শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নতুন করে নিখোঁজদের খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ যুবকদের তালিকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একের পর এক নিখোঁজ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ এবং মাদ্রাসার ছাত্ররা। পুলিশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী গত এক সপ্তাহে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নয়জন নিখোঁজ হয়েছেন। এতে যেমন উদ্বিগ্ন নিখোঁজদের পরিবার, তেমনি যুবকদের নিখোঁজ হওয়ার পেছনে কোনো জঙ্গি সংগঠনের হাত আছে কি না, সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নিখোঁজদের অবস্থান শনাক্ত করতেও কাজ শুরু করেছে তারা। এর আগে পুলিশের নিখোঁজ তালিকায় ৪০ জনের নাম আসলেও র‍্যাবের তালিকায় উঠে আসে ৬৮ জনের নাম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা সবাই জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘর ছাড়তে পারেন। নিখোঁজদের তালিকা হালনাগাদ করতে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। জানা গেছে, গত সপ্তাহে পাবনা মেডিকেল কলেজের জাকির হোসেন ও তানভীর আহমেদ ওরফে তনয়, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের জামিয়াতুল নাফিজিয়া আল ইসলামিয়া মার্কাস মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নেয়ামত উল্লাহ; বনানী থেকে সাফায়াত, জাইন, মেহেদী ও সুজন নামে চার তরুণ, ও-লেভেল পাস করা সাইদ আনোয়ার খান এবং কেয়ার মেডিকেলের ছাত্র ইমরান ফরহাদ নিখোঁজ হন। গত আগস্টে পুলিশ সদর দফতর থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ ৪০ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। জঙ্গিবাদের কারণেই তারা নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছিল পুলিশ। তবে জুলাইয়ে র‍্যাবের প্রকাশিত একটি তালিকায় রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ ৬৮ জনের নাম আসে। এরপর দফায় দফায় ঢাকা ও এর বাইরে থেকে বেশ কয়েকজন তরুণ নিখোঁজ হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন পুলিশ-র‍্যাবের অভিযানে নিহত হন। নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলছেন, উঠতি বয়সী তরুণদের এখনো অপরাধে জড়ায়নি তাদের দ্রুত বোঝানো যায়। তাদের ব্রেন ওয়াস করে কোরআন-হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গিবাদের পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ‘মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী’ এমন মন্ত্রে দীক্ষিত করা হয়। এসব তরুণকে দিয়ে অনেক কিছুই করানো সম্ভব। এরা কোথায় যাচ্ছে, কারা এদের নিয়ে যাচ্ছে এটা চিহ্নিত করা পুলিশের দায়িত্ব।

বরিশালে নিখোঁজ তিন তরুণের ফিরে আসার প্রতীক্ষায় পরিবার : বরিশালের নিখোঁজ তিন তরুণের ফিরে আসার প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন পরিবারের সদস্যরা। এই তিন তরুণ হলেন বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের নয়ঘর এলাকার মেহেদী হাসান ও সুজন ঘরামী এবং আগৈলঝাড়ার মাদ্রাসা ছাত্র নেয়ামতুল্লাহ। এদের মধ্যে প্রথম দুজন নিখোঁজ হয়েছেন ঢাকার গুলশান থেকে। আর নেয়ামত নিখোঁজ হন আগৈলঝাড়ার মাদ্রাসা থেকেই। বরিশালের গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অপরিচিত কাউকে দেখলেই চার ছেলেমেয়ের মধ্যে ছোট ছেলের খবর জানতে উন্মুখ সুজনের মা আকলিমা বেগম। অপরদিকে বড় ছেলে মেহেদী হাসানকে পাওয়া যাচ্ছে না—খবর পাওয়ার পর থেকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তার মা হাওয়া বেগম। তিনি কাঁদতে কাঁদতে শয্যাশয়ী হয়েছেন। এদিকে আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের আল জামিয়াতুল নাফিজিয়া আল ইসলামিয়া মার্কাস মাদ্রাসার নিখোঁজ ছাত্র নেয়ামতুল্লাহরও (১৬) কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না নয় দিন ধরে। গত ৩০ নভেম্বর মাদ্রাসা থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজের ৩ দিন পর নেয়ামতুল্লাহ তার মা কোহিনূর বেগমের ০১৭৬৮-৪৬৪২৮১ নম্বরের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে লিখেছে, ‘মা, আমি ভালো আছি। আমার জন্য কোনো চিন্তা করবা না। আমি আল্লাহর পথে চলে গেলাম।’ এর পর থেকেই চরম উদ্বেগে রয়েছে তার পরিবার। এ ঘটনায় আগৈলঝাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন নেয়ামতুল্লাহর বাবা বাকাল গ্রামের খোরশেদ বেপারী। নিখোঁজ ছেলের চিন্তায় পরিবারের সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।

 

সর্বশেষ খবর