শিরোনাম
রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
জেলা পরিষদে আজ প্রত্যাহারের শেষ দিন

অনড় অবস্থানে বিদ্রোহীরা

অনেক জেলায় দলীয় প্রার্থীদের অবস্থা ভালো নয়

রফিকুল ইসলাম রনি

জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ না করা এবং অন্য দলের শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় নিজ দলের প্রার্থীকেই মোকাবিলা করতে হচ্ছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থীদের। কোথাও কোথাও ব্যক্তি ইমেজ, দলে ও অর্থবিত্তের দিক থেকে বিদ্রোহীরা প্রভাবশালী হওয়ায় জয় পেতে বেগ পোহাতে হবে দল সমর্থিত প্রার্থীদের। দলীয় প্রার্থীদের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন তারা। গতকাল পর্যন্ত ৩৬ জেলায় আওয়ামী লীগের ৭৪ বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে আছেন। আজ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচন। ইতিমধ্যে ২০ জেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন। জানা গেছে, প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠেয় জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৬১ জেলায় চেয়ারম্যান পদে দলীয় সমর্থন পেতে সাড়ে আটশ আবেদন করেন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এই পদে পুরনো ও নতুনদের সমন্বয়ে জেলা চেয়ারম্যান পদে দল সমর্থিত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। অধিকাংশ জেলাতেই দলের সমর্থন না পাওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী হন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এর মধ্যে অনেকেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত ৭৪ জন বিদ্রোহী মাঠে ছিলেন। জেলা পরিষদ নির্বাচন নির্দলীয় হওয়ায় এবং দল কর্তৃক সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বিদ্রোহীরা। তারা বলছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও ভোটাররা সঠিকভাবে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারলে তারাই জয়ী হবেন। এদিকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি এবং নিরাপত্তা দিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি বিশেষ প্রতিবেদন দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সংস্থা। গতকাল নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, ৩৬ জেলায় আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এসব জেলায় ভোটারদের নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে। এ ছাড়া নির্বাচনে ঝামেলা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। ভোটারদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাড়ানোর তাগিদও দিয়েছে সংস্থাটি। পাবনায় চেয়ারম্যান পদে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রবীণ নেতা রেজাউল রহিম লাল। তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ ডিলুর মেয়ে মেহজাবিন প্রিয়া। তিনি ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। এ পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। দলীয় সমর্থন না পেলেও তিনি শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের প্রশ্নই আসে না। আছি, থাকব, নির্বাচনে লড়াই করব।’ এক প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া আরও বলেন, ‘এটা নির্দলীয় নির্বাচন। কোনো মার্কা নেই। মন্ত্রীর কন্যা হিসেবে প্রভাব খাটানোর প্রশ্নই আসে না। অন্য দলের প্রার্থী না থাকায় যিনিই নির্বাচিত হবেন, তিনিই আওয়ামী লীগের প্রার্থী।’ জামালপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এইচ আর জাহিদ আনোয়ার। তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দাবিতে জেলায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা সংবাদ সম্মেলন করে তাকে রাজাকারের সন্তান বলে আখ্যায়িত করেছেন। সেখানে প্রার্থিতা প্রত্যাহারেরও আবেদন করেছেন তারা। একই সঙ্গে জেলার ভোটার অর্থাৎ নির্বাচিত ৯০০ প্রতিনিধি গণস্বাক্ষর দিয়েছেন। এ জেলায় জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহম্মেদ চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার জন্য দলের সভানেত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতারা। মানুষের দোয়া নিয়ে ফারুক আহম্মেদ নির্বাচনে লড়ছেন। এ জেলার প্রায় সব ভোটার তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। দল সমর্থিত প্রার্থীর বিজয় বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম জেলায় চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাফর আলী পেয়েছেন দলীয় সমর্থন। তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শিল্পপতি পনির উদ্দিন আহমেদ। দুজনই সমানতালে নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এখানে কেউ কারও চেয়ে কম শক্তিশালী নন। এ জেলার বেশকিছু ভোটার বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির থাকায় সুবিধা করতে পারবেন বলে পনিরের সমর্থকরা জানিয়েছেন। পটুয়াখালীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন খান। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাজী আলমগীর ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নূর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। এ প্রসঙ্গে কাজী আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি মাঠে আছি, শেষ পর্যন্ত থাকবই। কেন্দ্র থেকে কোনো চাপ না থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে আমার জয় হবেই।’ পিরোজপুরে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহ আলম। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ ও যুবলীগ নেতা এবং সদর আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম আউয়ালের ভাই মশিউর রহমান মহারাজ। মশিউর রহমান একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর এপিএস ছিলেন। বরিশাল জেলা পরিষদ নির্বাচনে দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী গতকাল তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. হোসেন চৌধুরী ও বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে সদ্য পদত্যাগকারী গোলাম ফারুক। এখানে দলীয় প্রার্থী মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মইদুল ইসলাম। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি খান আলতাফ হোসেন ভুলু। এ ছাড়া বগুড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, নীলফামারী, সাতক্ষীরা, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, নরসিংদী, শরীয়তপুর, খুলনা, মাগুরা, ময়মনসিংহ, পটুয়াখালী, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, লক্ষ্মীপুর, মেহেরপুর, নড়াইল, নোয়াখালী, রাজবাড়ী, সুনামগঞ্জ, সিলেট, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, মানিকগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর