শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল সংসদে

থাকছে অনুমোদন ও শাস্তির বিধান

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিয়ের জন্য ছেলের বয়স ন্যূনতম ২১ ও মেয়ের ১৮ বছর নির্ধারণ করে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৬ বিল জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। তবে বিলে বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীর স্বার্থে নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় বিয়ে সম্পাদনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাল্যবিবাহ বন্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে আদালতকে। এ ছাড়া এ আইনের বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের বাল্যবিবাহ বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। বিলে বাল্যবিবাহ করলে দুই বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধানসহ মাতা-পিতা ও অন্যদের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের ত্রয়োদশ অধিবেশনে গতকাল বিলটি উত্থাপন করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। বিলটি উত্থাপনের বিরোধিতা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. ফখরুল ইমাম। তবে তার প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে বিলটি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। বিলে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে, বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।’ আবার বিলের ৫ নম্বর ধারায় বাল্যবিবাহ বন্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে আদালতকে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করলে অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগের জন্য একই দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বিলে কোনো নারী ও পুরুষ বাল্যবিবাহ করলে দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আর এ ধরনের বিয়েতে মাতা-পিতাসহ অন্যদের শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। একইভাবে বাল্যবিবাহ নিবন্ধনের জন্য শাস্তি ও লাইসেন্স বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, সরকার, বিধিমালা দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে জাতীয়, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি সমন্বয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে পারবে। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণসংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাল্যবিবাহ সারা বিশ্বের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় এ সমস্যাটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাল্যবিবাহ মানবাধিকারের একটি সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বাল্যবিবাহে প্রজননস্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে; যা মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর ঘটনা বাড়িয়ে দেয়। আরও বলা হয়েছে, সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। এ অবস্থায় বাল্যবিবাহ বন্ধে একটি যুগোপযোগী আইন থাকা জরুরি। সে আইন প্রণয়নের জন্য এ বিলটি আনা হয়েছে। ২৪ নভেম্বর মন্ত্রিসভায় বিলটি অনুমোদিত হয়।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইন বিল উত্থাপন : ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইন-২০১৬’ নামে গতকাল আরও একটি বিল সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। বিলটি উত্থাপন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। উন্নয়ন অর্থনীতি, জনসংখ্যাতত্ত্ব ও অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞান এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ে অনুসন্ধান, গবেষণা পরিচালনা ও জ্ঞান বিস্তারের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং এ-সংক্রান্ত বিষয়ে বিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে বিলটি আনা হয়।

সর্বশেষ খবর