস উৎপাদনে পদক্ষেপ নিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এ দেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার পরিকল্পনা করেছি। আর ২০৪১ সালের মধ্যে এ দেশকে উন্নত দেশ হিসেবে দেখতে চাই। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে। আর ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫ হাজার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আমরা এরই মধ্যে ৩৪ হাজার গ্রাহকের কাছে গ্যাস সরবরাহ করেছি। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি তা সময়সাপেক্ষ। আমরা অনেকে অহেতুক বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অপব্যবহার করি, অপচয় করি। প্রত্যেকের মধ্যে এ মানসিকতা থাকতে হবে যে, বিদ্যুৎ আমারই সম্পদ, আমি এটাকে রক্ষা করব, সাশ্রয় করব। তিনি বলেন, নিজের হাতে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সুইচ বন্ধ করেন, তাতে লজ্জার কিছু নেই। আমাদের দেশের মানুষের একটু অভ্যাস খারাপ আছে। অনেকে মনে করেন, আমি বড় অফিসার। আমি আবার সুইচ অফ করব কেন? আর্দালি-পিয়ন এসে করবে। তিনি বলেন, নিজের কাজ নিজে করার মধ্যে লজ্জার কিছু নেই। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আমি নিজেই সুইচ অফ করি। নিজের কাজ নিজে করলে ছোট হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালতে সবাইকে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সাশ্রয়ী হতে হবে। ঘরে-বাইরে সর্বক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিদ্যু?ৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও বেগবান করবে। গ্যাসের অপচয় রোধে সবাইকে সচেতন ও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে গ্যাসের চুলা বন্ধ করেন না। একটু মিটমিট করে জ্বালিয়ে রাখেন। এতে অপচয় যেমন ঘটে, তেমনি দুর্ঘটনাও ঘটে। আগুনে পুড়ে মানুষ মারা যান। একদিকে সাশ্রয়ী হতে হবে। আর একদিকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, পানির অনেক অপচয় হয়। অনেকে পানির কল ছেড়ে কাজ করতে গিয়ে প্রচুর পানির অপচয় করতেই থাকেন। পানিরও সাশ্রয়ী ব্যবহার করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার ‘দিন বদলের সনদ’-এ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম। এক্ষেত্রে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে বেশি অর্জন করতে পেরেছি। সভাপতির বক্তব্যে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সদ্য প্রয়াত মাহবুবুল হক শাকিলের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, আমরা এক বিশ্বস্ত মানুষকে হারালাম। জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হলো। বিদ্যুৎ বিভাগের চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমরা যখন দায়িত্ব নিই, তখন মানুষ বিদ্যুতের জন্য হাহাকার করত। এখন আমরা গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিশেষ অবদানের জন্য দুটি ক্যাটাগরিতে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেরা ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেওয়া হয়। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অগ্রগতিভিত্তিক একটি তথ্যচিত্র পরিবেশিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী মেলা ঘুরে দেখেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নেপালের জ্বালানিমন্ত্রী জনার্দন শর্মা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম।

সর্বশেষ খবর