শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রিজার্ভে ৩২ বিলিয়ন ডলারের মহারেকর্ড

মানিক মুনতাসির

রিজার্ভে ৩২ বিলিয়ন ডলারের মহারেকর্ড

স্বাধীনতা-পরবর্তী ক্ষুধার্ত মানুষ আর তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশের পথচলা শুরু হয় শূন্যের অর্থনীতি নিয়ে। কিন্তু বীর বাঙালির উদ্যম আর কঠোর পরিশ্রমে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করে বাংলাদেশের অর্থনীতি। কৃষিজ উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি মানবসম্পদ রপ্তানির পথ খুঁজে নেয় বাঙালি জাতি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৭৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় মানবসম্পদ রপ্তানি। সে বছরে বিশ্বের সাতটি দেশে ৪ হাজার ৬৯১ জনকে রপ্তানি করা হয়। এর মধ্যে সৌদি আরবে ২১৭, আরব আমিরাতে ১ হাজার ৯৮৯, কুয়েতে ৬৪৩, ওমানে ১১৩, কাতারে ১ হাজার ২২১, বাহরাইনে ৩৩৫ ও লিবিয়ায় ১৭৩ জন শ্রমিক পাঠানো হয়। সে বছর প্রবাসী ওই বাংলাদেশিরা বিদেশের মাটিতে ঘাম ঝরিয়ে ৩৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকার রেমিট্যান্স পাঠিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে অনন্য ভূমিকা রাখেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২ বিলিয়ন ডলারে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় বলছে, জুলাই-২০১৫ থেকে জুন-২০১৬ এক বছরে ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৩৭ জন শ্রমিককে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। সে হিসেবে প্রতিদিন ১ হাজার ৮৭৫ জন শ্রমিক বিদেশ যাচ্ছেন। বর্তমানে সরকারি নথি অনুযায়ী বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে বাংলাদেশ মানবসম্পদ রপ্তানি করছে। বেসরকারিভাবে এর সংখ্যা আরও বেশি বলে জানা গেছে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ২ কোটি বাংলাদেশি কর্মরত; যাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে গড়ে উঠছে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। অক্টোবর-২০১৬ শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলারে। এর ৮০ ভাগেরও বেশি শুধু প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স। বাকি অর্থ এসেছে অন্যান্য পণ্য রপ্তানি খাত থেকে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশে ২৩ দশমিক ৭১ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকার রেমিট্যান্স আসে। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা; যা আমাদের জাতীয় বাজেটের তিন ভাগের এক ভাগের কাছাকাছি। সে হিসেবে প্রতি দিনে রেমিট্যান্স আসছে ৩২৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, অক্টোবর-২০১৬ শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৮৯৫ বিলিয়ন ডলার; যা এক বছর আগে ছিল ২৭ দশমিক শূন্য ৫৮ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে এক বছরে রিজার্ভ বেড়েছে ৪ দশমিক ৮৩৭ বিলিয়ন ডলার। আর এক দশক আগে ২০০৬ সালে এ রিজার্ভ ছিল ৭ বিলিয়ন ডলার। ২০০৯ সালে তা ১০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। রপ্তানি আয় ও প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স গাণিতিক হারে বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছর তা ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এরপর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের দেনা পরিশোধ করায় তা সামান্য কমে ৩১ দশমিক ৮৯৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিশাল পরিমাণ এ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা করছে। এ ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু নির্মাণের আমদানিকৃত কাঁচামাল বা বিভিন্ন পণ্যের আমদানি ব্যয় মেটানোর কথাও ভাবা হচ্ছে। শক্তিশালী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাংলাদেশকে দিয়েছে নিরাপদ বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য (ব্যালান্স অব পেমেন্ট)। এজন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণমান এখন অনেক উন্নত ও শক্তিশালী। এজন্য বিশ্বের বিভিন্ন ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির কাছ থেকে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে সুনাম কুড়িয়েছে। অর্জন করেছে উচ্চ রেটিং। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ গড়তে শক্তিশালী এ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও অনন্য ভূমিকা রাখছে। এ ক্ষেত্রে প্রবাসী শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য শ্রমিকরা যে যে দেশে কর্মরত সেখানেই তাদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, স্কিল ডেভেলপমেন্ট নামে একটি নতুন বিভাগও খোলার কাজ শুরু করেছে সরকার; যার মাধ্যমে বিদেশ গমনেচ্ছু শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর