রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন

ব্যক্তির চেয়ে প্রতীক ইস্যু

দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর প্রচারে কেন্দ্রীয় নেতারা

মাহমুদ আজহার ও রোমান চৌধুরী সুমন

ব্যক্তির চেয়ে প্রতীক ইস্যু

গণসংযোগে ব্যস্ত আইভী - সাখাওয়াতের পক্ষে নেমেছেন ফখরুল

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (নাসিক) মেয়র পদে আকর্ষণ হারাতে বসেছে ব্যক্তি ইমেজ। ব্যক্তির চেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে প্রতীক। একই সঙ্গে স্থানীয় ইস্যুর চেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে জাতীয় ইস্যু। ম্লান হচ্ছে এলাকার উন্নয়ন বা অনুন্নয়নের দিকগুলো।

দুই হেভিওয়েট প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান যোগ্য না অযোগ্য, তার চেয়ে মুখ্য হয়ে উঠেছে কে কোন প্রতীকে নির্বাচন করছেন। নৌকা, ধানের শীষসহ মেয়র পদে অন্য প্রতীকের পোস্টারে সয়লাব পুরো নারায়ণগঞ্জ শহর। অন্য প্রার্থীদেরও ভোটাররা চিনছেন দলীয় প্রতীকে। মাইকে প্রচারণায় নৌকা-ধানের শীষের গুণগান চলছে।

এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রত্যেকদিন নারায়ণগঞ্জে যাচ্ছেন। গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অর্ধশত কেন্দ্রীয় নেতা নাসিকের বিভিন্ন এলাকায় দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও দিনভর ছিলেন সেখানে। শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান মহানগর ও জেলার সব নেতা-কর্মীকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। কোদাল প্রতীকে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনে নৌকা-ধানের শীষ প্রতীকের একটি রোগ ধরেছে। এটা পরিবর্তন করতে হবে। দুঃখজনক হলো মার্কার ওজনে ব্যক্তিযোগ্যতা হারিয়ে যেতে বসেছে। সামাজিক ব্যাধি মাদক সন্ত্রাস দূর করার পরিবর্তে সবাই মার্কার গুণগান করছে।

কেন্দ্র বহিষ্কার করলেও দলীয় হাতঘড়ি মার্কা নিয়ে মেয়র পদে লড়ছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. রাশেদ ফেরদৌস। তিনি জানালেন, আমি হাতঘড়ি মার্কার প্রার্থী। তরুণ সমাজের প্রতিনিধিত্ব করছি। আশা করি, ভোটারটা আমাকেই ভোট দিয়ে জনসেবার সুযোগ দেবেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নাসিকের প্রতিটি ওয়ার্ডে নৌকা ও ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন আইভী ও সাখাওয়াত। নির্বাচন কমিশন আয়োজিত মতবিনিময় সভায়ও আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীকে দেখা গেছে জাতীয় ইস্যু নিয়ে তর্কে জড়াতে। সরকারের সমলোচনা করে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) বলেছেন, এ সরকারের অধীনে বিগত নির্বাচনগুলোতে কারচুপি হয়েছে। জবাবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রশ্ন রেখে বলেছেন, এ সরকারের আমলে কারচুপি হলে নারায়ণগঞ্জে কয়েকটি ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হলো কিভাবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছিল বলেই বিএনপির প্রার্থী জয়ী হয়েছে। এ সময় দুই প্রার্থীই দলীয় প্রতীকের বিষয়টি বারবার তুলে ধরেন। কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে আসা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের মধ্যেও। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ নারায়ণগঞ্জে গণসংযোগে এসে বলেছেন, মানুষ পোড়ানো বিএনপিকে কেউ ভোট দেবে না। জনগণ নৌকাকেই জয়ী করবে। অন্যদিকে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল প্রচারণায় এসে বলেছেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হরণ করেছে। ধানের শীষে ভোট দিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। বুধবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় শহরের গণসংযোগে এসে বলেন, ২২শে ডিসেম্বর নৌকা পরাজিত হয়ে শীতলক্ষ্যায় ডুববে। প্রতিবাদে শুক্রবার স্থানীয় এমপি শামীম ওসমান বলেছেন, নৌকার জয় নিশ্চিত। যারা ঘুমন্ত মানুষ পোড়ায় তাদের কেউ ভোট দেবে না। এভাবেই চলছে প্রতীকের পক্ষে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। শহরের মাসদাইর এলাকার ভোটার ফয়সাল ইসলাম জানান, এ সরকারের আমলে ঘরের গৃহকর্মীরা এখন বাসি খাবার নিতে চায় না। গার্মেন্টগুলোতে হেলপার হিসেবে নিয়োগ পেলেই ছয় হাজার টাকা বেতন। একটি ঘরে পাঁচজন থাকলে চারজনই কর্মজীবী। মানুষের আয় বেড়েছে। তাই নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে হবে। ইসদাইর বাজার এলাকার মাসুদ মিয়া জানান, এ সরকার গণতন্ত্র হরণ করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাড়ে তিনশ’ এমপি নির্বাচিত করেছে। এটা জনগণ পছন্দ করেনি। মানুষকে ভাত খাওয়ালেই হবে না। আজ বাজার থেকে শুরু করে বেডরুমে মানুষের নিরাপত্তা নেই। ধানের শীষে ভোট দিয়ে মানুষের নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। এদিকে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে আওয়ামী লীগ বিএনপির শতাধিক নেতা এখন নারায়ণগঞ্জে। গতকালও সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে প্রচারে মাঠে ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক বদিউজ্জামান ভূইয়া ডাবলু, কেন্দ্রীয় নেতা এস এম কামাল হোসেন, ফরিদুন্নাহার লাইলী, অধ্যাপিকা অপু উকিলসহ প্রায় অর্ধশত নেতা।  অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে মির্জা ফখরুল ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ছাড়াও বিএনপি ও ২০ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন। এর মধ্যে ছিলেন মেজর  জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, মোস্তফা জামাল হায়দার, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গোলাম মোস্তফা, মিজানুর রহমান মিনু, আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার প্রমুখ। এ ছাড়া কোদাল প্রতীকে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল নগরীর পাইকপাড়া, নয়াপাড়া, জিমখানা, ডিআইটিসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন।

 

সর্বশেষ খবর